দুটো আলাদা দেশ। আলাদা শহর। কয়েক জন ভিন্ন মানুষ। কিন্তু ভালবাসতে পারায়, নিঃসঙ্গতার যাপনে, দৈনন্দিন বোঝাপড়ায় তারা মিলেমিশে এক। রঞ্জন ঘোষের ‘আহা রে’র একটি দৃশ্যে সংলাপ রয়েছে এ রকম যে, সৃষ্টিকর্তা যখন মানুষকে আলাদা করেনি, আমরা কেন করি? তার উত্তর হিসেবে ভাবতে ভাল লাগে যে, আবার মিলেমিশে যাওয়ার তাগিদেই হয়তো!
‘আহা রে’ ছবিতে এ রকমই একটা মায়া জড়ানো তাগিদ রয়েছে। ফরহাজ় (আরিফিন শুভ) ঢাকার শেফ। তার প্রেমিকা শাহিদা (অমৃতা চট্টোপাধ্যায়) প্যারিসে ইনটার্নশিপ করতে যাবে বলে বিচ্ছেদ হয় তাদের। কলকাতায় চলে আসে ফরহাজ়। এখানে আলাপ হয় বসুন্ধরার (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) সঙ্গে। ফরহাজ় নামকরা পাঁচতারার শেফ আর বসুন্ধরা ঘরোয়া রান্নাতেই সাজায় তার ক্যাটারিংয়ের বাক্স। দু’জনের জগৎ আলাদা, বিশ্বাস আলাদা, রুচি আলাদা। কিন্তু কাটা পেঁয়াজের ঝাঁঝ, নুন-মশলার স্বাদু যুগলবন্দি বা মুঠোভরা গোবিন্দভোগের মিঠে গন্ধে তারা একই ভাবে সাড়া দেয়। আর সেই কারণেই ফরহাজ় প্রেমে পড়ে যায় বসুন্ধরার। তবে সবটাই খুব সহজে হয় না। ফরহাজ়ের যেমন একটা সত্তা রয়েছে বাংলাদেশের ঢাকায়, বসুন্ধরার গল্পটা ঢাকা রয়েছে তার পরিচয়ের গোপনে। সেই গোপন জগতে পৌঁছে যাওয়ার পথ ফরহাজ় শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাবে কি না, বাকি গল্পটা সে দিকেই এগিয়েছে।
আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা রয়েছে। কলকাতায় এসে ফরহাজ় ডাকনামে (রাজ) বাড়ি ভাড়া করে। সে কথা শুনে তার বন্ধু বলে, নামে কী ধর্ম-গন্ধ আছে, তা নিয়ে বাংলায় কেউ ভাবে না। কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি না হলেও, বেশ কিছু দূর পর্যন্ত বড্ড সত্যি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে ছবির প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক ভাবতে চাইলে! চিকেন ডাকবাংলোর নামখানা যে ব্রিটিশ ডাকবাংলোগুলোর বিশেষ মেনু থেকে এসেছে কিংবা চিংড়ির মালাইকারির যে আদতে মালয়েশিয়ার বলেই অমন নাম— এই তথ্যগুলোও মজাদার।
আহা রে পরিচালনা: রঞ্জন ঘোষ অভিনয়: ঋতুপর্ণা, আরিফিন, পরান, দীপঙ্কর, অমৃতা ৫.৫/১০
কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় নুনটা একটু বেশিই পড়ে গিয়েছে। ফরহাজ় তার দ্বিতীয় বাবাকে কেন মেনে নিতে পারে না, ব্যাখ্যা নেই ছবিতে। শাহিদার ফিরে আসার কারণটা ঠুনকো মনে হয়। বসুন্ধরার ফরহাজ়কে ভাললাগাটা ভালবাসায় পরিণত হতে যে কারণে দেরি হয়— সেটা একটু নাটুকেই। কিছু জায়গায় ন্যারেটিভেও ছন্দপতন, যা রঞ্জনের ছবিতে বিরল। তবে ঋতুপর্ণার অভিনয় দেখার মতো। তুলনায় আরিফিন দুর্বল। পরান অনবদ্য। ছবির বেশির ভাগ ভাল সংলাপ তাঁরই। ফ্রেশ লেগেছে অমৃতাকেও।
এখন প্রশ্ন হল, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে মনটা ‘আহা রে’ বলে উঠবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy