শ্বেতশুভ্র পাহাড়চূড়া, উত্তাল সমুদ্র, আকাশচুম্বী পাইন-ওক নেই। তবু কেরলের ওয়েনাড়ের হাতছানি এড়ানো বড় কঠিন। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার রূপ, পাহাড়ের ঢালে বেড়ে ওঠা মশলার বাগিচা, স্থানীয় সংস্কৃতি, বন্যপ্রাণ, ইতিহাস নিয়েই তার ব্যপ্তি। ওয়েনাড় যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। যেখানে শিল্পী নিখুঁত দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড়সারির সৌন্দর্য। মেঘ-কুয়াশা সেই ছবিকে করে তুলেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত।
মধুচন্দ্রিমা যাপনে দেশের মধ্যে গোয়া, হিমাচল প্রদেশ, কাশ্মীরের স্থানই সর্বাগ্রে। পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ংঙের পাশাপাশি সিকিমও থাকে তালিকায়। তবে পুরী, গোয়া, বিশাখাপত্তনমের মতো সৈকত শহর ছেড়ে একটু অন্য ভাবেও ভেবে দেখতে পারেন। কেরল এমনিতেই খুব সুন্দর। তবে তিরুঅনন্তপুরম, মুন্নার, অ্যালেপ্পি, ভারকালা সৈকত নিয়ে যতটা মাতামাতি, ততটা লোকে ওয়েনাড় নিয়ে ভাবেন না। তবে ঝর্না, হ্রদ, পুরনো গুহা, মন্দিরে সজ্জিত এই স্থানও কম চিত্তাকর্ষক নয়।
সুচিপাড়া জলপ্রপাত
ওয়েনাড়ে রয়েছে সুচিপাড়া জলপ্রপাত। ছবি:সংগৃহীত।
ঘন অরণ্যের মধ্যে পাহাড়ের মাথা থেকে নেমে আসছে দুধসাদা জলপ্রপাত। নীচে পাথুরে জায়গায় জলপ্রপাতের জল পড়ে ফেনার সৃষ্টি হচ্ছে। জলকণা ছিটকে যাচ্ছে দূর পর্যন্ত। ওয়েনাড়ের সূচিপাড়া জলপ্রপাতের রূপ মোহিত করার মতোই। সেই রূপের সাক্ষী থাকতে বনের মধ্যে দিয়ে নামতে হয়ে পাহাড়ের নীচে। বাঁধানো রাস্তা এবং সিঁড়ি নেমে গিয়েছে। বর্ষার জলে পুষ্ট জলপ্রপাতের উচ্ছ্বলতা বেড়ে যায়। ওয়েনাড়ের ভেল্লারিমালায় রয়েছে স্থানটি। ওয়েনাড় শহর থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার।
পুকোড হ্রদ
পুকোড হ্রদে নৌ বিহার করতে পারেন সঙ্গীর সঙ্গে। ছবি:সংগৃহীত।
ওয়েনাড়ের কালপেট্টা শহরে পাহাড় এবং অরণ্য ঘেরা পুকোডা লেকও কিন্তু দারুণ সুন্দর। মধুচন্দ্রিমার জন্য এই স্থানও কম রোম্যান্টিক নয়। প্যাডেল বোটে চেপে হ্রদ ভ্রমণের সুযোগ থাকে। আশপাশ বেশ নির্জন। কাছাকাছি গ্রামগুলিও পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন। কাছেই রয়েছে মশলার বাজার, হস্তশিল্পের দোকান।
বানাসুরা সাগর ড্যাম
বানাসুরা সাগর ড্যাম। ছবি: সংগৃহীত।
পাহাড় ঘেরা এই হ্রদ দেখলে ছোটখাটো সমুদ্র বলেও ভ্রম হতে পারে। কাবিনির শাখানদী করমনাথোডুতে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে সুবিশাল জলাধার। স্পিডবোটে চেপে জলাধার ঘোরাটা রোমাঞ্চক, রোম্যান্টিক— দুই-ই হতে পারে। প্রবল বর্ষায় বা আবহাওয়া খারাপ থাকলে অবশ্য স্পিডবোট বন্ধ থাকতে পারে। তবে সৌন্দর্য উপভোগে কোনও অসুবিধা হবে না।
ইডাক্কাল গুহা
ইডাক্কাল গুহায় রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র। ছবি:সংগৃহীত।
বাঁধানো সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি শেষ হলে পাথুরে পথ। সেই পথেই পৌঁছনো যায় ইডাক্কাল গুহায়। ভিতরে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র। ঘন বনের মধ্যে বহু পুরনো গুহা। ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে ওয়েনাড় ভ্রমণে এটিও রাখুন ভ্রমণ তালিকায়। নিওলিথিক যুগের নিদর্শন রয়েছে এখানে।
তিরুনেল্লি মন্দির
তিরুনেল্লি মন্দির। ছবি:সংগৃহীত।
গাছগাছালির ভিতরে রয়েছে তিরুনেল্লি মন্দির। উন্মুক্ত প্রাকৃতিক অঙ্গনে বিচ্ছন্ন ভাবে রয়েছে মন্দির। বেশ পুরনো। মন্দিরগাত্রে প্রস্তর মূর্তি খোদিত। অত্যন্ত পুরনো এই মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীও নজর কাড়ে। ব্রহ্মগিরি পাহাড়ের কোলে তৈরি মন্দিরটির উপাস্য দেবতা বিষ্ণু।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে যাবেন?
ওয়েনাড়ে রয়েছে কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা কোঝিকোড় বিমানবন্দর নামে পরিচিত। কাছের রেলস্টেশন হল কোঝিকোড়। দূরত্ব নির্ভর করবে ওয়েনাড়ের কোথায় যাবেন, তার উপর।