সমাজমাধ্যম খুললেই দেখা যায়, একলা বেড়ানোর ছবি। বয়স যাই হোক না কেন পুরুষ থেকে মহিলারা একলাই ঘুরছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন, স্বপ্নপূরণের গল্প শুনিয়ে আর পাঁচ জনের মনে স্বপ্ন বুনে দিচ্ছেন।
সেই স্বপ্নই ডালপালা মেলেছে আপনার মনেও, বেরিয়ে পড়তে চান একলাই! কিন্তু কোথায় যাবেন? ইচ্ছা যতই থাকুক না কেন, প্রথমবার একলা যাওয়ায় একটু দুশ্চিন্তা থাকেই। তা ছাড়া মহিলা হলে, নিরাপত্তা নিয়ে একটু বাড়তি ভয় মনে থেকেই যায়।
একলা বেড়াতে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁরা যে কোনও গন্তব্যই বেছে নিতে পারেন সহজে। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতায় তাঁরা পোক্ত হয়ে উঠেছেন। প্রথমবার বেরোনোর মতো বুক দুরুদুরু ভাব পরের সফরগুলিতে অতটা হয় না। কিন্তু প্রথমবার যদি কোথাও যেতে হয়, কোথায় যেতে পারেন?
কারও পছন্দ থাকে পাহাড়, কারও সমুদ্র। আবার কেউ প্রথমবার কোথাও যাওয়ার আগে নিরাপত্তা খোঁজেন। পাহাড়-সমুদ্র বা হ্রদ যাই হোক না কেন তাতে আপত্তি থাকে না। একলা বেড়ানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলে আলাদা কথা। তবে একলা বেড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও, শুরু থেকেই সকলের সেই আত্মবিশ্বাস থাকে না। এ ক্ষেত্রে গন্তব্যস্থলের নিরাপত্তা খুব জরুরি।
উত্তরবঙ্গ
উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলিও হতে পারে একলা সফরের গন্তব্য। ছবি: সংগৃহীত।
দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং—পাহাড়ি এলাকাগুলি একলা ভ্রমণার্থীদের জন্য আদর্শ। তিন জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট অনেক হোম স্টে রয়েছে। সেখানে থেকেই কয়েকটি দিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আশপাশের এলাকাও ঘুরে দেখা যায়। প্রথমবার এমন কোনও ঠিকানা বেছে নিন। অত্যন্ত দুর্গম স্থান না বেছে, গণ পরিবহণ ব্যবস্থা মেলে এমন স্থান নির্বাচন করা যায়। থাকার জায়গাটির নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে এবং স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতা পেলে প্রথমবার একলা ভ্রমণের ভয় ধীরে ধীরে কেটে যাবে। বিজনবাড়ি, তাবাকোশী, মিরিক, কালেজ ভ্যালি, মাইরুনগাঁও, রামধুরা, সিলারিগাঁও— যে কোনও একটি বা দুটি গন্তব্য বেছে নিতে পারেন। তার আশপাশে কোথায়, কী দেখার আছে আগে থেকে জেনে নিন। সেই মতো ঘোরার পরিকল্পনা করুন।
সিকিম
তালিকায় রাখতে পারেন সিকিমের গ্রামগুলিও। ছবি: সংগৃহীত।
সিকিমও একলা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহর ছাড়াও পূর্ব, উত্তর, পশ্চিম, দক্ষিণ সিকিমে অনেক ছোট ছোট গ্রাম এবং ঘোরার জায়গাও রয়েছে। নিজের বাজেট এবং কতটা ঘুরতে চাইছেন সেই অনুযায়ী স্থান বাছাই করুন। পেলিং, ভার্সে, উত্তরে, রিনচেংপং-সহ অনেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে পশ্চিম সিকিমে। আগমলোক, পদমচেন, লিংথামের মতো গ্রামগুলি রাখতে পারেন পূর্ব সিকিম ভ্রমণের তালিকায়। যেতে পারেন উত্তর সিকিমেও। গ্যাংটক থেকে শেয়ার গাড়িতে উত্তর সিকিমের লাচেন এবং লাচুং যাওয়া এবং ঘোরার ব্যবস্থা রয়েছে। থাকার জন্য গ্রামগুলিতে একাধিক হোম স্টে রয়েছে। আশপাশে ঘোরার ব্যাপারে তাঁরাই পর্যটকদের সহযোগিতা করেন, গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। একলা অনভিজ্ঞ ভ্রমনার্থীর পক্ষে তা অনেকটাই সুবিধাজনক। তবে কোনও জায়গা যাওয়ার আগে গাড়ি, থাকার খরচ সম্পর্কে ধারণা থাকলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমে, আবার প্রয়োজন মতো দরাদরি করা যায়।
ওড়িশা
ঘুরে নিতে পারেন ওড়িশার নানা জায়গা। ছবিটি দেওমালি পাহাড়ের। ছবি:সংগৃহীত।
একলা ভ্রমণের ঠিকানা হতে পারে ওড়িশাও। বহু জায়গাকে একলা ভ্রমণার্থীরা থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। পাহাড়ে বা হোম স্টে-তে একলা ঘর দেওয়া নিয়ে আপত্তি না থাকলেও অনেক সৈকত শহরে একলা কাউকে ঘর দেওয়া হয় না। ওড়িশায় এমন অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে যেখানে ওড়িশা পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাস রয়েছে। রম্ভা, বরকুল, গোপালপুর, ঘোড়াহারা জলাধার-সহ অনেক জায়গাতেই একলা স্বচ্ছন্দে ঘুরে আসা যায়। পুরী জনপ্রিয় স্থান হলেও, ওড়িশার নানা প্রান্তের সৌন্দর্য বৈচিত্র্যময়। এই সমস্ত জায়গাগুলি এতটাই সুন্দর, শুধু এক জায়গাতে থেকেই দিন ২-৩ কাটিয়ে দেওয়া যায়।
হিমাচল প্রদেশ
একলা সফরের জন্য হিমাচল প্রদেশও যথেষ্ট জনপ্রিয়। শিমলা, কুলু, মানালি আছেই, হিমাচলে অনেক গ্রামও আছে যেখানে থেকে নিজের মতো করে ভ্রমণের পরিকল্পনা সাজানো যায়। মণিকরণ থেকে কাসোল, সারাহান, সাংলা, কল্পা— অনেক জায়গাই রয়েছে এখানে। প্রথম বার যেতে হলে শিমলা, কুলু, মানালি বা মনিকরণ, কাসোলের মতো জায়গা বেছে নিতে পারেন যে জায়গায় পৌঁছনো অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক, অনেক পর্যটক থাকেন।
রাজস্থান: ইতিহাস এবং দুর্গের শহর রাজস্থানও একলা ভ্রমণের জন্য বেশ ভাল। জয়পুর, উদয়পুর, জোধপুর, মাউন্ড আবু— রাজস্থানে ঘোরার জায়গা অনেক। কোনও একটি বা দু’টো গন্তব্য বেছে নিন। এতে ঘোরার সুবিধা হবে।
• প্রথমবার বেড়ানোর স্থান নির্বাচনের সময়, সেই জায়গাটি সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নিন। একটি পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্বিতীয় পরিকল্পনাও করে রাখুন। যাতে প্রথম পরিকল্পনাটি কোনও কারণে বাস্তবায়িত না হলে পরেরটি করা যায়।
• সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। একলা বেড়াতে গেলে চোখ, কান খোলা রাখা জরুরি।
• কোনও জায়গা কতটা নিরাপদ— তা বলা যায় না। বরং বেড়াতে গেলে প্রতিকূল পরিস্থিতর সম্মুখীন হলে ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করা দরকার। প্রয়োজনে যেখানে থাকবেন সেখানকার হোম স্টে, হোটেল, প্রশাসনের সহযোগিতা চাইতে পারেন।