Advertisement
E-Paper

আকাশ, পাখি আর কাঞ্চনজঙ্ঘায় নিজেকে মিলিয়ে দিতে আসুন লেপচাজগৎ

দিগন্ত আর আকাশ যেখানে কানামাছি খেলছে, তার বাঁ দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর ডান দিকে দার্জিলিং।রবিনের বাড়িতে আমার আশ্রয়। ওর বাড়ির পিছন দিয়ে জঙ্গলের মাঝে সরু এক পথ থামল যেখানে, সেখানে ছোট্ট একফালি সমতল।

অঞ্জন সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১০:০০
নিরিবিলিতে অন্য রকমের এক জঙ্গল, আকাশ।

নিরিবিলিতে অন্য রকমের এক জঙ্গল, আকাশ।

অঘ্রাণ পার হচ্ছে। পৌষ পা রাখছে। এ সময়টায় সূর্যটা আকাশে উঠতে না উঠতেই চলে যায় পশ্চিমে। সেই বেলা অন্তে মন ভার হয়, দিনের পাখির মতোই। আকাশের গায়ে হলুদ...। আলতা পাতা রোদ। ছায়া ঘন হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। বাতাসে কীসের যেন টান। শুকনো পাতা পাক খেয়ে মাটি ছাড়ে। বুনো ঝিঁঝিঁগুলো একসঙ্গে... কি উচ্চগ্রামের সুর! সে সুরে মিশে মাটির রসের প্রেম। লেপচাজগতের সে প্রেমে মজে আমিও!

রবিনের বাড়িতে আমার আশ্রয়। ওর বাড়ির পিছন দিয়ে জঙ্গলের মাঝে সরু এক পথ থামল যেখানে, সেখানে ছোট্ট একফালি সমতল। তার পিছনপানে জঙ্গল। সামনে চোখ মেলে দিলে দিগন্ত আর আকাশ যেখানে কানামাছি খেলছে, তার বাঁ দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর ডান দিকে দার্জিলিং।

নিরিবিলিতে অন্য রকমের এক জঙ্গল, আকাশ, পাখির ডাক আর কাঞ্চনজঙ্ঘায় নিজেকে মিলিয়ে দিতে চলে আসুন এখানে, নাই বা হল অনেক দূর। যদি ভাগ্য আপনার সত্যিই সহায় হয়, তা হলে লেপচাজগৎ-এর জঙ্গলে হঠাৎই এক ঝলক দেখা পেতে পারেন রেড পন্ডার। সে এক অন্য রকম প্রাপ্তি হবে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা।

আরও পড়ুন: অজানা উত্তরবঙ্গের সন্ধান, যেন হাত বাড়ালেই স্বর্গ​

গরম ধোঁয়া-ওঠা লেবু চায়ে একটা চুমুক দিতেই মনটা তরতাজা! পায়ে পায়ে এগোই ‘ঘুম রক’-এর দিকে। সেখানে পৌঁছে নীচে যে দিকে তাকাই শুধু অতলান্ত মেঘ আর মেঘ...। কিছুটা সময় সেখানে থেকে ফিরছি যখন, পথ আটকাল এক বয়োবৃদ্ধ পাইনের জঙ্গল। একটুকরো দিনের আলো ওদের মাঝ দিয়ে আমার কপালে, গায়ে। আমার শরীরে মেশে তার ওম। সেই বৃদ্ধ গাছেদের গায়ে গা মিশিয়ে দাঁড়াই, গন্ধ নিই... ঠান্ডা শরীরগুলোয় হাত বুলিয়ে জীবনের পরশ খুঁজি। ফিশফিশিয়ে গল্প শোনায় ওরা... বিবশ হই।

রেড পন্ডা।

বিদায়ের ক্ষণে নিড্‌ল্‌ পাইনের পাতা থেকে দু’ফোঁটা জল, জল না সুখের কান্না, উপহার দেয় আমাকে... আমার হৃদি বানভাসি...। পথে নামি। দুধারে কত নাম-না-জানা ফুল আলো ঝলমলে। ডেরায় ফিরে জলখাবার শেষ করে রওনা দিই জোড়পোখরি। জঙ্গলের মাঝে শান্ত নির্জন পরিবেশে দুটো পোখরি বা ‘লেক’। জলে কিছু রাজহাঁস ঘুরছে এলোমেলো। এক ধারে বনবিভাগের বাংলো। এ অঞ্চল বিখ্যাত বিলুপ্তপ্রায় উভচর স্যালামান্ডারের জন্য। ফিরতিবেলায় টুক করে দার্জিলিং চলে যেতে পারেন। মাত্র ১৬-১৭ কিমি রাস্তা। গ্লেনারিতে বসে গরম কফিতে চুমুক আর টয়ট্রেনে একটা ‘জয় রাইড’, ছোট্ট করে ঘুম পর্যন্ত... মন বলবে, ‘মেজাজটাই তো আসল রাজা’।

নিড্‌ল্‌ পাইনের পাতা থেকে ঝরে পড়া জল।

সন্ধ্যা নামল। ধুপি গাছের উঁচু মাথাগুলো থেকে ঝুলে থাকা মসগুলোকে কী অদ্ভুত দেখাচ্ছে। মেঘেরা হাওয়ার সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে জঙ্গলের বুকে মুখ রাখল। কালপুরুষ আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আকাশে। জঙ্গলের বুক ভেসে যেতে থাকল মেঘেদের অভিমানে।

আলো–ছায়ায়।

আরও পড়ুন: ঘন সবুজ সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অপেক্ষায় টেমি চা-বাগান​

কী ভাবে যাবেন: কলকাতা-এনজেপি/শিলিগুড়ি (ট্রেন/বাসে)। সেখান থেকে শেয়ার গাড়িতে টুং, সোনাদা হয়ে ঘুম। ঘুম থেকেই লেপচাজগৎ হোমস্টে-র গাড়ি তুলে নেবে। অথবা আগে বলে রাখলে এনজেপি থেকেই সরাসরি গাড়িতে।

কখন যাবেন: অক্টোবর থেকে এপ্রিল ভাল সময়। শীতে কিন্তু বেশ ঠান্ডা থাকে।

পাইনের জঙ্গলে।

কোথায় থাকবেন ও যোগাযোগ:

১) পাখরিন হোমস্টে (ইমেল: pakhrin@lepchajagathomestay.com ফোন: ৯১-৯০৫১০৬৪৫১০)

২) পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের বাংলো

(ফোন : ০৩৩-২৩৩৫০০৬৪, ০৩৩-২৩৩৫৮৩২০, মোবাইল: ৯১-৭৬০৪০৪৪৪৭৯)

৩) ট্রাভেল মঙ্ক, কলকাতা (ফোন: ০৮৯০২২৩২৫৫৯)

৪) কাঞ্চনকন্যা হোমস্টে (www.haumrohome.com)

ছবি: লেখক

Lepcha Jagat Travel Tourism Holiday Kangchenjunga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy