Advertisement
E-Paper

নিছক বেড়ানো নয়, যেন রোমাঞ্চযাত্রা! সিকিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান কী ভাবে ঘুরবেন?

২০১৬ সালে ইউনেস্কোর তরফে এই স্বীকৃতি পায় কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান। প্রথম বার ভারতের কোনও স্থান ইউনেস্কোর ‘মিশ্র হেরিটেজ’ তালিকায় জায়গা করে নেয়। কী এর বৈশিষ্ট্য? এখানে দেখারই বা কী আছে?

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৪
ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থলের স্বীকৃতি পেয়েছে সিকিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান।

ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থলের স্বীকৃতি পেয়েছে সিকিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত।

‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি…।’

কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের গহীনে প্রবেশ করলে এ কথাই মনে হতে বাধ্য। চারপাশে পর্বতমালা, পাইনের সারি, ঘন জঙ্গল। তারই মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে পথ। সে পথে পৌঁছনো যায় চেনা-অচেনা ঠিকানায়। কোথাও আবার ঘন অরণ্য প্রাচীর তুলেছে মানব সভ্যতা এবং প্রকৃতির মাঝে।

সিকিম বললেই গ্যাংটক, লাচুং, লাচেনের মাথায় আসে। তবে এ রাজ্যেই রয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রাপ্ত একটি হেরিটেজ সাইট কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি জাতীয় স্বীকৃতি পায় ১৯৭৭ সালে। শুরুতে প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে তার সীমা ছিল। পরবর্তী কালে এর আয়তন বেড়ে হয় ১৭৮৪ বর্গ কিলোমিটার যা সিকিম রাজ্যের ২৬ শতাংশ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং আশপাশের শৃঙ্গ এই উদ্যানের নানা জায়গা থেকে দেখা যায় বলে পর্যটনের দিক থেকেও এই স্থান গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু প্রকৃতি নয়, এই জঙ্গলের সঙ্গে মিশে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংস্কৃতিও। তাঁদের ভাবনা, বিশ্বাস, ধর্ম।

২০১৬ সালে ইউনেস্কোর তরফে এই স্বীকৃতি পায় উদ্যানটি। প্রথম বার ভারতের কোনও স্থান ইউনেস্কোর ‘মিশ্র হেরিটেজ’ তালিকায় জায়গা করে নেয়। কিন্তু কেন?

ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই উদ্যান ঘিরে রয়েছে শ্বেতশুভ্র পর্বতশিখর। তারই মধ্যে দৃশ্যমান বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। জাতীয় উদ্যানের এলাকায় রয়েছে ১৮টি হিমবাহ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেমু। রয়েছে ৭৩টি বরফগলা জলের হ্রদ, যার মধ্যে ১৮টির অবস্থান অনেক বেশি উচ্চতায়। এখানেই বাস রেড পান্ডা, টিবেটিয়ান গ্যাজেল, টিবেটিয়ান উলফ-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর।এই উদ্যান পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। এখানে দেখা মেলে রকমারি রডোডেনড্রন ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের। জঙ্গলে আনাচকানাচে রয়েছে নানা রকম ভেষজ।

তবে শুধু প্রকৃতি নয়। এই জঙ্গলের সঙ্গে মিশে রয়েছে এখাকার প্রাচীন জনজাতি লেপচাদের জীবনযাপন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। এই এলাকায় এমন অনেক হ্রদ রয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের উপাসনার সঙ্গে যুক্ত। এখানে রয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ। এই অরণ্যভূমিকে ঘিরে রয়েছে অনেক গল্পকথাও।

এক দিকে প্রকৃতি, অন্য দিকে এখানকার সংস্কৃতি— এই দুইয়েরই মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। ইউনেস্কোর তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে অনেক পৌরাণিক আখ্যান জড়িয়ে রয়েছে। আর এর চারপাশে রয়েছে সব রকম প্রাকৃতিক উপাদান (হ্রদ, গুহা, নদী)। সিকিমের মানুষ এই সবের পুজো করেন। ওই সব আখ্যান এবং প্রথা বৌদ্ধ বিশ্বাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। বিশেষ এই চরিত্রের জন্য এখানকার উদ্যান বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থলের তালিকায় জায়গা করে নিল।

সিকিমের উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অরণ্যের ব্যপ্তি। রাজধানী গ্যাংটক থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। বিভিন্ন দিক দিয়ে এই অরণ্যে প্রবেশ করা যায়। ইয়াকসম, লাচুং এবং লাচেন থেকে যাওয়া যায় এখানে।

কোথায় ঘুরবেন?

কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের বহু হ্রদেই পা পড়েনি পর্যটকদের। এখানকার বহু এলাকাই লেপচাদের জন্য সংরক্ষিত। বহু জায়গাতেই গাড়ি চলার পথ নেই। এই অরণ্যের গহীনে যেতে হলে, অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য খুঁজতে গেলে ট্রেকিংই ভরসা।

বরফাবৃত পর্বত শৃঙ্গ। গোয়াচালা ট্রেকে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

বরফাবৃত পর্বত শৃঙ্গ। গোয়াচালা ট্রেকে দেখা যায় এমন দৃশ্য। ফাইল চিত্র।

মেনমেচো হ্রদ

পাহাড়ের কোলে এই হ্রদের নামই জানেন না বহু পর্যটক। ছাঙ্গু, বাবা মন্দিরের পর আরও এগোতে হবে এই হ্রদে যেতে গেলে। ছাঙ্গু থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। জঙ্গলের মধ্যে সঙ্কীর্ণ পথ। সেই রাস্তা পার করতে পারলে পৌঁছনো যায় নিসর্গের কোলে। রংপো নদীর জল এই হ্রদের অন্যতম উৎস। গরমে বরফগলা জলও এসে পড়ে এতে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হোক বা বর্ষণমুখর, এই হ্রদের রূপ অবর্ণনীয়। এখানে ট্রাউট মাছ পাওয়া যায়।

মেনমেচো হ্রদ।

মেনমেচো হ্রদ। ছবি সংগৃহীত।

আপার জঙ্গু

সিকিমের মঙ্গন থেকে নদী পেরিয়ে যেতে হয় আপার জঙ্গু। তিস্তার উপরে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু।সেটি হেঁটে পার হওয়ার পর, অন্য পারে আবার গাড়িতে চাপতে হয়। জায়গাটি সংরক্ষিত এলাকা। অনুপতি সাপেক্ষে পর্যটকদের আসার ছাড়পত্র মেলে। গ্যাংটক এবং মঙ্গন থেকে পরিচয়পত্র এবং ছবি দিয়ে সেই ছাড়পত্র পেতে হয়। হোম স্টের মালিকদের বললে, তাঁরা অনুমতির ব্যবস্থা করে দেন। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন লিংজা জলপ্রপাত, লিংডেম উষ্ণ প্রস্রবণ, লিংথেম বৌদ্ধমঠ, টিংভং গ্রাম। অন্তত ৩ রাত থাকলে আপার জঙ্গু ভাল করে ঘুরতে পারবেন।

আপার জঙ্গু।

আপার জঙ্গু। ছবি সংগৃহীত।

গোয়েচালা ট্রেক

দূর থেকে নয়, কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব রূপ কাছ থেকে দেখতে হলে ট্রেকিংই শেষ কথা। গাড়ির রাস্তা শেষ ইয়কসামে। গ্যাংটক থেকে ইয়কসামের দূরত্ব প্রায় ১১৬ কিলোমিটার। পৌঁছনোর পর এখানেই করতে হবে রাত্রিবাস। হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন সিকিমের প্রথম চোগিয়াল রাজার অভিষেকস্থল, কাথ্‌থোগ লেক, দুবদি মনাস্ট্রি ইত্যাদি দর্শনীয় জায়গাগুলি। ট্রেকিংয়ের প্রথম দিনে ইয়কসাম থেকে যেতে হবে সাচেন। দ্বিতীয় দিনে সাচেন থেকে পৌঁছতে হবে ৭ কিলোমিটার দূরবর্তী সোকা-তে। এখানে চোখে পড়বে পান্ডিম, তিনচিনখাং, জোপুনো ইত্যাদি তুষারশৃঙ্গ। জলাশয়ের পাশে আছে ছোট্ট একটি গুম্ফাও। তৃতীয় দিনে ৯ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হবে জোংরি। পরদিন ভোরে জোংরি টপ থেকে যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয়ের দৃশ্য। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, রাথং, কুম্ভকর্ণ, জোপুনো, পান্ডিম সমেত এক বিস্তৃত তুষারশৃঙ্গশ্রেণি এখান থেকে দৃশ্যমান।

গোয়েচালা ট্রেক।

গোয়েচালা ট্রেক। ছবি সংগৃহীত।

গুরুদোংমার হ্রদ

গ্যাংটক থেকে প্রথমে পৌঁছতে হবে ১২৪ কিলোমিটার দূরে লাচেন। সেখানে রাত্রিবাসের পর ভোরে বেরিয়ে পড়তে হয় গুরুদোংমারের উদ্দেশে। গুরুদোংমার হ্রদটি ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। লাদাখের প্যাংগং লেকের (১৪,২৭০ ফুট) চেয়ে অনেক বেশি উঁচুতে এই হ্রদ। গুরুদোংমার যাওয়ার জন্য অনুমতি লাগে। গ্যাংটকে পৌঁছে সেখান থেকে গুরুদোংমার যাওয়ার পথে পারমিট করিয়ে নিতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় নথি অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।

গুরুদোংমার হ্রদ।

গুরুদোংমার হ্রদ। ফাইল চিত্র।

কী ভাবে যাবেন?

সড়ক, বিমান এবং রেলপথ, তিন ভাবেই যাওয়া যায়। বিমানে গেলে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে এসে গাড়ি নিয়ে পৌঁছতে হবে সিকিমে। ট্রেনে গেলে এনজেপি পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়িতে সিকিমের যে কোনও স্থানে পৌঁছনো যায়। গাড়িতেও আসা যায় যে কোনও প্রান্ত থেকে।

কোথায় থাকবেন?

এই সমস্ত জায়গায় হাতগোনা হোম স্টে রয়েছে। গ্যাংটকে হোটেল মিললেও জঙ্গু, লাচেন বা লাচুঙে হোম স্টে-ই ভরসা।

Treking Gurudongmar Lake Offbeat Travel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy