উত্তমকুমার
সাহিত্যের পাতা থেকে বেরিয়ে বড় পরদায়ও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়েছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী। যার মাদকতায় আজও আচ্ছন্ন আট থেকে নব্বই। ব্যোমকেশ বলতেই মনে পড়ে এক বাঙালিকে, যে নিজেকে সত্যান্বেষী বলতেই স্বচ্ছন্দ। একটা সময় টেলিভিশনে রজিত কপূরকে ব্যোমকেশের ভূমিকায় দেখে উচ্ছ্বসিত ছিল আসমুদ্রহিমাচল। তার আগে উত্তমকুমার ব্যোমকেশের জুতোয় পা গলিয়েছিলেন। তবে সিলভার স্ক্রিনে ব্যোমকেশের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে সম্প্রতি। আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত তো রয়েছেনই, বলিষ্ঠ অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ও এই জনপ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। হাল আমলে ওয়েব সিরিজেও ব্যোমকেশ রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। এমনকী কালজয়ী চরিত্রটি ধরা দিয়েছে হিন্দি ছবিতেও। সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে দর্শকদের মনে ধরুক বা না-ই ধরুক, ব্যোমকেশ হুজুগে সাড়া দিয়েছে বলিউডও।
‘চিড়িয়াখানা’য় উত্তমকুমার
ব্যোমকেশের ভূমিকায় বেশ সফল ছিলেন উত্তমকুমার। ‘চিড়িয়াখানা’য় তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় তো রয়েছেই, পাশাপাশি উত্তম যেন মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রতিভূ। ব্যোমকেশের বাঙালিয়ানা বেশ ভাল ভাবেই ধরা প়ড়েছিল উত্তমের অভিনয়ে। সেই সুবাদে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। তবে কেরিয়ারে মাত্র একবারই ব্যোমকেশ হিসেবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। উত্তম-ভক্তদের কাছে হয়তো সেটাই আক্ষেপ।
রজিত
এক চরিত্রে দুই মুখ
একই চরিত্রে দু’জন একই সময়ে অভিনয় করে সাফল্য পেয়েছেন, এমনটা খুব একটা দেখা যায়নি। কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছেন আবির চট্টোপাধ্যায় ও যিশু সেনগুপ্ত। যদিও তাঁরা মানতে চান না ব্যোমকেশে নিজেদের অভিনয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে দু’জনের ‘প্রতিযোগিতা’য় লাভবান হয়েছেন দর্শকরাই।
আবির চট্টোপাধ্যায়কে ব্যোমকেশ রূপে পরদায় এনেছিলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। তিনি জানালেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম এমন একটা মুখ, যাঁকে মানুষ ব্যোমকেশ হিসেবেই চিনবে।’’ অঞ্জনের পরিচালনায় ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘আবার ব্যোমকেশ’ ও ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’য় অভিনয় করেছেন আবির। আবার অরিন্দম শীলের ‘হর হর ব্যোমকেশ’, ‘ব্যোমকেশ পর্ব’তেও কাজ করেছেন তিনি। চোখা সংলাপ, এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে প্রত্যেক বারই প্রশংসা কুড়িয়েছেন আবির। তাঁর মধ্য দিয়ে অঞ্জন আধুনিক বুদ্ধিদীপ্ত বাঙালিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আবার অরিন্দম শীলের মতে, ‘‘ব্যোমকেশ লার্জার দ্যান লাইফ। তাই আমি আবিরের মাধ্যমে অ্যাকশন, বুদ্ধির ব্যবহারের পাশাপাশি প্রেমিক সত্তাকেও তুলে ধরতে চেয়েছি।’’
আবির
অন্য দিকে আবির সরে যাওয়ার পর অঞ্জন চেয়েছিলেন একজন পরিচিত মুখ, যার আলাদা কোনও ইমেজ নেই। তা থেকেই যিশুকে নিয়েছিলেন তিনি। অঞ্জন বললেন, ‘‘যিশুর ক্ষেত্রে আনপ্রেডিক্টেবল হিরো ইমেজটা তৈরি করেছিলাম। ওর এনার্জিটাই মুখ্য বিষয় হিসেবে দেখাতে চেয়েছি।’’ ব্যোমকেশ হিসেবে যিশুর ইউএসপি হল স্পষ্ট উচ্চারণ, সংযত অভিনয়, অনবদ্য স্ক্রিন প্রেজেন্স।
সুশান্ত
টেলিভিশনে ব্যোমকেশ
টিভির পরদায় ব্যোমকেশের প্রসঙ্গ উঠলে সকলের আগে মনে পড়ে রজিত কপূরকে। বাসু চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘ব্যোমকেশ বক্সী’তে অভিনয় তো বটেই, বুদ্ধিদীপ্ত বাঙালিকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। ব্যোমকেশের তীক্ষ্ণতা প্রতিফলিত হয়েছিল রজিতের নিক্তিমাপা অভিনয়ে। ‘ব্যোমকেশ’ ধারাবাহিকে গৌরব চক্রবর্তী অভিনয় করেছেন নামভূমিকায়। তবে আশাতীত সাফল্য না পেলেও, মন্দ লাগেনি গৌরবকে।
ধৃতিমান
বাঁধা গতের বাইরে
প্রথাগত ভিড়ের বাইরে চমক নিঃসন্দেহে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। ‘শজারুর কাঁটা’য় বয়স্ক ব্যোমকেশকে দেখে অনেকেই নাক কুঁচকেছিলেন। সেই বিষয়ে ছবির পরিচালক শৈবাল মিত্রর বক্তব্য, ‘‘ব্যোমকেশের বয়স হয়েছে ‘শজারুর কাঁটা’য়। তাই ওই বয়সেরই অভিনেতা খুঁজেছি। চরিত্রটির যা ধরন, সেই রকম মুখের আদল খুঁজে পেয়েছিলাম ধৃতিমানদার মধ্যে।’’ অভিনয় নিয়ে না হলেও এ ক্ষেত্রে ব্যোমকেশের বাঙালিয়ানা পড়েছিল প্রশ্নের মুখে।
যিশু
ব্যর্থতার চোরাস্রোতে
ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় বড় চমক সুজয় ঘোষের অন্তর্ভুক্তি। ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় ‘সত্যান্বেষী’ ছবিতে দর্শকদের যারপরনাই হতাশ করেছিলেন সুজয়। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ আবার সুশান্ত সিংহ রাজপুত। কিন্তু ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’তে সুশান্তের অভিনয়ে অদৃশ্য ছিল বাঙালিয়ানা, গাম্ভীর্য। দর্শকমনে জায়গা পায়নি। মঞ্জু দে-র ‘শজারুর কাঁটা’য় সতীন্দ্র ভট্টাচার্য হোক বা ‘মগ্ন মৈনাক’-এ শুভ্রজিৎ দত্ত, ব্যোমকেশ হিসেবে অভিনয় করলেও সে ভাবে সাফল্য পাননি।
অনির্বাণ
মুঠোফোনে
ওয়েব সিরিজের ব্যোমকেশ ওরফে অনির্বাণ ভট্টাচার্য আবার সত্যিই যথাযথ।
ব্যোমকেশের সৃষ্টি পরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল পেরিয়েছে। কিন্তু আজও প্রাসঙ্গিক চরিত্রটি। নানা রূপ ও মুখের সমাবেশে উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা বেড়েছে ব্যোমকেশের। তাই বলা যায়, ব্যোমকেশের তুলনা ব্যোমকেশ নিজেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy