Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাঞ্চ হাউসের সামনে খাটিয়া পেতে ঘুমোত সাহেবরা

কলকাতায় মদের নেশা কি আজকের? লালবাজার, বউবাজার, বেন্টিংক স্ট্রিট জুড়ে একদা মদের পসরা সাজিয়ে বসত ইংরেজ, ফরাসি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ শুঁড়িরা। ক্রমে মদের ব্যবসায় নামল বাঙালিও। ওয়াইন, ব্র্যান্ডি মন জয় করল বাবুদের। কলকাতায় মদের নেশা কি আজকের? লালবাজার, বউবাজার, বেন্টিংক স্ট্রিট জুড়ে একদা মদের পসরা সাজিয়ে বসত ইংরেজ, ফরাসি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ শুঁড়িরা। ক্রমে মদের ব্যবসায় নামল বাঙালিও। ওয়াইন, ব্র্যান্ডি মন জয় করল বাবুদের।

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

জোব চার্নক বসেছেন কাছারিতে। ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাচ্ছেন। সাহেবের সামনের টেবিলে পানীয়— পুরনো আরক আর কিছু তরল। নিপুণ হাতের কারসাজিতে তৈরি হচ্ছে ‘আরক-পাঞ্চ’। এমন সময় চার্নকের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিল টোকা দিলেন। ‘‘কী দরকার?’’ ‘‘স্যর, লাইসেন্স...’’ চার্নকের তখন দিল খুশ। মিলল ‘পাঞ্চ হাউস’ খোলার অনুমতি।

ক্যাপ্টেন হিল বুদ্ধিমান লোক। মাতাল সামলাতে ‘বাউন্সার’ হিসেবে নিয়োগ করলেন এক সার্জেন্টকে। সেই সার্জেন্টও চালিয়াত। সেনাবাহিনীর ছোকরাদের পাকড়াও করে পাঞ্চ খাওয়ানো, বেশি ট্যাঁ-ফোঁ করলে উত্তম-মধ্যম দেওয়া— সবেতেই তিনি সাবলীল। সঙ্গে ‘ফলস রিটার্ন’ দিয়ে উপরি আয় তো রয়েইছে। কলকাতার সাহেবি আদিপর্বের এই বাউন্সার গোছের মানুষগুলি, ‘রাম-জনি’।

কলকাতায় প্রথম পাঞ্চ-হাউসের ‘সরকারি’ লাইসেন্স পেলেন ডেনিঙ্গো অ্যাশ নামের এক মহিলা। ডেনিঙ্গো জানেন ব্যবসার অলিগলি। তাঁর চোখের চপল চাহনি হিল্লোল তুলল সাহেবদের বুকে। ভিড় জমল। সঙ্গে গোলমাল।

ঘটনাস্থল, কলকাতারই একটি পাঞ্চ হাউস। এক সাহেব আরকের নেশায় তরোয়াল খাপ-ছাড়া করে ঘোরাতে শুরু করলেন। ব্যস, ফরমান জারি, তরোয়াল নিয়ে পাঞ্চ হাউসে যাওয়া— নৈব নৈব চ।

এমন হুজ্জুতি করে মাতাল সাহেবদের বেশির ভাগেরই আর পাঞ্চ হাউস থেকে পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার ক্ষমতা থাকে না। অগত্যা পাঞ্চ হাউসের সামনে খাটিয়া পাতা হল। আরকের হ্যাং কাটতে কাটতে সেখানেই দুপুর গড়ায় সাহেবদের।

এই আরক আসলে তাড়ি, হাঁড়িয়া প্রভৃতির চোলাই। চোলাইয়ের এমন রমরমা বাজারের মওকা তুলতে কলকাতায় গজিয়ে উঠল একের পরে এক পাঞ্চ হাউস। বেশ কয়েক দশক পাঞ্চ হাউসের রমরমা চলার পরে ধীরে ধীরে তার জায়গায় এল ট্যাভার্ন বা সরাইখানা। এ বার পানাতুর সাহেবের দল চাক বাঁধল লালবাজার, বউবাজার, বেন্টিংক স্ট্রিট, খিদিরপুর, ডেকার্স লেন, রাধাবাজারে।

লালবাজারের কাছেই বউবাজার স্ট্রিট। সাহেবি লব্‌জে তা ‘ফ্ল্যাগ স্ট্রিট’। এমন নাম কেন? বেন্টিংক স্ট্রিটের খানিকটা আর ফ্ল্যাগ স্ট্রিটের মাঝামাঝি অজস্র শুঁড়ির দোকান। সেখানেই মদিরার পসরা সাজিয়ে বসে ইংরেজ, ফরাসি, মার্কিন, ইতািলয়ান, স্প্যানিশ শুঁড়িরা। প্রতিটি দোকানের মাথায় সাইনবোর্ডে আঁকা অথবা ঝোলানো নিজের নিজের দেশের ‘ফ্ল্যাগ’। রাস্তার নামেও তাই ‘ফ্ল্যাগ’ জুড়ল।

ধীরে ধীরে শুরু হল ক্ল্যারেট, ম্যাডিরা প্রভৃতি ওয়াইনের জয়জয়কার। অবশ্য ক্ল্যারেট কলকাতায় ঢুকল বেশ ঘুরপথে। ফ্রান্স থেকে ডেনমার্ক হয়ে ভায়া শ্রীরামপুর— ‘লাল শরাব’-এর পথ এটাই।

এই লালবাজার স্ট্রিটেই উইলসন অ্যাপলো নামে এক সাহেব তৈরি করেন ‘অ্যাপলোজ ট্যাভার্ন’। কাউন্সিল সদস্যদের ঠেক এই সরাইখানা। সেই সরাইখানার টেবিলের তলায় হরদম মেলে কেচ্ছার গল্প। তেমনই একটা। সাহেবি মহল হঠাৎ সরগরম। বিষয়, জর্জ ফ্রান্সিস গ্র্যান্ডের স্ত্রী ক্যাথরিন গ্র্যান্ডের সঙ্গে স্যর ফিলিপ ফ্রান্সিসের পরকীয়া। আচমকা খবর, গ্র্যান্ডের বাড়িতে নাকি ফিলিপ সাহেবের দেখা মিলেছে। গ্র্যান্ড সাহেব তখন কোথায়? বিশেষ সূত্রে জানা গেল, তিনি নাকি সেই সময় গড়াগড়ি খাচ্ছেন ফ্রান্সিস লে গ্যালের সরাইখানায়।

চিৎপুর রোডের পুব দিকে ‘হার্মোনিক ট্যাভার্ন।’ এখানে ঢুকে দেখা গেল, কমবয়সি সাহেব-মেমরা মদের নেশায় রুটির টুকরো পরস্পরের দিকে ছুড়ে মারছেন। এর নাম ‘পেলেটিং’। এই ট্যাভার্নেই ঠেক ছিল কলকাতার নামকরা মদ্যপায়ী অ্যাটর্নি উইলিয়াম হিকির। নিজের ঠেকেই এক দিন পার্টি দিয়েছেন হিকি সাহেব। ২৯ জন আমন্ত্রিত। শোনা যাচ্ছে কনসার্টের সুর। চলছে বল ডান্স। এবং সঙ্গে মদ্যপান, ভোর রাত পর্যন্ত।

এ সব চলতে চলতেই এক দিন হঠাৎ মাতাল কলকাতার আকাশে কালো মেঘ। ক্ল্যারেটের দাম আকাশ ছুঁল। বিলিতি মদের আমদানিতে ঘাটতি। কিন্তু তা বলে কল্লোলিনীর ঠোঁট কি মদ-স্পর্শ পাবে না! তা হতে দিলেন না হিকির এক বন্ধু। ডেনমার্ক থেকে এক জাহাজ ক্ল্যারেট আনালেন। হিকি নিজেই কিনলেন দু’পেটি! ইংলিশ ক্ল্যারেটের কয়েক বোতল তো আগেভাগেই মজুত। ভাবলেন, বন্ধুদের সঙ্গে সেই ক্ল্যারেটের স্বাদ একটু ভাগ করে নেওয়া যাক!

খানিক বাদেই বন্ধুদের হুল্লোড় শুরু। বনেদি মাতাল হিকির সন্দেহ হল। ঠিকই ধরেছেন, খানসামা ভুল করে ড্যানিশ ক্ল্যারেট দিয়েছেন। কিন্তু কী বা এসে যায়— বন্ধুরা এতেই বেজায় খুশি। সেই হিকি সাহেব এক বার কলেরায় পড়লেন। ডাক্তারের পরামর্শ, ‘ক্ল্যারেট খান’! হিকি সাহেব নাকি ওই ক্ল্যারেট পান করে সেরে উঠেছিলেন!

ট্যাভার্নের রমরমা কেমন, তা বুঝতে জে ট্রেশাম সাহেবের শরণাপন্ন হওয়া গেল। এই ভদ্রলোক ১৭৫৮ সালে মেরেডিথ লেনের ঘুপচি গলির মধ্যে মাত্র ফুটখানেক চওড়া ঘরে ‘ট্রেশামস ট্যাভার্ন’ খুললেন। সেখানে মদিরার গন্ধকে ছাপিয়ে যায় নর্দমার দুর্গন্ধ। কিন্তু সাহেব মাতালদের কল্যাণে বছরখানেকের মধ্যেই লাল হয়ে ট্রেশামের সরাইখানার পুনর্বাসন হল কাথাইটোলায়, অর্থাৎ বেন্টিংক স্ট্রিটে। ট্রেশামের ভাগ্য ফেরারই কথা। আর নববর্ষের দিন হলে কথাই নেই। আনন্দে সাহেবরা ২৪ বার বা তারও বেশি স্বাস্থ্য পান করতেন! তাতে বল নাচ, তাস, বিলিয়ার্ডসের সঙ্গত।

শুধু সাহেব না, বাঙালিও এই মদ-ব্যবসায় নামল। আদি পর্বে, গোবিন্দ শুঁড়ির পাঞ্চ-হাউসের কথা জানা যায়। কয়েক দশক বাদে ধর্মতলা, চিনাবাজার প্রভৃতি এলাকায় বাঙালি ব্যবসা ফেঁদে বসল। এঁদের মধ্যে নামকরা শ্রীকৃষ্ণ দত্তের পাঞ্চ হাউস। এখানকার সেরা আকর্ষণ— উৎকৃষ্ট ‘পচাই’। সেখানে ঢু মেরে দেখা গেল, ফরাসি, পর্তুগিজ, ইংরেজ সাহেবদের পাশাপাশি ওডিয়া, বিহারি, বাঙালি— সব লোকজনের আনাগোনা। তবে এখানে অর্ডার দেওয়া-নেওয়া, সবটাই সাংকেতিক ভাষায়। কারণ, ভাষাগত সমস্যা। তবে সে সমস্যা খুব একটা অসুবিধা তৈরি করল না। একটা ছোট্ট হিসেব, ১৭৬৬ সালের। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জানাল, কর্মচারীদের ১০৮ পাইপ ম্যাডিরা বিলি করা হয়েছে। এক পাইপ মানে ১০৫ গ্যালন!

মদ্যাভ্যাস তো হল, কিন্তু অন্যতম অনুষঙ্গ, বরফ আর সোডা-ওয়াটারের কী হবে! সাহেবি বরফের জন্য অপেক্ষা উনিশ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত। তার আগেই অবশ্য এ দেশের গরম আবহাওয়াতে ওয়াইন ঠান্ডা করার জন্য তৈরি হল ‘আবদার’ নামে একটি বিশেষ পেশার। এঁদের কাজ, বিশেষ উপায়ে ওয়াইন ঠান্ডা করে সাহেবি জিহ্বার উপযুক্ত করে তোলা।

তবে ছবিটা দ্রুত বদলাল আমেরিকার বিখ্যাত ব্যবসায়ী ফ্রেডেরিক টিউডরের সৌজন্যে। তিনি ঠিক করলেন, ভারতবর্ষের বাজার ধরতে হবে। নিলেন এক দুঃসাহসী পরিকল্পনা। পরিকল্পনামাফিক ১৮৩৩ সালে টিউডর কোম্পানির পাঠানো বরফ বোঝাই একটি জাহাজ চার মাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছল। তা নিয়ে বিপুল উন্মাদনা তৈরি হল সাহেব মহলে। এই সাফল্যে টিউডর কোম্পানির এজেন্ট মিস্টার রজার্সকে সোনার মেডেল দিয়ে অভিনন্দন জানালেন স্বয়ং লর্ড বেন্টিংক। উনিশ শতকের সাতের দশকে অবশ্য কলকাতাতেই কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের ধারে তৈরি হল বরফ কল। এর দিন কয়েক আগেই চলে এসেছে সোডা-ওয়াটার। আর এই দুইয়ের অনুষঙ্গে জায়গা হারাল ওয়াইন। এল বিয়ার, এবং বেশ কিছু দিন পরে হুইস্কি।

রবীন্দ্রনাথের ‘প্রজাপতির নির্বন্ধ’-তে ‘পুরা নব্য’ অক্ষয়কুমারও যাত্রার সুরে ‘একটি ছটাক সোডার জলে’ ‘তিন পোয়া হুইস্কি’র বন্দনা করতে শুরু করলেন। আলালও নীলকর সাহেবদের দাঙ্গা করে ‘বিলাতি পানি ফটাস করিয়া’ ব্র্যান্ডি খাওয়ার ছবি আঁকলেন। যদিও হুইস্কি সম্পর্কে সাহেবি আমলের একটা বড় অংশে নাক-সিঁটকানো ভাব। কারণ, ও যে ‘ঘোড়ার ওষুধ’!

শুধু মদ্যাভ্যাস নয়, বদলাতে থাকল মদ খাওয়ার স্থানগুলিও। উনিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে পুরনো ট্যাভার্নকে পাশে রেখে ওয়াটারলু স্ট্রিট, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রিট বা রানি মুদি গলি, বেন্টিংক স্ট্রিট, ধর্মতলা প্রভৃতি জায়গায় হোটেলের রমরমা শুরু হল। এই যুগের কলকাতার হোটেলগুলির মধ্যে খুবই নামকরা স্পেন্সেস। সেই হোটেলে প্রায়ই আসতেন এক বিখ্যাত বাঙালি। বিয়ারে বরফ মিশিয়ে পান করতেন তিনি— মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

হোটেলের রমরমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুয়েজ খাল পেরিয়ে আবির্ভাব হল এক দল তরুণীর— ‘বার-মেড’। অতীতের ড্যানিঙ্গোর স্মৃতিতে মোচড় দিয়ে ছোকরা সাহেবদের হৃদয়ে ফের তুফান! এক জন পরমা সুন্দরী বার-মেড একটি সন্ধ্যায় সাতটি বিয়ের প্রস্তাব পেলেন!

এর উলটো ছবিও আছে। এক ছোকরা সাহেব অনেক ক্ষণ ধরে তরুণী বার-মেডকে উত্যক্ত করছেন। প্রচণ্ড বিরক্ত সেই তরুণী এক হাত কাউন্টারের টেবিলে রেখে সটান দিলেন এক ভল্ট। আর এক হাতের সুদক্ষ চালনায় সাহেবের লাল গালে লেপটে দিলেন পাঁচ আঙুলের ছাপ।
বার-মেডদের ‘জনপ্রিয়তা’ ক্রমে এমন জায়গায় পৌঁছল যে বিলেত থেকে নতুন কেউ এলে সে খবর চাপা দিতে কালঘাম ছুটত হোটেল-কর্মীদের।

এই শতাব্দীতেই ডালহৌসি চত্বর, ট্যাঙ্ক স্কোয়ারে গজিয়ে উঠল ‘অন শপ’। বাঙালির সৌভাগ্য! সময়ের স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে ‘ছোটা ব্রিস্টল’ (‘শ ব্রাদার্স’) নামের পানশালাটি। ১৮৭২ থেকে এর পথ-চলা শুরু।

সাহেবি মদ্যপানের সঙ্গে প্রায় দেড়শো বছর ধরে একটা না ছুঁই-ছুঁই ভাব ছিল বাঙালি ভদ্রলোকের। কিন্তু উনিশ শতকের সিংহদুয়ার সবাইকে কাছে টেনে নিল। তৈরি হল দিনভর ‘হ্যাং’-এ থাকা ‘বাবু’ সম্প্রদায়ের। দু’পাত্তর পেটে পড়লেই এই বাবুদের মোক্ষ, ‘জীবনের কলোরব’।

দৃশ্য এক: ষষ্ঠীর রাত। প্রতিমার সঙ্গে মাটির সিংহ দেখে ভারী রাগ হল বাবুর। বাবু ভাবলেন, তিনিই আসল সিংহ। ব্যস। মাটির সিংহের জায়গায় বাবু নিজেই সিংহ হয়ে বসলেন।

দৃশ্য দুই: এক বার দশমীর দিন। গঙ্গায় ঠাকুর বিসর্জন হচ্ছে। এক ‘বুনিয়াদী মাতাল’ নৌকায় দাঁড়িয়েই হঠাৎ কান্না জুড়লেন। বললেন, ‘‘আরে! মা চলিলেন— মার সঙ্গে কেহ যাবে না, আরে বেটা ঢাকি, তুই যা।’’ — বলেই ঢাকিকে এক ধাক্কা মেরে জলে ফেলে দিলেন।

দৃশ্য তিন: এক মদ্যপ বাবু খেতে বসেছেন। পাশে জল নেই। জলের ঘটির জায়গায় রয়েছে একটি বিড়াল। তাকেই জল ভেবে খেতে গেলেন। বিড়াল বাবাজিও মিউমিউ করে দিলেন আঁচড়।

এই ‘বাবু’দের এক জায়গাতেই মিল— তাঁরা মাতাল! সেই পরিচয়ে স্বর্গের হাতছানিও এঁরা উপেক্ষা করতে পারেন। কেমন তা? এক গণিকা বাবুকে বললেন, যাঁরা মদ স্পর্শ করেছেন, তাঁরা সকলেই ‘নরকে গ্যাচেন।’ শুনে বাবুর চটজলদি জবাব, ‘‘আমি একাকি স্বর্গে গিয়ে কি করবো?’’

বাবুরা ছাড়াও আরও এক দল বাঙালি ছিলেন এই শতকে। শাস্ত্র ও লোকাচার নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছে। মধ্যমণি বাঙালির এক শ্রেষ্ঠ পুরুষ। সামান্য মদ্যপান তাঁরও অভ্যাস। এক শিষ্য উৎসাহ ভরে বাড়তি এক গেলাস এগিয়ে দিয়েছেন। সেই মানুষটি রাগ করে ছ’মাস শিষ্যের মুখই দেখলেন না! তাঁর নাম রাজা রামমোহন রায়। আর এক জন হলেন বিখ্যাত ইয়ং বেঙ্গলি রাজনারায়ণ বসু। পটলডাঙায় থাকেন তখন। গোলদিঘিতে প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে বসে তাঁকে ‘জলস্পর্শশূন্য ব্র্যান্ডি’ পান করতে দেখা যায়। পরে অবশ্য মদ্যপানে তাঁর বিতৃষ্ণা জন্মাল।

আবার এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা মদ্যপানবিরোধী আন্দোলন করেন, ব্যঙ্গ করেন মদ্যপায়ীদের। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তাঁরাও ঘোরতর মদ্যপ। তেমনই এক জন, ঈশ্বর গুপ্ত। মদ্যপায়ী ‘ইয়ং বেঙ্গলি’দের লক্ষ করে বিস্তর ছড়া কাটেন। কিন্তু নিজে সুরা খেয়ে ‘ধরা দেখি সরা’ করে বেড়ান।

সব বাবুদের ফের ধরার মাটিতে টেনে নামানোর দাওয়াই, তা-ও আছে এই কলকাতায়। তাই তেঁতুলগোলা, কাঁঠাল পাতার রস আর গোলাপজল রাখার নিদান— সবই আছে। এ সব দেখেই কি না কে জানে, লর্ড ক্লাইভ বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীর সব থেকে পাপপূর্ণ জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম এই কল্‌কেতা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcohol Wine Kolkata Foreigners Flag Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE