Advertisement
E-Paper

শুনানিকেন্দ্রে গিয়ে হয়রান হতে হচ্ছে বয়স্কদেরও! ভোটার-নথি যাচাইয়ের প্রথম দিনেই কমিশন বিদ্ধ হল ‘অব্যবস্থার’ অভিযোগে

৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের যাতে বাড়ি গিয়ে শুনানি হয়, কমিশনকে সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। সূত্রের খবর, তাতে সম্মতি দেয় কমিশনও। কিন্তু শুনানি পর্বের প্রথম দিনেই উঠে এল অব্যবস্থার অভিযোগ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৫৬
শনিবার হুগলি জেলায় এসআইআর-এর শুনানিকক্ষে যাচ্ছেন বৃদ্ধা।

শনিবার হুগলি জেলায় এসআইআর-এর শুনানিকক্ষে যাচ্ছেন বৃদ্ধা। — নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে ভোটারদের শুনানি পর্বের প্রথম দিনেই বিক্ষিপ্ত অভিযোগ উঠে এল বিভিন্ন জেলায়। অভিযোগ উঠল, শুনানিতে গিয়ে বিবিধ ভাবে হয়রান হচ্ছেন ভোটারেরা। কোথাও শুনানিকেন্দ্র করা হয়েছে দোতলায়, কোথাও আবার তিন তলায়। সেই সিঁড়ি ভেঙেই বয়স্ক ভোটারদের যেতে হচ্ছে শুনানির টেবিলে। তা নিয়ে অসন্তোষের ছবিও ধরা পড়ল।

শনিবার থেকে রাজ্যে ভোটারদের শুনানি শুরু করেছে কমিশন। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে শুরু হয়েছে শুনানি। তবে প্রথম দিনেই বিবিধ প্রশ্নের মুখে পড়ল ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর শুনানি প্রক্রিয়া। যেমন হুগলি জেলায় একটি শুনানিকেন্দ্র খোলা হয়েছে চুঁচুড়া মহকুমাশাসকের দফতরে। দোতলা ভবন। তবে বেশ পুরনো। নামে দোতলা ভবন হলেও উচ্চতায় এখনকার সময়ের প্রায় তিনতলা ভবনের সমান। রয়েছে খাঁড়া সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়েই উপরের তলে গিয়ে শুনানিকক্ষে পৌঁছোতে হচ্ছে ভোটারদের। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বয়স্ক ভোটারেরা। শুনানিকক্ষে পৌঁছোতে গিয়ে হাঁপ ধরে যাচ্ছে অনেক প্রবীণ ভোটারদের। শুনানির জন্য ডাক পাওয়া ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, “এই হয়রানির তো কোনও মানে হয় না!”

বয়স্ক ভোটারদের কথা বিবেচনা করে আগেই নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। এখন ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের বাড়ি গিয়েই ভোট নিয়ে আসা হয়। সে ক্ষেত্রে শুনানি পর্বেও যাতে ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের বাড়ি গিয়ে শুনানি হয়, সেই প্রস্তাব দেন তিনি কমিশনকে। তাতে সম্মতি দেয় কমিশনও। একই সঙ্গে যাঁরা অসুস্থ, শুনানিকেন্দ্রে যাওয়ার অবস্থায় নেই— এমন ভোটারদের বিষয়েও ক্ষেত্রবিশেষে বিবেচনা করে দেখার কথা ছিল। তবে শনিবার দেখা গেল বিভিন্ন জেলায় শুনানিকেন্দ্রে ছুটতে হয়েছে প্রবীণদেরও।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় মহকুমাশাসকের দফতরে শুনানিকেন্দ্র খোলা হয়েছে। দেখা গেল, হুইল চেয়ারে বসে সেখানে হাজির হয়েছেন এক প্রাক্তন সেনাকর্মীও। দাবি করা হচ্ছে, বিমলাচরণ পাঠক নামে ওই প্রাক্তন সেনাকর্মীর বয়স ৮৮ বছর। কমিশন আগে থেকেই প্রবীণদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কেন এমনটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।

এ বিষয়ে কাটোয়ার মহকুমাশাসক অনির্বাণ বসু বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁর বয়সজনিত শারীরিক সমস্যার কথা আমাদের আগে থেকে কিছু জানাননি। বৃদ্ধ শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য নিজেই এ দিন হুইল চেয়ারে চেপে আমার অফিসে চলে এসে লাইন অপেক্ষা করছিলেন। এইআরও এবং ওই বৃদ্ধের বুথের বিএলও তাঁকে লাইনে দেখেই আমাকে জানান। বৃদ্ধের কাছ থেকে যতটুকু যা জানার এবং নথিপত্র নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে তাঁকে দ্রত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

শুধু হুগলি বা পূর্ব বর্ধমানেই নয়, একই অভিযোগ উঠে এসেছে হাওড়াতেও। বৃদ্ধ বয়সেও অনেক ভোটারকে শুনানিকেন্দ্রে ছুটতে হচ্ছে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। উত্তর হাওড়া বিধানসভা এলাকায় প্রাণীসম্পদ বিকাশকেন্দ্রে একটি শুনানিকেন্দ্র হয়েছে। সেখানে শুনানিকক্ষ রয়েছে তিন তলায়। বয়স্ক ভোটারদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সেখানেও। অনেকে অসুস্থ ভোটারও রয়েছেন। তাঁদেরও তিন তলার ওঠানামা করতে হচ্ছে।

এ নিয়ে শুনানিকেন্দ্রে গিয়ে কমিশন নিযুক্ত আধিকারিকদের সঙ্গে একপ্রস্থ তর্কবিতর্কে জড়ান উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। বয়স্ক এবং অসুস্থদেরও তিন তলায় কেন তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন প্রবীণ এবং অসুস্থদের জন্য একতলায় শুনানির ব্যবস্থা করা হয়নি, তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিধায়ক। এই নিয়ে তর্কাতর্কির পরে অবশ্য ভবনের একতলায় শুনানির ব্যবস্থা করা হয়।

হাওড়ায় শুনানির জন্য অপেক্ষো বৃদ্ধ-বৃদ্ধার।

হাওড়ায় শুনানির জন্য অপেক্ষো বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। — নিজস্ব চিত্র।

এ ছাড়া কী কী নথি নিয়ে যেতে হবে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ায় ভোটারদের একাংশের মধ্যে। কেউ কেউ অভিযোগ তুললেন, কমিশনের পাঠানো নোটিসের প্রতিলিপি নিয়ে যেতে হবে, এমনটা আগে বলা হয়নি। তবে শুনানিকেন্দ্রে ওই নোটিসের প্রতিলিপি ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের। শুনানিকেন্দ্রগুলিতে প্রবীণদের জন্য কোনও বসার জায়গা করা হয়নি, এমন কথাও শোনা গেল অনেকের মুখে। দিনভর এমনই বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত অব্যবস্থার অভিযোগ উঠে এল শুনানিপর্বে।

আসানসোলে উত্তেজনা

এসআইআর-এর কাজ ঘিরে শনিবার উত্তেজনা ছড়ায় পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে। তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাময়িক ভাবে শুনানিপ্রক্রিয়াও স্থগিত থাকে আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের চেলিডাঙা মনিমালা গার্লস হাই স্কুলের শুনানিকেন্দ্রে। ঘটনার খবর পেয়ে জেলাশাসকও পৌঁছে যান সেখানে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশবাহিনীও। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার শুরু হয় শুনানি পর্ব।

শুনানিকক্ষে ‘হম্বিতম্বি’

শুনানিপর্বে কী কী নথি গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে আগেই স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তার পরেও নথি ঘিরে গোলমাল পিছু ছাড়ল না শুনানির প্রথম দিনে। পূর্ব বর্ধমানে জেলাশাসকের দফতরে শুনানি চলাকালীন আচমকাই সেখানে ঢুকে পড়েন বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। ভোটারের মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডকে কেন মান্যতা দেওয়া হবে না, তা নিয়ে একপ্রকার হম্বিতম্বিই শুরু করে দেন তিনি। কমিশন নিযুক্ত আধিকারিকদের ভূমিকাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিধায়ক। এ বিষয়ে জেলাশাসক আয়েশা রানীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিধায়কের এমন কাণ্ডে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে স্থানীয় বিজেপি শিবির। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের দাবি, শাসকদল চাপে পড়ে কমিশনকে ভয় দেখাচ্ছে। অন্য দিকে তৃণমূল শিবিরের পাল্টা দাবি, সাধারণ মানুষের স্বার্থে অন্যায় হলে প্রতিবাদ করাই জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব।

কাকলির পরিবারকে শুনানিতে তলব

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘অকারণে হেনস্থা’র অভিযোগ তুলেছেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলী ঘোষ দস্তিদার। তাঁর পরিবারের সদস্যদের এসআইআর-এর শুনানিতে তলব করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাংসদ। নির্বাচন কমিশনের নোটিস পেয়েছেন কাকলির নবতিপর মা ইরা মিত্র-সহ চার জন। কাকলির মা এবং বোন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামের ভোটার। তাঁর দুই পুত্র বিশ্বনাথ এবং বৈদ্যনাথ পেশায় চিকিৎসক। তাঁরা কলকাতার ভোটার। কেন এসআইআর-এর শুনানিতে তাঁদের ডাকা হল, নোটিসে কী কারণ উল্লেখ করেছে কমিশন, তা খোলসা করেননি কাকলি। কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘‘ওরা তো যাকে ইচ্ছা বাদ দিতে চাইছে। সেই কারণেই এ ভাবে ডাকা হচ্ছে।” এই নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতেই শনিবার রাতে কমিশন জানিয়ে দেয়, সাংসদের মা-কে শুনানির জন্য যেতে হবে না। তিনি চাইলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে শুনানি করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

বিএলএ-র মৃত্যু

শনিবার হাওড়ার নিশ্চিন্দায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তৃণমূলের এক বুথস্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-এর। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ নিশ্চিন্দা থানা এলাকায় মুম্বই রোড ও দিল্লি রোডের সংযোগস্থলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতের নাম চন্দন সরকার (৩৯)। তিনি ডোমজুড় বিধানসভার বালি-জগাছা ব্লকের নিশ্চিন্দার ১৮৬ নম্বর বুথের বিএলএ-২ হিসেবে কাজ করছিলেন। পাশাপাশি ওই এলাকায় তিনি তৃণমূলের বুথ সভাপতিও ছিলেন। চন্দনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকপ্রকাশ করেছেন ডোমজুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষও।

SIR Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy