Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেট তো নয়, ‘অসুরের হাঁ

আশ্বিন মাসে বাঙালির খিদে বেড়ে যায়। এই খিদে ব্যাপারটা অবশ্য নানা লেভেলে খেলা করে। ছেলে থেকে বুড়োর ঠাকুরদেখার খিদে, মেয়েদের নতুন সালোয়ার-কুর্তির খিদে, পুজোকর্তাদের প্রাইজ পাওয়ার খিদে, পাড়ার দাদাদের চাঁদার খিদে...

বিরিয়ানি।

বিরিয়ানি।

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

আশ্বিন মাসে বাঙালির খিদে বেড়ে যায়। এই খিদে ব্যাপারটা অবশ্য নানা লেভেলে খেলা করে। ছেলে থেকে বুড়োর ঠাকুরদেখার খিদে, মেয়েদের নতুন সালোয়ার-কুর্তির খিদে, পুজোকর্তাদের প্রাইজ পাওয়ার খিদে, পাড়ার দাদাদের চাঁদার খিদে...কিন্তু সবার চাইতে ভাল রাতবিরেতে ফাঁকা পেটে গাঁক গাঁক করে রোল-চাওমিনের সর্বজনীন খিদে। কে বলবে, ভর সন্ধেবেলা আরও একটু টক জলের জন্য এই পেট-ই ফুচকাওলার সঙ্গে তুলকালাম করেছে। আর কে না জানে ফাউপ্রত্যাশী বাঙালির এক্সপেক্টেশন বিশ্বকর্মার পেটকাটি-চাঁদিয়ালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়তে উড়তেই বঙ্গজীবনে পুজো এসে যায়।

এসে যায় আমাদের নিজের হাতে তৈরি পেটপুজো শব্দটিও। অষ্টমীর ভোগ বলুন, বা দশমীর নাড়ু, বাঙালির পুজো ক্যুইজিন ট্যুরের পুরোটাই অনুষ্ঠিত হয় বাড়ির বাইরে। নমো নমো করে ব্রেকফাস্ট সেরে, তাও মহাষ্টমীতে অঞ্জলি-স্পেশাল স্কিপ, ফুড ট্রায়ালে বেরিয়ে বাবু-বিবির জিভের সঙ্গে লড়ে নিতে মা কালীও জিভ কাটবেন। একমাত্র তুলনা চলে জাম্বো অসুরের বিশাল হাঁ-এর। যেন ঢুকে পড়বে আস্ত এক রেস্তোরাঁ। ট্যাংরা থেকে আমিনিয়া—শারদ উৎসবের সর্বস্বাদসমন্বয়, জাস্ট যুগ যুগ জিও।

এক বন্ধুকে জানতাম, রাতজেগে খাবে বলে পুজোর ক’দিন দিনের বেলা উপোস করত। জিগ্যেস করলে জবাব মিলত : অসুরের এগেনস্টে হাঙ্গার স্ট্রাইক করছি। রাতদুপুরে বাবুবাগান কী বাগবাজারে তাকেই দেখা যেত ভরপুর কাবাব-পরোটা সাবাড় করতে। এমন দ্বিচারিতা শুধু পেটপুজোতেই সম্ভব।

আর সম্ভব এক অতিদীর্ঘ ধৈর্যের পরীক্ষায় লম্বা লাইনে দাঁড়ানো রসনা-রসিক বাঙালির অন্তহীন অপেক্ষা। সস্তা থেকে দামি, সব ফুড জয়েন্টেই একই সিন, পুজোর রাতদিন। আর পুজো প্যান্ডেলের সঙ্গে পেটপুজোর ডেস্টিনেশন মিলে গেলে তো কথাই নেই। নবমীর দিন লাইন দিলে বিসর্জনের পরে রিজার্ভেশন পাওয়া যাবে। সাধে কী বম্বেতেও বসে ফোন পাই কলকাতার রেস্তোরাঁয় বুকিং রিকোয়েস্টের।

তবে যাই বলুন, এই পাগলামির কোনও ওষুধ নেই। পুজো-পাগল বং ও বাঙালির আহার-বিহার ঠেকায় কার সাধ্য! পাক্কা সাহেব মতে, সন্ধে সাতটায় ডিনার সেরে-নেওয়া মিস্টার সানিয়েলও তো এই উৎসবের হুজুগে রাত দুটোর ঠান্ডা বিরিয়ানিকেই অমৃত বলে মনে করেন।

অতএব পুজোর ক’টা দিন বাড়িতে নো-মিল করে বেরিয়ে পড়ুন সুখাদ্য সন্ধানে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভুলে যান প্রদক্ষিণ, কলকাতার অলি-গলি-পাকস্থলী ভেদ করে খুঁজে বেড়ান পেট যা চায়। কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়! বছরের বাকি দিনগুলোয় তো দেয়ালে পিঠ ঠেকেই আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bengali anjan chattopadhyay foods
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE