Advertisement
E-Paper

ছোট চা বাগানে এ বার পর্যটন

হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, চিকেন রেজালা কিংবা বাসমতী চালের ভাত, ভেটকি পাতুরিবাদশাহি খানা আর বাঙালি ব্যাঞ্জনের এমন যুগলবন্দি মিলবে এ বার শহর থেকে দূরে চা বাগানের নিরিবিলিতে। মন না চাইলে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়েও কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েক ঘণ্টা। শারদোত্‌সবে ভোজন রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তি দিয়েই চা পর্যটনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে গৌরীহাট সংলগ্ন এলাকায়।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
এমন বাগানেই মিলবে পর্যটনের সুযোগ। ছবি: সন্দীপ পাল।

এমন বাগানেই মিলবে পর্যটনের সুযোগ। ছবি: সন্দীপ পাল।

হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, চিকেন রেজালা কিংবা বাসমতী চালের ভাত, ভেটকি পাতুরিবাদশাহি খানা আর বাঙালি ব্যাঞ্জনের এমন যুগলবন্দি মিলবে এ বার শহর থেকে দূরে চা বাগানের নিরিবিলিতে। মন না চাইলে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়েও কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েক ঘণ্টা।

শারদোত্‌সবে ভোজন রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তি দিয়েই চা পর্যটনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে গৌরীহাট সংলগ্ন এলাকায়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৬ বছর থেকে নিজের ছোট্ট এক টুকরো চা বাগানকে ঘিরে যে পর্যটনের জাল বুনেছেন শহরের এক তরুণ, পুজোয় সেটাই ‘গ্রিন ভিউ ফেস্টিভ্যাল’ নামে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করবে এখানে।

বিকল্প রোজগার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির এমন অভিনব উদ্যোগের খবর পেয়ে অবাক জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদারও। তিনি বলেন, “প্রকল্পটি খোঁজ নিয়ে দেখব। এভাবে প্রত্যেকে এগিয়ে এলে অনেক সমস্যা মিটবে।” জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের কর্তারা ইতিমধ্যেই ওই চা বাগান এলাকা ঘুরে দেখেছেন। জেলার আরও কয়েকটি ছোট বাগানে এ ধরনের পর্যটনের পরিকল্পনা নেওয়া যায় কি না সে চিন্তা ভাবনাও করছেন। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “জেলায় প্রায় ২০ হাজার ছোট চা বাগান আছে। তার কয়েকটিকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।”

জলপাইগুড়ি শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে ১৮ একরের বাগানটি। তিন দিকে তিরতির করে বাইছে করলা নদী। তার মাঝে দ্বীপের মতো জেগে ওঠা নলখাগড়ার জঙ্গল যেন বালুচরে সবুজ কার্পেট। সঙ্গে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে গামার, শিরিষ, নিমের মতো গাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট বাহারি কটেজ-কিচেন রুম। এক সঙ্গে ৭০ জন বসে খাওয়াদাওয়া করতে পারেন অনায়াসে। রয়েছে কনফারেন্স রুম, খেলার মাঠ, ফুলের বাগান। চড়ুইভাতিরও পৃথক আয়োজন রয়েছে।

তবে এখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। উত্‌সবের উদ্যোক্তা তথা বাগান মালিক শোভন সরকার জানান, ২০০৮ সালে নলখাগড়ার জঙ্গল সরিয়ে বাগান তৈরির পর থেকে নিজের মতো করে ‘টি ট্যুরিজমের’ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। প্রথমে তেমন সাড়া মেলেনি। হতাশ হয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েন নি। তাঁর কথায়, “বিশ্বাস ছিল, একবার পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হলে আর ফিরে তাকাতে হবে না। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েও কাজের সুযোগ পাবে।”

২০১০ সালে স্নাতক বামনপাড়ার বাসিন্দা শোভনের এই অদম্য ইচ্ছার তারিফ না করে থাকতে পারেননি সুবল সরকার, বাবন দাস, রমেন রায়ের মতো গৌরিহাট এলাকার বাসিন্দারা। তিন-চার বছর ধরে প্রতিদিন বিকেলে গড়ে ৫০ জন শহর থেকে ওখানে বেড়াতে যান। উত্‌সবের দিনে ভিড় আরও বাড়ে। গত পুজোয় প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ জন এসেছেন বলেও জানা গিয়েছে। প্রবীরবাবু বলেন, “শহরের কাছেপিঠে নিরালায় বেড়ানোর জায়গা কোথায়! পরিবারের সকলকে নিয়ে বেড়ানোর কথা চিন্তা করে এখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।” এ বার অবশ্য পর্যটক টানতে বাগান আরও সুন্দর ভাবে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। চা বাগানের সবুজের মাঝে তৈরি হচ্ছে পর্যটন পরিকাঠামোর কাজ। তবে পর্যটকদের খাবারের মান নিয়ে কোনওরকম খুঁত রাখতে রাজি নন উদ্যোগীরা। খাবারের গুণগত মান আরও কতটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন নামী রেস্তোঁরার সঙ্গে আলোচনাও চলছে বলে জানান শোভনবাবু। সঙ্গে আদিবাসী নাচের আয়োজন করা যায় কিনা তাও খোঁজ নিয়ে দেখছেন তিনি।

jalpaiguri tea estate tourism green view festival biswajyoti bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy