Advertisement
E-Paper

চিড়িয়াখানা নয়, বন্যপ্রাণী দেখাতে গরমের ছুটিতে সন্তানকে নিয়ে চলুন কোনও জাতীয় উদ্যানে

কোনও জাতীয় উদ্যানের জনপ্রিয়তা বাঘের জন্য, কোথাও দেখা যায় একশৃঙ্গ গন্ডার। বন্যপ্রাণী দেখাতে সন্তানকে চিড়িয়াখানা নয়, নিয়ে চলুন গহীন অরণ্যে। ভ্রমণের সঙ্গে খুদের প্রকৃতিপাঠও হয়ে যাবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ০৯:৫৫
সন্তানকে নিয়ে গরমের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন দেশের বিভিন্ন অরণ্যে।

সন্তানকে নিয়ে গরমের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন দেশের বিভিন্ন অরণ্যে। ছবি: সংগৃহীত।

বইয়ের পাতায় পড়া বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা চাক্ষুষ করার আদর্শ স্থান চিড়িয়াখানা। বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে পরিচয় করাতে অভিভাবকেরা সন্তানদের সেখানেই নিয়ে যান। চিড়িয়াখানার স্বল্প পরিসরে হরেক জীবজন্তু দেখার সুযোগ মেলে। কিন্তু সে সব তো বন্যপ্রাণীদের বন্দিদশা। খাঁচাবন্দি বাঘ, সিংহ একরকম, আর খোদ বাঘ-সিংহ কিংবা হাতির ডেরায় ঢুকে বন্যপ্রাণ চাক্ষুষ করার আনন্দ, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ এক রকম। গরমের সময় স্কুলে লম্বা ছুটি থাকে। এই ছুটিটাই কাজে লাগিয়ে সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন অরণ্য-ভ্রমণে। জঙ্গল সাফারি কী, পাখি দেখা, অরণ্যের স্বরূপ শিশুরা চাক্ষুষ করবে, জানবে। ভ্রমণের সঙ্গে মিলবে প্রকৃতিপাঠও।

বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান

বাঘের ডেরা হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রদেশের একাধিক জাতীয় উদ্যান। বান্ধবগড়, কানহা, পেঞ্চের জঙ্গলের খ্যাতি রয়েছে বাঘের দর্শন পাওয়ার জন্য। তবে শুধু বাঘ নয়, সাতপুরা পর্বত সংলগ্ন উমারিয়া এবং কাটনি জেলা জুড়ে বিস্তৃত বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান লেপার্ড, চিতল, স্পটেড ডিয়ার, ঢোল, গউর, সম্বর, নীলগাই, হায়না, ফোর হর্ন অ্যান্টিলোপ-সহ অজস্র বন্যপ্রাণী এবং কয়েকশো প্রজাতির পক্ষীর আবাস্থল। গরমে প্রবল তাপেও জাতীয় উদ্যান ভ্রমণের কারণ হল, এই সময় বাঘ দেখার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। প্রখর সূর্যালোকে জঙ্গলের আনাচকানাচে ছোটখাটো জলাশয় শুকিয়ে যায়। জল থাকে কয়েকটি মাত্র জায়গায়। বাধ্য হয়ে বন্যপ্রাণীদের সেখানেই তেষ্টা মেটাতে আসতে হয়। তার ফলে বাঘ এবং বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগও বেড়ে যায় অনেকটাই।

১৯৬৮ সালে বান্ধবগড় ‘জাতীয় উদ্যান’-এর তকমা পায়। জঙ্গল দু’ভাগে বিভক্ত— কোর এরিয়া এবং বাফার জ়োন। কোর এরিয়া বন্যপ্রাণের জন্য বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত। সেখানে প্রবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন। বান্ধবগড়ের কোর এরিয়ায় রয়েছে টালা, মাগদি, খিটৌলি জ়োন। অরণ্যে ঘোরার জন্য জিপ সাফারি বুক করতে হয় অনলাইনে। গিয়েও অবশ্য করা যায়। ৫ বছরের নীচে শিশুর জন্য আলাদা খরচ লাগে না। তবে তার উপরে হলে জিপে নির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ হয়। সেইমতো খরচও ধার্য হয়।

বরাত ভাল থাকলে বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানে দেখা পেতে পারেন বাঘের।

বরাত ভাল থাকলে বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানে দেখা পেতে পারেন বাঘের। ছবি: সংগৃহীত।

গির জাতীয় উদ্যান

ভারতে বাঘ দেখার জন্য একাধিক জাতীয় উদ্যানে যাওয়া যায়। তবে সিংহ দেখতে গেলে যেতে হবে গুজরাতের গিরে। এশিয়াটিক সিংহের অন্যতম বাসভূমি হল গির জাতীয় উদ্যান। গুজরাতের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ১৪১০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই অরণ্যের বিস্তৃতি। তার মধ্যে ২৫৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল কোর এরিয়া। সিংহদর্শনের সাফারির ব্যবস্থা কোর এরিয়াতেই। আর তার বুকিং শুরু হয়ে যায় মাস দুই-তিন আগে থেকেই। একটি জিপসিতে ছ’জনের বসার ব্যবস্থা। অরণ্যে সাফারি করলেই সিংহের দেখা মিলবে, এমন কোনও স্থিরতা অবশ্য নেই। আসলে জাতীয় উদ্যানে ঘোরা আর চিড়িয়াখানায় বা আবদ্ধ এলাকায় সিংহ দেখায় তফাত অনেক। তবে বরাত ভাল থাকলে চিতাবাঘ থেকে সিংহ— অনেক কিছুরই দেখা মিলতে পারে। চিঙ্কারা, চিতল তো আছেই।

তবে সিংহ, চিতাবাঘের দেখা পাওয়ার সুযোগ বেশি শাসন গ্রাম থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে দেবালিয়া পার্কে। বিস্তীর্ণ এলাকা বেড় দিয়ে ঘিরে বন্যপ্রাণীদের রাখা হয়েছে এখানে। তবে তারা খাঁচাবন্দি নয়। জিপসি এবং ছোট বাস এখানে পর্যটকদের ঘোরানোর জন্য রাখা থাকে। সময় লাগে ঘণ্টাখানেক।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান

একশৃঙ্গ গন্ডারের দেখা পেতে হলে আসতে হবে অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে।

একশৃঙ্গ গন্ডারের দেখা পেতে হলে আসতে হবে অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে। ছবি: সংগৃহীত।

বাঘ, সিংহের বাইরে এই জগতে অন্য অনেক বন্যপ্রাণ আছে, যাদের দেখার জন্য উৎসাহী পর্যটকেরা আসেন। যেমন একশৃঙ্গ গন্ডার। এই গন্ডারের আস্তানা অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান। ইন্ডিয়ান বাইসন, হাতি, হরিণ-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল এই অরণ্যভূমি। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ২০০৬ সালে টাইগার রিজ়ার্ভের স্বীকৃতিও পায়। এই অরণ্যাঞ্চলে বাঘের সংখ্যাও ক্রমশ বেড়েছে।

জিপ সাফারির পাশাপাশি হাতির পিঠে চেপেও জঙ্গল ঘোরা যায় এখানে। একশৃঙ্গ গন্ডারের দেখা মেলার সুযোগ এখানে যথেষ্ট। হাতি, হরিণও দেখতে পাওয়া যায়। বরাত ভাল থাকলে দেখা মিলতে পারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরও। ৫ বছরের বেশি বয়সিদের জিপ সাফারিতে আলাদা আসন ধার্য করা হয়, সে জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই খরচ লাগে।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান

পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় রয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। ১৯৪১ সালে এই অরণ্য অভয়ারণ্যের তকমা পায়। জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেতে লেগে যায় আরও অনেকগুলি বছর। হাতি, গন্ডার, ইন্ডিয়ান বাইসন, ময়ূর, হরিণের বিচরণক্ষেত্র। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে জিফ সাফারির পাশাপাশি হাতির পিঠে চেপে ঘোরার ব্যবস্থা রয়েছে। তার জন্য বন দফতরের অফিসে গিয়ে বুকিং করতে হয়। অনলাইনেও বুকিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। সকালে এবং বিকেলে জিপ সাফারির ব্যবস্থা। সাফারিতে ছোটদের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে একেবারে ছোটদের হাতি সাফারির অনুমতি মেলে না।

এই জাতীয় উদ্যান ঘোরা যায় হাতির পিঠে চেপেও।

এই জাতীয় উদ্যান ঘোরা যায় হাতির পিঠে চেপেও। ছবি: সংগৃহীত।

রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান

রাজস্থানের দক্ষিণপূর্বে সওয়াই মাধোপুর জেলায় রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান। অসংখ্য বন্যপ্রাণ এবং অজস্র পাখির আবাস্থল এই অরণ্যভূমির জনপ্রিয়তা অবশ্য বাঘের জন্যই। ১ হাজার ৩৩৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অরণ্যের বিস্তৃতি। বাঘ ছাড়াও চিতাবাঘ, হায়েনা, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র জাতীয় উদ্যানটি। অরণ্যে ঘোরা এবং বন্যপ্রাণ চাক্ষুষ করার জন্য দিনে সকাল এবং দুপুরে জিপসি সাফারির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় রণথম্ভোর দুর্গ, ত্রিনেত্র গণেশ মন্দির। জিপ সাফারিতে ৫ বছরের কম বয়েসিদের কোনও খরচ ধরা হয় না।

মনে রাখা দরকার: যে কোনও জাতীয় উদ্যানেই বর্ষাকালে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি থাকে না। বিশেষত কোর এলাকায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর তা বন্ধ রাখা হয়।

Summer Vacation Travel Destinations National Park
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy