Advertisement
০৭ মে ২০২৪

টিনটিনের ১৯ বছর পরে নীল আমস্ট্রং চাঁদে পৌঁছন

ত্যাঁত্যাঁ। ফরাসিতে তার নাম এটাই। কিন্তু, বাঙালির কাছে সে অতি আদরের টিনটিন। প্রথম যখন টিনটিনকে হাতে পাই, তখন আমি ক্লাস থ্রি-র ছাত্র। রুদ্ধশ্বাসে ‘বিপ্লবীদের দঙ্গলে’ পড়ে ফেললেও বিপ্লব যে কী বস্তু, তা বোঝার বয়স তখনও হয়নি। তবে, টিনটিন থেকে শুরু করে কুট্টুস, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রোফেসর ক্যালকুলাস আমার মন জয় করে নিতে এক মুহূর্ত করেনি। সেটা নয়ের দশক। তখন দূরদর্শন মানে ‘মালগুড়ি ডেজ’ আর ‘জাঙ্গল বুক’, ক্রিকেট মানে সচিন, গোয়েন্দা বলতে ফেলুদা-কাকাবাবু এবং ম্যাগাজিন বলতে ‘আনন্দমেলা’ আর অ্যাডভেঞ্চার মানে অবশ্যই টিনটিন! বেলজিয়ান সাহেব জর্জ রেমি বা অ্যার্জে-র জনপ্রিয় এই কমিকস-এর জাল কেটে আজও বেরোতে পারিনি।

সৌভিক সামন্ত
ওয়ারশ, পোল্যান্ড শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

ত্যাঁত্যাঁ। ফরাসিতে তার নাম এটাই। কিন্তু, বাঙালির কাছে সে অতি আদরের টিনটিন।

প্রথম যখন টিনটিনকে হাতে পাই, তখন আমি ক্লাস থ্রি-র ছাত্র। রুদ্ধশ্বাসে ‘বিপ্লবীদের দঙ্গলে’ পড়ে ফেললেও বিপ্লব যে কী বস্তু, তা বোঝার বয়স তখনও হয়নি। তবে, টিনটিন থেকে শুরু করে কুট্টুস, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রোফেসর ক্যালকুলাস আমার মন জয় করে নিতে এক মুহূর্ত করেনি। সেটা নয়ের দশক। তখন দূরদর্শন মানে ‘মালগুড়ি ডেজ’ আর ‘জাঙ্গল বুক’, ক্রিকেট মানে সচিন, গোয়েন্দা বলতে ফেলুদা-কাকাবাবু এবং ম্যাগাজিন বলতে ‘আনন্দমেলা’ আর অ্যাডভেঞ্চার মানে অবশ্যই টিনটিন! বেলজিয়ান সাহেব জর্জ রেমি বা অ্যার্জে-র জনপ্রিয় এই কমিকস-এর জাল কেটে আজও বেরোতে পারিনি।

আনন্দমেলা, যেখানে প্রতি সংখ্যায় তখন দু’পাতা করে অ্যার্জে-র লেখা-আঁকা দুঃসাহসিক সব অভিযান প্রকাশিত হত। ধারাবাহিক ভাবে। পরে সেই অংশগুলো কেটে কেটে আস্ত বই বানিয়েছিলাম। এ ভাবেই ছোটবেলা থেকে টিনটিন আর তার অ্যাডভেঞ্চারগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। স্কুল জীবনের পর যাদবপুর-আইআইটি হয়ে পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পোস্ট ডক্টরেট করতে এলাম। এখানে আসার পর প্রথম যে দিন ‘ম্যুসে অ্যার্জে’ সম্পর্কে জানতে পারলাম, সে দিনই ঠিক করে ফেললাম যে টিনটিনের জন্মভূমিতে আমাকে যেতেই হবে! ব্রাসেলস।

হ্যাঁ, ব্রাসেলস। বেলজিয়ামের রাজধানী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখ্য কার্যালয়ও বটে। বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। ব্রাসেলস থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে ‘ম্যুসে অ্যার্জে’ বা অ্যার্জে মিউজিয়াম। পর্যটকদের সবাই যে এখানে আসেন, তেমনটা নয়। কিন্তু, আমার কাছে বেলজিয়াম ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণই ছিল এই মিউজিয়াম। ফেলুদা পড়ার সময় পাঠক মনে সত্যজিতের প্রতি একটা শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালবাসা জন্মায়। টিনটিনপ্রেমীদেরও কি এই অ্যাডভেঞ্চারগুলো পড়ার সময় অ্যার্জের প্রতি সেই টান অনুভূত হয়? সৃষ্টি আর স্রষ্টার মাঝের এই ফাঁকটার প্রধান কারণ হয়তো অ্যার্জেকে আমরা সে ভাবে কখনও চেনার চেষ্টা করিনি। আমার কাছেও অ্যার্জে অচেনা থেকে যেতেন, যদি না এই মিউজিয়ামে আসতাম।

জায়গাটার নাম লুভ্যান-লা-ন্যুভ। ব্রাসেলস নর্ড স্টেশন থেকে ট্রেনে ওটিগনিস। সেখান থেকে ট্রেন পাল্টে লুভ্যান-লা-ন্যুভ। স্টেশন থেকে দশ মিনিট হাঁটলেই অ্যার্জে মিউজিয়াম। প্রবেশমূল্য ৯.৫০ ইউরো। চোদ্দ বছরের নীচে যারা, তাদের জন্য অর্ধেক। মাসের প্রথম রবিবার অবশ্য প্রবেশ অবাধ।

‘ম্যুসে অ্যার্জে’ আর পাঁচটা সংগ্রহশালার থেকে একেবারে আলাদা। অভিনবত্বে তো বটেই! এ ছাড়া আট থেকে আশি সবাইকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাও রয়েছে এই মিউজিয়ামের। প্রথমেই চমক লাগল মিউজিয়ামের টিকিট দেখে। টিকিটের উল্টো পিঠেই রয়েছে বহু পরিচিত টিনটিন কমিকস-এর ছবি। এক একটা টিকিটে এক একটা দৃশ্য। এ ছাড়া পাপোশ, লিফট, সিঁড়ি থেকে শুরু করে দেওয়াল— সর্বত্রই অভিনবত্বের ছাপ। অ্যার্জের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনা, দুর্মূল্য সব ফোটোগ্রাফ, তাঁর আঁকা খসড়া পাণ্ডুলিপি-প্রচ্ছদে সমৃদ্ধ এই মিউজিয়াম। শব্দ, আলো, ভিডিও-র মোড়কে অ্যার্জে এবং তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো এখানে যেন জীবন্ত।

ভদ্রলোকের আসল নাম জর্জ প্রোস্পার রেমি। তবে, ছদ্মনাম ‘অ্যার্জে’তেই তিনি বিশ্বখ্যাত। ১৯০৭-এ ব্রাসেলস-এর শহরতলি এটারবিকে তাঁর জন্ম। গত শতকের দুয়ের দশকের শেষ ভাগে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। সেই সময়ের সেরা কার্টুনিস্ট হিসেবে আমৃত্যু (১৯৮৩) অবিরত কাজ করে গিয়েছেন। টিনটিন তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি দিলেও অ্যার্জের সৃষ্টি করা প্রথম কমিক চরিত্র কিন্তু ‘টোটোন’। এ ছাড়া দু’রাস্তার বিচ্ছুকে নিয়ে লেখা ‘কুইক ও ফ্লুপকে’ এবং দুই ভাই-বোন ও তাদের পোষা গরিলার বাচ্চা নিয়ে ‘জো, জেট ও জোকো’ সিরিজও বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য চরিত্র জন্ম নিয়েছে অ্যার্জের পেনসিলে, যেগুলোর নিদর্শন রয়েছে এই মিউজিয়ামে।


টিকিটের সোজা দিক (বাঁ দিকে) এবং উল্টো পিঠ (ডান দিকে)।

এক দিকে মিউজিয়াম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, অন্য দিকে টিনটিনের রচনা— এই দুয়ের ভিত্তিতে অ্যার্জের কর্মজীবনকে মোটামুটি তিনটে ভাগে ভাগ করতে পারি।

প্রথম ভাগ (১৯২৯–৩৯): ‘লা পেতিত ভিনতিয়েম’ পত্রিকায় সাদা-কালো ধারাবাহিক হিসেবে টিনটিনের আত্মপ্রকাশ। পাশাপাশি খুব দ্রুত তাঁর বিখ্যাত হয়ে ওঠা।

দ্বিতীয় ভাগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানি অধিকৃত বেলজিয়ামের সবচেয়ে বড় দৈনিক ‘লা সিওর’-এ অ্যার্জের যোগদান। এখানেও টিনটিনের ধারাবাহিক প্রকাশ।

শেষ ভাগ: যুদ্ধ পরবর্তী নাৎসিমুক্ত বেলজিয়ামে ‘টিনটিন’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশ। এখানে তাঁর দু’পাতার টিনটিন ধারাবাহিক ছাড়াও অন্যান্য লেখকের কমিকস ও গল্প প্রকাশিত হত।

জনপ্রিয়তার কারণে প্রায় প্রথম থেকেই ধারাবাহিকের পাশাপাশি টিনটিনের বইও প্রকাশিত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রকাশকের অনুপ্রেরণায় অ্যার্জে টিনটিনকে রঙিন করে তোলেন। আবার এই সময়েই কাগজের অভাবে টিনটিনের বই ১২০ পৃষ্ঠা থেকে কমিয়ে ৬২ পৃষ্ঠা করা হয়। তখন অ্যার্জে তাঁর পূর্ববর্তী টিনটিনের গল্পগুলোও ৬২ পাতায় নামিয়ে আনেন। অর্থাৎ আমরা যে ‘আমেরিকায় টিনটিন’, ‘ফারাও-এর চুরুট’, ‘কৃষ্ণদ্বীপের রহস্য’ ইত্যাদি ৬২ পাতার গল্পগুলো পড়ি, সেগুলো আসলে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত সংস্করণ। আসল সংস্করণগুলো পড়তে গেলে এই ‘ম্যুসে অ্যার্জে’তে আসতে হবে। মিউজিয়ামে সংরক্ষিত অ্যার্জের একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারি, ১৯৩৪-এ লেখা ‘নীলকমল’ (দ্য ব্লু লোটাস) গল্পটিকে অ্যার্জে সন্ধি ক্ষণ বা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই গল্প থেকেই তিনি সঠিক, বিস্তারিত এবং বাস্তবানুগ বিবরণ চিত্রিত করতে বিশেষ মনযোগী হন।

টিনটিনের পাঠক মাত্রেই জানেন, অ্যার্জের আঁকা প্রতিটি দৃশ্য কতটা বিস্তারিত ও নিখুঁত! শুধুমাত্র এই কারণে, কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন সময়ে টিনটিনের স্রষ্টার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। অ্যার্জে জীবদ্দশায় ২৩টি সম্পূর্ণ টিনটিন-অ্যাডভেঞ্চার লেখেন। তাঁর ২৪তম রচনাটি অসম্পূর্ণ ছিল। কানাডার কার্টুনিস্ট ভেস রোডিয়ার এবং অন্য অনেকের সহায়তায় বহু আইনি জটিলতার পর সেটি ২০০৪-এ ‘বর্ণশিল্প রহস্য’ (টিনটিন অ্যান্ড আল্ফ-আর্ট) নামে প্রকাশ পায়। আজও দুনিয়া জুড়ে মোট ১১২টি ভাষায় টিনটিনের কমিকস প্রকাশিত হয়। বইয়ের পাতার বাইরে রুপোলি পর্দাতেও টিনটিন সমান ভাবে জনপ্রিয়।

তাঁর এই সৃষ্টিগুলির পেছনে কী কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় ছিল, অ্যার্জে মিউজিয়ামে রাখা পাণ্ডুলিপিগুলো দেখলে তা বোঝা যায়। কমিকসের প্রতিটি দৃশ্য অ্যার্জে প্রথমে পেনসিল দিয়ে খসড়া করতেন। পরে ইন্ডিয়ান ইন্‌ক দিয়ে ড্রয়িং পেপারের উপর দৃশ্যটি নিখুঁত ভাবে আঁকতেন। সেই ছবির প্রিন্ট নিয়ে, তার প্রুফ রিডিং-এর পর তাতে জলরঙ করতেন। সব শেষে বসাতেন সংলাপ। কোনও অ্যাডভেঞ্চার রচনার আগে তিনি রীতিমতো ক্ষেত্র সমীক্ষা বা ফিল্ড স্টাডি করতেন। রেফারেন্স হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন সমসাময়িক বিভিন্ন ফোটোগ্রাফ। কখনও কখনও লেখার আগে কাউকে পাঠিয়ে বা নিজে গিয়ে বিভিন্ন জায়গার ফোটো তুলে আনতেন।

এই মিউজিয়ামে রাখা আছে সেই সময়ের তিব্বত, মিশরের দুষ্প্রাপ্য কিছু ফোটোগ্রাফ। যে দৃশ্যগুলোর প্রতিরূপ আমরা টিনটিনের বিভিন্ন গল্পে পাই। তিব্বত-মিশরের পাশাপাশি ১৯৪২-এ তোলা দিল্লির কুতুবমিনার, লালকেল্লার ছবিও আছে। জয়পুরের রাজা হাতিতে চড়ে প্রজাদের সঙ্গে মিছিলে বেরিয়েছেন, আছে সেই ছবিও। এই দৃশ্যগুলো আমরা পরে দেখতে পাই ‘তিব্বতে টিনটিন’ এবং ‘ফারাও-এর চুরুট’-এর শেষ দৃশ্যে। বিভিন্ন বই এমনকী সিনেমার দৃশ্য থেকেও অ্যার্জে তাঁর গল্পের প্রেরণা পেতেন। জুলে ভার্নের ‘অ্যারাউন্ড দ্য মুন’ থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার ফসলই ‘চন্দ্রলোকে অভিযান’ এবং ‘চাঁদে টিনটিন’ সিরিজটি। অ্যার্জে মিউজিয়ামে তৎকালীন কিছু সিনেমার দৃশ্য সংরক্ষিত আছে, যেগুলো টিনটিনের বিভিন্ন গল্পে দেখা যায়।


‘ম্যুসে অ্যার্জে’

অ্যার্জের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চ্যাং চোঙরেন। অ্যার্জের সঙ্গে তাঁর একটা ছবি রাখা আছে এই মিউজিয়ামে। তিনি চিন থেকে পড়াশোনা করতে ব্রাসেলস-এ এসেছিলেন তিনের দশকের শুরুতে। চ্যাং বিভিন্ন সময়ে অ্যার্জেকে বিভিন্ন ভাবে অনুপ্রেরনা যোগাতেন। অ্যার্জে এই চ্যাং চরিত্রটিকে ‘নীলকমল’ ও ‘তিব্বতে টিনটিন’-এ চিত্রিত করেছেন। অ্যার্জের ভীষণ প্রিয় অ্যাডভেঞ্চার ‘তিব্বতে টিনটিন’-এ আমরা দেখতে পাই, টিনটিন তার প্রিয় বন্ধু চ্যাং-এর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। এখানে কোনও ভাবে স্রষ্টা যেন তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। শেষ জীবনে অ্যার্জে তাঁর হারিয়ে যাওয়া পুরোনো বন্ধুকে অনেক খুঁজেছেন। কিন্তু, টিনটিনের মতো ভাগ্য তাঁর ছিল না!

টিনটিনকে বইয়ের পাতা থেকে রুপোলি পর্দায় আনতে চেয়েছিলেন অ্যার্জে নিজেই। সে কারণে পাঁচের দশকের শুরুতে নিজের বাড়িতেই ‘স্টুডিও অ্যার্জে’ খোলেন। অ্যার্জে ও তাঁর দলের বানানো সেই সময়কার বিভিন্ন মডেল আজও সংরক্ষিত আছে এই মিউজিয়ামে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কানভাঙা মূর্তি’-র আরামবায়া উপজাতির বিগ্রহ, ‘ওটোকারের রাজদন্ড’-এর রাজদন্ড, ‘বোম্বেটে জাহাজ’-এর জাহাজ, ‘লাল বোম্বেটের গুপ্তধন’-এর হাঙররূপী ডুবোজাহাজ ইত্যাদি।

‘চাঁদে টিনটিন’ সিরিজের রকেটটার একটা চার ফুটের মডেল অ্যার্জে বানিয়েছিলেন। সেটা যদিও বানানো হয়েছিল একটি অ্যানিমেশন কোম্পানির জন্য। রকেটের প্রস্থচ্ছেদে দেখা যায়, কী অসম্ভব নিখুঁত ভাবে তিনি তাঁর কমিকস-এ রকেটের অন্দরমহল চিত্রিত করেছিলেন। একই নৈপুণ্য দিয়ে টিম-অ্যার্জে বানিয়েছিল এই মডেলটি। এই চন্দ্র-সিরিজ থেকে বোঝা যায় অ্যার্জে তাঁর সময়ের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন! সিরিজটা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সাল থেকে। অর্থাৎ ক্যাপ্টেন হ্যাডকের হুইস্কি খেয়ে মহাশূন্যে ভ্রমণের ১১ বছর পরে ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশ পাড়ি দেন। আর টিনটিন চাঁদে পা দেওয়ার ১৯ বছর পরে নীল আমস্ট্রং চাঁদে পৌঁছন!

অ্যার্জে শপ ছাড়া মিউজিয়াম দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এখানে অ্যার্জের বিভিন্ন স্মারক পাওয়া যায়। টিনটিন সিরিজের চরিত্রগুলোর অবিকল মূর্তি বা রেপ্লিকা থেকে শুরু করে ‘চাঁদে টিনটিন’-এর রকেটের মডেল— লোভনীয় সব জিনিসের সম্ভার দোকানটি। এ রকম একটা মিউজিয়ামে বেশ কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পর যখন ফেরার ট্রেনে উঠলাম তখন মনে হল, আমার প্রিয়তম চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে তার স্রষ্টাও আমার হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।

লেখকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা। আইআইটি কানপুরে পিএইচ.ডি. শেষ করে বর্তমানে পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে গবেষণারত (পোস্ট ডক্টরেট)। শখ ফোটোগ্রাফি ও নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE