বিদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন কিংবা কাজে। বিমানবন্দরে এসে দেখলেন এত জিনিসপত্রের ভিড়ে আনা হয়নি পাসপোর্ট। এমন ভুল অনেকেই করেন। অথচ পাসপোর্ট আনলেন, কিন্তু অসাবধানতায় তাতে কফি পড়ে গেলে, কিংবা চোখের আড়ালে খুদে সদস্যটি পাসপোর্টে হিজিবিজি কেটে দিল, তখন?
পাসপোর্টের পাতা ছেঁড়া, স্ট্যাম্প মারা পাতায় কোনও আঁকিবুকি বা দাগ, পাতা কুঁকড়ে যাওয়া— ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী এগুলি কিন্তু সমস্যার কারণ হতে পারে। এর ফলে পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত বলে বাতিল হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এমনকি, এই ধরনের ঘটনার জন্য কাউকে আইনি জটিলতা বা বিমানবন্দরে আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করছেন একটি উড়ান প্রশিক্ষণ সংস্থার কর্তা কর্নেল রাজগোপালন পি।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, পাসপোর্ট কোনও দেশের নাগরিকের ভিন্দেশে কর্মসূত্রে বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। যদি মনে করা হয় সেই নথি কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কাউকে আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তাও জড়িত।
পাসপোর্ট কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রমাণ। বৈধ পাসপোর্ট জানান দেয়, তিনি কোনও একটি দেশের নাগরিক। তার ভিত্তিতেই ভিসার অনুমোদন মেলে। আবার পাসপোর্ট জাল করে কোনও দেশে অনুপ্রবেশ করে অপরাধমূলক ঘটনাও ঘটায় জঙ্গিরা। সে কারণে, পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন:
উড়ান সংস্থায় দীর্ঘ দিন কর্মরত এবং এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ ধৈর্যশীল বন্দেকর জানাচ্ছেন, যে কোনও ভাবে পাসপোর্টের পাতা আংশিক বা সম্পূর্ণ ছেঁড়ার বিষয়টি যদি ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, তবে সেটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলতে পারে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট সব দেশে গ্রাহ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। ফলে পাসপোর্ট যাতে জালিয়াতি না হয়, সে কারণে এতে জলছাপ, হলোগ্রাম, মাইক্রোপ্রিন্টিং থাকে। আধুনিক পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক চিপ, মেশিন রিডেবল জ়োন থাকে, যাতে সহজে পাসপোর্ট কেউ নকল করতে না পারেন। ঠিক সে কারণেই এর কোনও পাতা নষ্ট হলে, ভিজে গেলে, কফি বা চা পড়ে গেলে, কোনও স্ট্যাম্প নষ্ট হয়ে গেলে এতে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বলে চিহ্নিত করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে কোনও পাসপোর্টে গন্ডগোল থাকলে বিমান সংস্থা যাত্রীর উড়ানের অনুমতি বাতিল করে দিতেও পারে। কোনও দেশে আটকে যেতে পারে অভিবাসনও। এমনকি, পাসপোর্টের পাতা কী ভাবে নষ্ট হল সেই ব্যাপারে কোনও যাত্রীকে অভিবাসনের সময় বা বিমানবন্দরেই নিরাপত্তা আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হতে পারে। পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন করে আবেদন জানাতে হবে।
ভারত সরকারের পাসপোর্ট ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট ‘ড্যামেজ্ড’ বা ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বলে বিবেচিত হবে—
পাসপোর্টের নম্বর, পাসপোর্টে যাত্রীর নাম এবং ছবি ঠিক থাকা সত্ত্বেও যদি যন্ত্র তা পড়তে না পারে? ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী নিজের পাসপোর্ট সুরক্ষিত রাখা এক জন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। ধৈর্যশীল জানাচ্ছেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী পাসপোর্টের পাতা নষ্ট করা, ছবির উপর স্টিকার জাতীয় কিছু বসিয়ে আবছা করে দেওয়া, পাতা ছেঁড়া ইত্যাদি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অপরাধের উদ্দেশ্যে কেউ এমনটা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করাও হতে পারে।
পাসপোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হলে আবেদন জানিয়ে নতুন পাসপোর্ট নিতে হবে।