Advertisement
E-Paper

গোয়া, কোভালামকে সৌন্দর্যে টেক্কা দিতে পারে, আছে সমুদ্র, ইতিহাসের নিদর্শনও, শীত-ভ্রমণে চলুন দিউ

শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট, নিপাট এক স্থান দিউ, যার আনাচে কানাচে উপচে পড়া সৌন্দর্য। এই দ্বীপে রয়েছে ইতিহাসের হাতছানি, আছে সাগরের রূপ। শীতের মরসুমেই দিউ বেড়ানোর জন্য আদর্শ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৭
এই শীতে ঘুরে নিন দিউ।

এই শীতে ঘুরে নিন দিউ।

দিউ-এর সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষের পরিচয় বইয়ের পাতায়। ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নামের তালিকায় দমন এবং দিউয়ের নাম পড়েছেন সকলেই। সেই দিউ হতে পারে শীত-ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত গন্তব্য।

দমন এবং দিউ দুই নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হলেও দুই স্থানের দূরত্ব প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে একেক বারে একটি বেছে নেওয়া ভাল। যদি দিউ বেড়াতে যান, কী ভাবে পরিকল্পনা করবেন, সাজাবেন সফরসূচি?

দিউর সমুদ্র সৈকতগুলিও ছবির মতো সুন্দর।

দিউর সমুদ্র সৈকতগুলিও ছবির মতো সুন্দর। ছবি: সংগৃহীত।

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিউয়ের তিন দিকে সাগর, এক দিকে গুজরাতের গির সোমনাথ জেলা। কাথিয়াওয়াড় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের কাছে অবস্থিত দিউ গুজরাতের সঙ্গে দু’টি সেতু দ্বারা যুক্ত। শুধু ভূগোল নয়, দিউয়ের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসও।

এ এক এমন জায়গা, যা শান্ত এবং নির্ঝঞ্ঝাট। আনাচে কানাচে শুধুই উপচে পড়া সৌন্দর্য। কোথাও অবিরাম ঢেউ এসে লুটিয়ে পড়ে, কোথাও আবার মসৃণ সড়ক আর সাগর হাত-ধরাধরি করে চলে।

ইতিহাস বলছে, দিউ আগে গুজরাতের সুলতানদের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুলতান বাহাদুর শাহ পর্তুগিজদের সামরিক সাহায্য চান। পর্তুগিজেরা সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে দিউতে একটি দুর্গ নির্মাণের অনুমতি পায়। সেই দুর্গই এখন, এখানকার অন্যতম দ্রুষ্টব্য।

এই দ্বীপের নানা প্রান্ত ঘোরা যায় পায়ে হেঁটেও। বিশেষত সন্ধ্যা এখানে ভারি মনোরম। সাগরের ধার বরাবর রাস্তা। তার পাশেই সারিবদ্ধ হোটেল-রেস্তরাঁ। বেশির ভাগ হোটেল সংলগ্ন রেস্তরাঁগুলি দোতলা। উন্মুক্ত এবং আলোয় সাজানো। সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য ভারি মনোরম লাগে। খাবার এবং পানীয়, দুই ক্ষেত্রেই দিউ উদার। গুজরাত ‘ড্রাই স্টেট’ হলেও, এখানে সে নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং রকমারি পানীয় সহযোগে টাটকা চিংড়ি, সি-ফুড, পর্তুগিজ, গোয়ান, চাইনিজ-সহ নানা প্রদেশের খাবারের সম্ভার দারুণ উপভোগ করা যায়। সাগর ঘেরা দ্বীপটির নৈশজীবনও যথেষ্ট আকর্ষক। এ স্থান যেমন পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য, তেমন মধুচন্দ্রিমা যাপনের স্থান হিসাবেও গোয়া, কোভালামকে দশ গোল দিতে পারে।

ঘোগরা সৈকত থেকে সূর্যাস্ত ভারি সুন্দর দেখায়।

ঘোগরা সৈকত থেকে সূর্যাস্ত ভারি সুন্দর দেখায়। ছবি:সংগৃহীত।

দিউ ঘুরে নেওয়ার আদর্শ উপায় হল বাইক। বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। দু’চাকার বন্দোবস্ত করা গেলে ভাল, না হলে দ্বীপটি ঘুরে নিতে পারেন গাড়িতেই। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন, সুন্দর। রাস্তার ডিভাইডারগুলি ভর্তি হরেক রকম ফুলের গাছ। সমুদ্র সৈকত তো আছেই, তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ বন্দর রোডের একেবারে শেষ প্রান্তে দিউ ফোর্ট। ১৫৩৫-৪১ সালে আরব সাগরের ধারে বিশাল দুর্গটি গড়ে তোলে পর্তুগিজেরা। যার চার দিকে পরিখা দিয়ে ঘেরা। ভিতরে দু’টি পথের একটি চলে গিয়েছে দুর্গের অন্দরে, অন্যটি জেটির দিকে। লম্বা জেটির কাছে যেতেই দেখা মেলে আরব সাগরের। দুর্গপ্রাকারের গায়ে আছড়ে পড়ছে অশান্ত সাগরের ঢেউ। সাগরের মাঝে নোঙর করা জাহাজের আদলে দাঁড়িয়ে আছে ফোর্ট ডি মার বা পানিকোঠা। দিউ ফোর্টের এক পাশে দিউ সেন্ট্রাল জেল। দিউ দুর্গের মাথায় উঠলেই ধরা দেবে প্রকৃতির অনাঘ্রাত সৌন্দর্য। আরব সাগরের ঢেউ বারংবার আঘাত করে দুর্গের প্রাচীরে।

দিউ ফোর্ট।

দিউ ফোর্ট। ছবি:সংগৃহীত।

সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চটিও দেখার মতো। সাদা রঙের গির্জাটি রয়েছে উন্মুক্ত এক স্থানে। কাঠের কাজ অপরূপ। পাশেই সুন্দর মিউজিয়াম। কাছেই গঙ্গেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দিররে বিশেষত্ব হল, পাঁচটি পাথরের শিবলিঙ্গ ধুয়ে দিয়ে যায় সাগর। জোয়ার এলে সমুদ্রের জল বাড়ে। ঢেউ আছড়ে পড়ে শিবলঙ্গের উপরে। বছর পর বছর ধরে এমনটা চলে এলেও, শিবলিঙ্গ ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। নিয়ম করে সেখানে পুজোও হয়। কথিত আছে, পাণ্ডবেরা এই শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা।

গঙ্গেশ্বর শিব।

গঙ্গেশ্বর শিব।

এখান থেকে আরব সাগর দেখতে অসাধারণ লাগে। হাওয়ার দাপটে ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের অপরূপ শিল্পকর্ম দেখে মন জুড়িয়ে যায়। শহর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে সাগরের ধারে ঘুরে নিতে পারেন আইএনএস খুকরি মেমোরিয়াল। এখানে রয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস খুকরির রেপ্লিকা। জায়গাটি সাজানো সুন্দর পার্কে। সমুদ্রের অসাধারণ ভিউ মেলে এখানে।

আইএনএস খুকরির রেপ্লিকা রয়েছে, রয়েছে সাজানো উদ্যান।

আইএনএস খুকরির রেপ্লিকা রয়েছে, রয়েছে সাজানো উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত।

দিউ ভ্রমণে সৈকতগুলি তো বাদ পড়তে পারে না। শুধু দিউকে কেন্দ্র করে ভ্রমণসূচি সাজালে একটি দিন রাখতে পারেন সৈকতগুলি দেখার জন্য। নাগোয়া সমুদ্র সৈকত দিউ-এর সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্রতট।এই সৈকত ঘোড়ার নালের মতো আকৃতির। এখানে হোক্কা পাম গাছ দেখা যায়, যা সচরাচর অন্যত্র দেখা যায় না। ঘোগলা সমুদ্র সৈকত শুধু জলক্রীড়ার জন্য সেরাই নয়, সবচেয়ে বড় সৈকতও এটি। এটি দিউয়ের উত্তরাংশে অবস্থিত। এখানে প্যারাসেলিং, ওয়াটার স্কুটার এবং অন্যান্য জলক্রীড়া উপভোগ করা যায়। চক্রতীর্থ সমুদ্র সৈকত শান্ত। এর পাশেই আইএনএস খুকরি মেমোরিয়াল। সূর্যাস্তের সময়টা এখানে উপভোগ্য। ঘুরে নিতে পারেন জলন্ধর সৈকত। পাথুরে হওয়ায় এটি স্নানের উপযুক্ত নয়।

কী ভাবে যাবেন?

দিউয়ে বিমানবন্দর আছে। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান মেলে। এ ছাড়া ট্রেনে গুজরাত পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতেও যাওয়া যায়। হাওড়া থেকে ভেরাভাল পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন আছে। ভেরাভাল সোমনাথের বড় রেলস্টেশন। হাওড়া-ওখা এক্সপ্রেস সাধারণত সপ্তাহে এক বার চলে। এ ছাড়া ট্রেনে রাজকোট বা পোরবন্দর গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

দিউয়ে সমুদ্রের ধারে অসংখ্য হোটেল রয়েছে। বিভিন্ন মানের হোটেল মিলবে এখানে।

tourism Daman and Diu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy