২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, অথচ এ বারের এসআইআরের শুনানিপর্বে যদি ডাক পড়ে কোনও ভোটারের, তবে কী করবেন তাঁরা? শনিবার তা জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে রাজ্যের সকল জেলাশাসককে চিঠি পাঠিয়ে কী করণীয় তা জানাল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। একই সঙ্গে তারা ‘ত্রুটি’র কথাও মেনে নিয়েছে। জানিয়েছে, যদি ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও শুনানিতে ডাক পড়লে যাওয়ার প্রয়োজন নেই!
২০০২ সালের এসআইআর তালিকায় নাম ছিল। চলতি এসআইআর পর্বে বাড়িতে এনুমারেশন ফর্মও বিলি করেছেন বুথস্তরের আধিকারিকেরা (বিএলও)। সেখানে ২০০২ সালের তথ্য ভরে জমা করার পরেও এসআইআরের শুনানিতে যাওয়ার নোটিস পেয়েছেন বহু ভোটার! এমন অভিযোগও উঠেছে। তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। শাসক দল তৃণমূল তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার পরেই কমিশনের এ সংক্রান্ত চিঠি গেল জেলাশাসকদের কাছে।
সিইও দফতর জানিয়েছে, বিএলও অ্যাপে ‘নো ম্যাপিং’ দেখাচ্ছে, অথচ ২০০২ সালের তালিকায় নাম ছিল, এমন অনেকে রয়েছেন! ‘নো ম্যাপিং’ অর্থাৎ, ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে যে ভোটারদের কোনও ‘ম্যাপিং’ করা যায়নি তেমন ভোটার। কমিশনের দাবি, কম্পিউটার বা মোবাইল অ্যাপে ভোটাদের তথ্য সঠিক ভাবে ধরা না-পড়ায় ওই সমস্যা দেখা গিয়েছে। এই গরমিলে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কোনও দোষ নেই। এ ধরনের সমস্যা সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত!
কমিশন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভোটারদের শুনানিতে ডাকা হবে না। এমনকি নোটিস পাঠানোও হবে না। যদি এমন কোনও ভোটার শুনানির নোটিস পান, তবে তাঁদের শুনানিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁদের শুধু পুরনো ভোটার তালিকার তথ্য দিলেই হবে। জেলাশাসকদের পাঠানো চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার কাগজ দেখে সেই তথ্য জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (ডিইও) যাচাই করবেন।
আরও পড়ুন:
শুধু ডিইও নন, দায়িত্ব বর্তাবে ইআরও বা এইআরও-এর উপরও। কমিশন জানিয়েছে, তাঁরাই যাচাই করে দরকারি কাগজ ওয়েবসাইটে আপলোড করে বিষয়টা মিটিয়ে দেবেন। সিইও আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ওই সব ভোটারদের বাড়িতে যেতে পারেন বিএলও। তিনি গিয়ে ভোটারের সঙ্গে ছবি তুলতে পারেন। পরে সেই ছবি অনলাইনে আপলোড করা হবে। প্রমাণ রাখতেই এই ছবি আপলোড করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তারা স্পষ্ট করেছে, কেউ যদি অভিযোগ করেন বা কোনও ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকে তবেই তাঁকে ডাকা হবে শুনানির জন্য।
রাজ্যে ভোটারদের খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে এসআইআর-এর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। শুনানির জন্য ভোটারদের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। এই অবস্থায় গত সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরে দলের বুথস্তরের এজেন্টদের নিয়ে সভা করেছিলেন মমতা। সেই সভা থেকে তিনি জানান, ২০০২ সালে কোনও ভোটারের যে ঠিকানা ছিল, এখন সেই ঠিকানা বদলে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই বিষয়গুলি বিবেচনা না করেই ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। মমতার দাবি, ‘‘বাস্তবতার কথা না-মেনে ভুল ম্যাপিং করা হচ্ছে। এটা গ্রেট ব্লান্ডার।’’ এ বার সেই ‘ত্রুটি’র কথা মানল কমিশনও।