ভ্রমণপিপাসুদের একাংশের কাছে প্রকৃতির কোলে ক্যাম্পিংয়ের হাতছানি আকর্ষণীয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কোণে ট্র্যাভেল সংস্থা ট্রেকিংয়ের পাশাপাশি আলাদা করে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। আবার অনেকেই নিজের উদ্যোগে ক্যাম্পিং করে থাকেন। অনলাইনেও এখন ক্যাম্পিংয়ের নানা সরঞ্জাম সহজলভ্য। পাহাড় বা জঙ্গলে আধুনিক বন্দোবস্ত ছাড়া কয়েকটি দিন কাটানোর রোমাঞ্চ ভ্রমণের অন্য অভিজ্ঞতা হাজির করে। যাঁরা প্রথম বার ক্যাম্পিংয়ের রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য রইল কয়েকটি পরামর্শ—
আরও পড়ুন:
১) গন্তব্য এবং অনুমতি: চাইলেই যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে নিজের মতো ক্যাম্পিং করা যায় না। তাই আগে কোথায় কোথায় ক্যাম্পিং করা যায়, তা জেনে রাখা উচিত। যেমন, , উত্তরাখণ্ড, লাদাখ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে পর্যটনকেন্দ্রে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেইমতো স্থানীয়দের থেকে ক্যাম্পিংয়ের সরঞ্জামও ভাড়ায় পাওয়া যায়।
২) সঙ্গে রাখুন খাবার: দুর্গম অঞ্চলে সাধারণত ক্যাম্পিং করা হয়। তাই সঙ্গে শুকনো খাবার রাখা উচিত। নুডল্স, বিস্কুট, রেডি টু ইট খাবারের প্যাকেট রাখা উচিত। সঙ্গে থাকবে জল, চা এবং কফি। তবে যতটা প্রয়োজন ততটাই সঙ্গে রাখা ভাল। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার রাখলে অযথা ব্যাগের ওজন বাড়বে। মাংস বা মাছের মতো খাবার সঙ্গে না রাখাই ভাল। এগুলি সংরক্ষণ এবং রান্নার ক্ষেত্রে সময় বেশি প্রয়োজন।

ভারতের একাধিক পর্যটনকেন্দ্রে ক্যাম্পিংয়ের সুবিধা রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
৩) জায়গা নির্বাচন: ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে নিরিবিলি অথচ শুকনো জায়গা প্রয়োজন। আশপাশে কোনও নদী থাকলে জলের সুবিধা হবে। কোনও গাছের ছায়ার তাঁবুটি তৈরি করতে পারলে ভাল। সে ক্ষেত্রে রোদ বা বৃষ্টির হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। পাহাড়ের ক্ষেত্রে, খুব খাড়া ঢালে তাঁবু রাখা উচিত নয়। আবার গাইড ছাড়া জঙ্গলের খুব গভীরে ক্যাম্পিং করা উচিত নয়।
৪) যোগাযোগ এবং সুরক্ষা: ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন পথনির্দেশ) জেনে নেওয়া উচিত। কোনও কোনও জায়গায়, ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়ে রাখা যেতে পারে। তাতে বিপদের সময় সুবিধা হয়। ক্যাম্পিংয়ের সময় সমাজমাধ্যমে নিজের প্রকৃত লোকেশন শেয়ার করা উচিত নয়। এর ফলে অসৎ ব্যক্তিদের পাল্লায় পড়তে পারেন।
৫) মোবাইল: জঙ্গল বা পাহাড়ে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া কঠিন। তাই আগে থেকে মোবাইলে অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখা ভাল। পাশাপাশি, কাগজের ম্যাপও রাখা উচিত। এর ফলে পথনির্দেশের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। সঙ্গে একটি সাধারণ কম্পাস রাখলেও সুবিধা হতে পারে। সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্কও রাখা উচিত।

ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃতির যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
৬) প্যাকিং: ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত পর্যটককে নিজেকেই মাল বহন করতে হয়। তাই খুব বেশি জিনিস সঙ্গে না নেওয়াই ভাল। স্লিপিং ব্যাগ এবং ফ্লোর ম্যাট অবশ্যই নিতে হবে। পাশাপাশি, রান্নার জিনিসপত্র এবং পাত্র। সঙ্গে থাকবে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। এ ছাড়াও রাখুন টয়লেটরি ব্যাগ। জঙ্গলের মধ্যে মশা এবং বিভিন্ন পোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ধূপ বা তেলও সঙ্গে নেওয়া উচিত। এমন পোশাকই নেওয়া উচিত, যা ধোয়ার পর সহজেই শুকিয়ে যাবে।
৬) ঝুঁকি নয়: পাহাড় বা জঙ্গলে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই সব সময় মোবাইলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেওয়া উচিত। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে অযথা ঝুঁকি না নিয়ে ক্যাম্পিং জ়োন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসা উচিত।
৭) প্রকৃতিই শেষ কথা: মাথায় রাখতে হবে, ক্যাম্পিং করতে গিয়ে প্রকৃতির কোনও ক্ষতি করা চলবে না। তাই ক্যাম্পিং শেষে আবর্জনা সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসা উচিত। ক্যাম্পিংয়ের সময় সতর্কতার সঙ্গে আগুন জ্বালা উচিত। শুকনো পাতা থেকে দাবানলের আশঙ্কা থাকে। প্রকৃতির কোলে ক্যাম্পিংয়ের সময় জোরে গানবাজনা করাও উচিত নয়। এ ছাড়াও ক্যাম্পিং জ়োনের পশুপাখি এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, এ রকম কোনও কাজ করা উচিত নয়।