তিনি ভারতের বিত্তশালী শিল্পপতি পরিবারের বধূ। ধনকুবের রিলায়্যান্স কর্তা মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা অম্বানী। তিনি কী পরেন, কী খান, কোথায় যান, কী বলেন— তার সবটাই চর্চিত। অম্বানী পরিবার নিয়ে জনমানসে আগ্রহও কম নেই। এ বার অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে ক্যামেরাবন্দি হলেন মুকেশ-ঘরনি নীতা অম্বানী।
পঞ্জাবের অন্যতম আর্কষণ অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। ওয়াঘা সীমান্ত ঘেঁষা শিখদের তীর্থভূমি এই স্থান। মন্দিরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন কোনও কোনও দিন লক্ষাধিক পুণ্যার্থী সমাগম হয় সেই স্থানে। তাঁদের মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এমন জায়গায় যে নীতা অম্বানীও যাবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী! উল্লেখ্য, বছরের বিভিন্ন সময়েই ভারতের একাধিক তীর্থক্ষেত্রে দেখা যায় অম্বানী পরিবারের সদস্যদের।

স্বর্ণমন্দিরে নীতা অম্বানী। ছবি: সংগৃহীত।
নীতা অম্বানীর সাজগোজ, পোশাকচয়ন, পরিধানের কায়দা— সমস্ত বিষয়েই নজর থাকে ফটোশিকারি থেকে ফ্যাশন জগতের লোকজন এবং তার বাইরেও অনেকেরই। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ করতে হলে মাথায় ঢাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পুরুষ হোন বা মহিলা, এটাই সেখানকার নিয়ম। নীতাকে মন্দিরের সামনে দেখা গিয়েছে ডেনিম প্যান্ট এবং টপে। মাথায় ছিল জরির বর্ডার দেওয়া বেগনি রঙের ওড়না।
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির শুধু আধ্যাত্মিক ভূমিই নয়, এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রও। এখনও যদি পঞ্জাব-ওয়াঘা, অমৃতসর ভ্রমণ না হয়ে থাকে তা হলে পরিকল্পনা সেরে নিতে পারেন। শুধু মন্দির নয়, এখানেই রয়েছে ইতিহাসে পড়া জালিয়ানওয়ালা বাগও।
স্বর্ণমন্দির

অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির জলাশয়ের মাঝে। ছবি: সংগৃহীত।
শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র যেন মৈত্রী বন্ধনের অন্যতম উদাহরণ। জাত-পাত-ধর্ম এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ইতিহাস জানায়, শিখদের পঞ্চম গুরু অর্জুন ১৬০১ সালে গড়ে তোলেন আয়তাকার সরোবরের মাঝে এই মন্দির। জনশ্রুতি, এই সরোবরের জল অমৃতের মতোই শুদ্ধ, তাই শহরের নাম হয় অমৃতসর। শোনা যায়, গুরু অর্জুন সিংহ সরোবর সংস্কার করে তার মধ্যিখানে গড়ে তোলেন বিশাল মন্দির। পঞ্জাব কেশরী রঞ্জিত সিংহ সোনার পাতে মুড়ে দিয়েছিলেন ওই বিরাট মন্দিরের গম্বুজ। সেই থেকে মন্দিরের নাম হয় স্বর্ণমন্দির। অনেকে অবশ্য একে ‘দরবার সাহিব’-ও বলে থাকেন।
মন্দিরের ‘দরবার সাহিব’-এ রয়েছে শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ‘শ্রী গুরু গ্রন্থসাহিব’। এখানে কোনও বিগ্রহ নেই। গুরু গোবিন্দ সিংহের সঙ্কলিত হাতে লেখা ‘গ্রন্থসাহিব’কেই এখানে পবিত্র জ্ঞানে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিনরাত চলে নামগান এবং পাঠ। এখানের গাওয়া ঘিয়ের হালুয়া প্রসাদের স্বাদ অমৃততুল্য।
স্বর্ণমন্দিরের অদূরে সরোবরের ধারে সাদা রঙের ভবন অকাল তখত। এখান থেকেই শিখ ধর্মের যাবতীয় নিয়ম-নীতি নির্ধারিত হয়। অকাল তখত-এ রয়েছে শিখগুরুদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।
অমৃতসরের জগদ্বিখ্যাত লঙ্গরখানা অকাল তখতের অদূরে। বিশাল সেই হলঘরে জাতিধর্মনির্বিশেষে হাজারের বেশি মানুষ একসঙ্গে বসে প্রসাদ খেতে পারেন। সারা দিন ধরে চলে এই বিশাল আয়োজন। জালিয়ানওয়ালা বাগ
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির যদি মনকে শান্ত করে দেয়, তা হলে এই জনপদের আর এক স্থল মনে করাবে রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে। ভারতের শাসনক্ষমতা তখন ছিল ইংরেজদের হাতে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন, সে তথ্য সকলেরই জানা। এখনও সেখানে গুলিবর্ষণের চিহ্ন স্পষ্ট। অতীতের রক্তাক্ত ইতিহাস সেখানে জীবন্ত। এখন সেখানে রয়েছে স্মৃতিসৌধ। অমরজ্যোতি, যে দীপ অনির্বাণ।

জালিয়ানওয়ালা বাগের স্মৃতিসৌধ। ছবি:সংগৃহীত।
ওয়াঘা সীমান্ত
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এই ওয়াঘা বর্ডারও পর্যটকদের কাছে দ্রষ্টব্য। অমৃতসর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। বিশাল ফটকের এক দিকে ভারত, অন্য দিকে পাকিস্তান। প্রতি দিন বিকেলে সেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনী প্যারেড করে। সেই প্যারেড দেখার জন্য গ্যালারি করা রয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে কখনও কখনও তা পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
পার্টিশন মিউজ়িয়াম
ভারতের দেশভাগের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাবলি সংক্রান্ত নথি, ছবির সংগ্রহ রয়েছে এই মিউজ়িয়ামে। স্বর্ণমন্দিরের অদূরেই এই সংগ্রহশালার অবস্থান। ভারত থেকে পাকিস্তান তৈরি হওয়া, বাংলাদেশ গঠন-সহ নানা ধরনের তথ্য মিলবে এখানে।
মহারাজা রঞ্জিত সিংহ মিউজ়িয়াম
শিখ সাম্রাজ্যের প্রথম রাজা রঞ্জিত সিংহের ব্যবহার্য অস্ত্র, পোশাক-সহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে তৈরি হয়েছে সংগ্রহশালা। শিখ রাজত্ব, তাদের ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ দলিলও রয়েছে সেখানে।
এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন গোবিন্দগড় ফোর্ট, দুর্গিয়ানা মন্দির-সহ বেশ কিছু জায়গা।
থাকা এবং খাওয়া: পঞ্জাবি খাবারের জনপ্রিয়তা বিশ্ব জুড়ে। নিরামিষ হোক বা আমিষ, অমৃতসরে গেলে কুলচা-ছোলে, লস্যি, লঙ্গরের খাবার খেতে ভুলবেন না। স্বর্ণমন্দিরেও থাকা যায়, তার অদূরে অসংখ্য হোটেল রয়েছে।
কী ভাবে যাবেন ?
অমৃতসরেই রয়েছে বিমানবন্দর। মূল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে। উড়ানে দিল্লি এসে বা চণ্ডীগড় এসে সেখান থেকে গাড়িতেও আসতে পারেন। ট্রেনেও আসা যায়। অমৃতসর জংশন রেলস্টেশন রয়েছে। পাঠানকোট স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়িতেও আসা যাবে। চণ্ডীগড় থেকে সড়কপথে অমৃতসরের দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটারের মতো। যেতে ঘণ্টা ৫-৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পাঠানকোট থেকে দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার।