Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লেপার্ডের ফাঁদ থেকে কেরলের নেচভেঞ্চার

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।দক্ষিণ ইজরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন লেপার্ড ধরার একটি ফাঁদের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের সুস্পষ্ট দু’টি কারণও প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। ভ্রমণ মানচিত্রে কেরলের নয়া সংযোজন। রাজস্থানের মেলা থেকে গতি বাড়াচ্ছে শতাব্দী। এ সব নিয়েই ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৪৮
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন ফাঁদের খোঁজ

দক্ষিণ ইজরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে সম্প্রতি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো একটি লেপার্ড ধরার ফাঁদের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় একই ধরনের ফাঁদ ওই এলাকার যাযাবরেরা গত শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহার করায় আবিষ্কৃত ফাঁদটি কয়েকশো বছরের প্রাচীন বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ফাঁদটিকে দেখে প্রাথমিক ভাবে মামুলি পাথরের স্তূপ বলে মনে হলেও হিংস্র প্রাণীদের রুখতে সফল ভাবেই তার প্রয়োগ করতেন ওই এলাকার মেষপালকেরা। ফাঁদের ভিতরের দিকে মাংসের টুকরো রেখে লেপার্ড জাতীয় প্রাণীদের প্রলুব্ধ করা হত। প্রাণীটি ভিতরে ঢুকলেই দড়ি দিয়ে বাঁধা ফাঁদের সামনের দিকের ভারী পাথরের দরজাটি নেমে আসত। ১৬০০ বছরের পুরনো একটি নির্মাণস্থলের কাছে প্রায় পঞ্চাশটি এই ধরনের ফাঁদের সন্ধান মিলেছে।

এই সূত্রেই ফাঁদগুলিকে সেই সময়ের বলেই অনুমান করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বয়স নির্ণয়ের পরীক্ষার সময়েই চমক দেখা দিল। তেজস্ক্রিয় পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখা যায় এদের মধ্যে একটি ফাঁদ প্রায় পাঁচ-ছ’হাজার বছরের পুরনো। উভদা উপত্যকার একেবারে কাছে এই নিদর্শনস্থল। এই উভদা উপত্যকায় আগেই ব্রোঞ্জ যুগ ও ক্যালিওলিথিক যুগের বহু নিদর্শন মিলেছে। সেই প্রাচীন যুগ থেকেই এলাকার পশুপালকেরা এই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করায় অবাক বিজ্ঞানীরাও। তবে নেগেভে এখন আর লেপার্ড পাওয়া যায় না। এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে তারাও।

সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের উত্স সন্ধানে

সিন্ধু সভ্যতা— আবিষ্কারের পর থেকেই প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সমসাময়িক ব্রোঞ্জ যুগের এই সভ্যতা বিজ্ঞানীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। বাকি দু’টি সভ্যতার বিষয়ে প্রচুর তথ্য মিললেও ১৮৪২ সালে আবিষ্কারের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের প্রকৃত কারণ নিয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। এত দিন পর্যন্ত তাঁদের ধারণা ছিল পরিবেশ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ না-খাওয়াতে পেরেই ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সিন্ধু সভ্যতা। কিন্তু সেই দাবির সমর্থনে বিশেষ কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি তাঁরা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে পরিবেশগত কারণ নয়, সংক্রামক ব্যাধি এবং হিংসাত্মক লড়াই ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে ৪ হাজার বছরের প্রাচীন এই সভ্যতাকে।

পাকিস্তান ও উত্তর ভারত জুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টজন্মের প্রায় দু’হাজার বছর আগে। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের বাস ছিল এখানে। মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে নিয়মিত ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল এখানকার মানুষের। সম্প্রতি আপ্পালাচিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিজ্ঞানের গবেষক রবিন্স স্কাগের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী হরপ্পার বিভিন্ন সমাধিস্থল থেকে পাওয়া মানুষের হাড়গোড় নিয়ে পরীক্ষা করে তাতে যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগের অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন। হাড়ে আঘাতের চিহ্ণও খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। এই ধরনের আঘাত কোনও বড় সংঘর্ষের ফলেই হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ছিল। এই নতুন আবিষ্কার সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। নতুন তথ্য জানাচ্ছে, সংঘর্ষ ছাড়াও সংক্রামক ব্যধির বিস্তার এই সভ্যতার ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছিল কুষ্ঠ ও যক্ষ্মার মতো রোগ। গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও সংক্রামক রোগের বিস্তার— এই দুই কারণেই ধ্বংস হয়ে যায় প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা।

প্রাচীনতম চিজের খোঁজ

সম্প্রতি বিশ্বের প্রাচীনতম চিজের সন্ধান পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। চিনের তাকলামাকান মরুভূমির নীচে একটি মমির বুক ও গলায় আটকানো ছিল ৩ হাজার ৬০০ বছরের পুরনো এই চিজ। ইহ জীবন থেকে পরবাসে যাওয়ার দীর্ঘ পথে মৃতের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তাই এই ব্যবস্থা বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে ১৯৩৪ সালে এক দল সুইডিশ প্রত্নতাত্ত্বিক খ্রিস্টজন্মের ১৭০০ বছর আগের এই সমাধিস্থল আবিষ্কার করেছিলেন। এর পর এক আজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় খননকার্য। বিস্মৃতপ্রায় এই সমাধিস্থলে ফের খোঁড়াখুড়ি শুরু হয় ২০০০ সালে। ব্রোঞ্জ যুগের এই সমাধিস্থলটিতে শ’দুয়েক মমির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। কালো ও লাল রং করা প্রায় ১৩ ফুট লম্বা কাঠের বাক্সে গরুর চামড়ায় মোড়া মমিগুলি এতটাই ভাল ভাবে সংরক্ষিত ছিল যে তাদের গায়ে তখনও পোশাক ছিল। মমিগুলোর গায়ে আটকানো হলুদ চিজগুলি প্রায় ০.৪-০.৮ ইঞ্চি পুরু। সমাধিস্থলের শুকনো বাতাস আর নোনা মাটির জন্য হাজার হাজার বছর পরেও প্রায় অবিকৃত ছিল চিজগুলি। এগুলি বানানোর জন্য খুব সাধারণ পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রাচীন কালে বানানো এই চিজগুলি ছিল সস্তা ও সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে। চিজ তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাক্টোব্যাসিলাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া এখনও ব্যবহৃত হয়। অত্যন্ত সহজ ভাবে বানানো হলেও তার মধ্যে সমস্ত পুষ্টিগুণ বজায় থাকত বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে ৫-৭ হাজার বছর আগে চিজ তৈরির আভাস মিললেও গোটা এক খণ্ড চিজের আবিষ্কার এই প্রথম।

দানব অক্টোপাসের জীবাশ্ম উদ্ধার

গভীর সমুদ্রে চলছে সওদাগরি জাহাজ। মাঝ সমুদ্রে হঠাত্ই এক বিশালাকায় সামুদ্রিক দানবের আক্রমণ। তার দশটা শুঁড়। জাহাজের থেকে বড় সেই প্রাণীর হামলায় মুহূর্তে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ডুবে গেল বাণিজ্যতরী। ঠাকুমার ঝুলি বা আরব্য রজনীর অতি পরিচিত এই সামুদ্রিক দানবের বাস্তব অস্তিত্বের সন্ধান সম্প্রতি পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। নেভাদার বার্লিন-ইকথাইওসর জাতীয় উদ্যান থেকে পাওয়া জীবাশ্মটি আদতে বিশালাকায় সামুদ্রিক ক্র্যাকেনের বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। ক্র্যাকেন রূপকথায় বর্ণিত এক বিশাল অক্টোপাস বা স্কুইড। ২০১১ সালে নেভাদাতেই আবিষ্কৃত একটি জীবাশ্ম এক বিশালাকায় অক্টোপাস বা স্কুইডের মুখের বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। প্রাণীটি তার খাদ্য নিয়ে ‘খেলা’ করার সময়ই কোনও এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। তবে জীবাশ্মটি ক্র্যাকেনের বলে মানতে রাজি ছিলেন না প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটা বড় অংশ। এর পরই ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট হোলিওক কলেজের অধ্যাপক মার্ক ম্যাকমেনানিনের নেতৃত্বে এক দল গবেষক আবিষ্কার করেন বিশালাকায় এক সামুদ্রিক প্রাণীর মেরুদণ্ডের হাড়। প্রায় ২.৫ কোটি বছর আগের এই প্রাণীটি ক্র্যাকেন, এবং হাড়টি তারই বলে দাবি করেছেন তাঁরা। তবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়ের জীবাশ্মগুলি পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় ক্র্যাকেনের বাস্তব অস্তিস্ব নিয়ে পুরোপুরি সংশয়মুক্ত নন বিজ্ঞানীরা।

ঐতিহ্য

• বঙ্গ জীবনে পঞ্জিকা

প্রথম পঞ্জিকা প্রকাশের কথা জানা যায় ইংরেজি ১৮২৪ সালে। পঞ্জিকা হিসেব এটি ছিল আকারে বেশ বড় এবং বিষয় বৈচিত্রে ভরা। এর পর আরও একটি প্রকাশিত পঞ্জিকার দেখা মিলল ১৮২৫ সালে। বিশ্বনাথ দেব নামে এক ব্যক্তির সহায়তায় এটি প্রকাশিত হয়। এর পর সিপাহী বিদ্রোহের বছর অর্থ্যাৎ ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত পঞ্জিকা এত জনপ্রিয় ছিল যে তার বিক্রি শতগুণ বেড়ে যায়। তখন বইয়ের দোকান ছিল না বলে মাথায় ঝাঁকা নিয়ে পঞ্জিকা বিক্রি করা হত। সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পঞ্জিকার নাম ছিল ‘গুপ্ত প্রেস ডাইরেক্টরি’। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দুর্গাচরণ গুপ্ত।

এর পরের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। প্রথম দুই খণ্ডে পঞ্জিকা তৈরি করেন কিশোরীমোহন বাগচী। এর এক ভাগে ছিল পাঁজি, অন্য ভাগে ডাইরেক্টরি। পঞ্জিকার ক্রম বিবর্তনের ইতিহাসে বাগচী মশাইয়ের আরও একটি সংযোজন— ১৮৯৯ সালে তিনি যে পঞ্জিকা প্রকাশ করেন তাতে হিন্দু দেবদেবীর সঙ্গে লর্ড এবং লেডি কার্জনের ছবিও ছেপেছিলেন। উনিশ শতকের শেষ দিকে বিভিন্ন পঞ্জিকা বাজারে আসায় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাজারে টিকে থাকতে অনেকে ম্যাজিক, সম্মোহন বিদ্যা, গুপ্ত রোগের ওষুধও পঞ্জিকায় জুড়ে দেন। অনেকে আবার রাজ অনুগ্রহ লাভের আশায় পত্রিকার নামকরণ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া পঞ্জিকা, লর্ড রিপন পঞ্জিকা প্রভৃতি। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের অব্দ এবং তারিখের গরমিল দেখা দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। সমস্যা সমাধানে মেঘনাদ সাহার তত্ত্বাবধানে তখনকার কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫২ সালে পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করে। ১৯৫৭ সালে মোট ১২টি ভাষায় বিশুদ্ধ গণনা সম্মিলিত সর্বজন স্বীকৃত একটি আদর্শ পঞ্জিকা প্রকাশ হয়, যা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা নামে পরিচিত। আজও যার চাহিদা অপরিবর্তনীয়। এ ছাড়া বেনীমাধব শীলের পঞ্জিকাও আজ পরিচিত এক পঞ্জিকা।

দুই শতাব্দী পথ উজিয়ে আকারে প্রকারে পঞ্জিকা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। মুদ্রন ও প্রকাশনায় বিবর্তন এলেও অন্তরে চিরকালের সেই বিশুদ্ধতাকেই লালন করছে। এ ছাড়া কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি ধর্ম— এ সব কিছুর মেলবন্ধন ঘটেছে একমাত্র পঞ্জিকাতেই। সেই হিসেবে পঞ্জিকাকে কালোর্ত্তীন এক সাহিত্য, যাকে ঐতিহ্যের ধারক-বাহকও বলা যায়।

• নগরীতে প্রথম স্থাপিত মূর্তি

সে অনেককাল আগের কথা। জল, জঙ্গল আর বাবু কালচারের উদ্দামতা-সহ ইংরেজদের হাতে গড়া প্রাসাদ নগরী কলকাতা তখন একটু একটু করে সেজে উঠছে লন্ডনের অনুকরণে। সর্বত্র শুরু হয় রাস্তা এবং উদ্যান সাজানোর পাশাপাশি বিখ্যাত ইংরেজ শাসকদের মূর্তি স্থাপন। এ শহরে শাসক হিসেবে প্রথম স্থাপিত হয় লর্ড কর্নওয়ালিসের মূর্তি। এক ঐতিহাসিক জয়কে সন্মান জানাতে ইংরেজরা তাঁর মূর্তি বসান কলকাতায়। ১৭৯২ সালে মহীশূরের নবাব টিপু সুলতান ইংরেজের মিত্র-রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর আক্রমণ করলে লর্ড কর্নওয়ালিস মরাঠা এবং নিজামকে সঙ্গী করে টিপুকে মহীশূরের যুদ্ধে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধের পরিচালনা এবং পরে নানা সন্ধি-চুক্তি সম্পাদনার পুরস্কার স্বরূপ ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অফ প্রোপাইটার্স’ ১৭৯৩ সালে লন্ডনে দু’টি প্রস্তাব আনে। একটি লর্ড কর্নওয়ালিসকে ধন্যবাদ জানানো আর দ্বিতীয়, তাঁর একটি মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারেই তাঁর মূর্তি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন লন্ডনের বিশিষ্ট ভাস্কর এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমিশিয়ান জন বেকন। মাঝপথে মৃত্যু হয় বেকনের। এর পর তাঁর পুত্র জুনিয়র জন এই মূর্তি তৈরির কাজ সমাপ্ত করেন।কর্নওয়ালিসের জীবদ্দশায় ১৮০৩ সালে মূর্তিটি প্রথম স্থাপন করা হয় ফোর্ট উইলিয়ামে। বর্তমানে এটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সংগ্রহশালায় রয়েছে।

• মন্দিরময় শহরের মুকুটে আরও এক পালক

ভারতে হিন্দু তীর্থস্থানগুলির মধ্যে অন্যতম তিরুপতি মন্দির। অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায় সাতটি পাহাড় নিয়ে শেষাচল বা ভেঙ্কটাচল। এরই একটি তিরুমালাইয়ের চূড়োয় আম আর চন্দন গাছে ছাওয়া বালাজি মন্দির। সারা বছর দেশ দেশান্তর থেকে বহু তীর্থযাত্রী আসেন ৮৪০ মিটার উঁচু পাহাড় চুড়োর এই মন্দির শহরে। তিরুমালাই মন্দির শহরে শুধু ‘শ্রীবালাজি’ নন, আছে আরও অন্যান্য দেবদেবীর মন্দির। মন্দিরের পুজোর রীতি বৈচিত্রময়। ১০০ কেজি সোনায় মোড়া গর্ভগৃহে ২ মিটার উঁচু দণ্ডায়মান বিগ্রহ। শ্রীবালাজির সারা অঙ্গ ঢাকা থাকে ফুলের মালায়। চোখ দু’টিও ঢাকা পুষ্পাভরণে। সব মিলিয়ে তিরুপতি মন্দির স্থান মাহাত্ম্যে এক বিশেষ স্থান পেয়েছে সারা বিশ্বে।

এ জন্য কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অন্ধ্রপ্রদেশ পর্যটন বিভাগের হাতে ২০১২-’১৩ সালের বিশেষ হেরিটেজ শহরের পুরস্কার তুলে দেন।

• এক হারানো শহরের ইতিকথা

ইতালির ঐতিহাসিক শহর পম্পেই। এ এক হারিয়ে যাওয়া শহরের গল্প। কাল ছিল, আজ আর নেই। রাতারাতি ধ্বংস হয়ে যায় এই শহরটি। কী ভাবে ? আথেন্স, রোম, ভেনিস— এই সব শহরের ভিতর পুরনো নাগরিক সভ্যতার যে চিত্র ঐতিহাসিকরা খুঁজে পেয়েছেন তার সবকিছুই মজুত ছিল পম্পেইয়ে। ইতালির ‘নাপোলি’ ছিল বিখ্যাত সমুদ্র বন্দর। এর খুব কাছেই পম্পেই। আসলে এটি ছিল সে সময়ের এক স্বাধীন শহর। সৌন্দর্য, বিলাস-বসন এবং আমোদ-প্রমোদে ক্রমে ক্রমে শহরটি রোমানদের প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছিল। সময়কাল ৮০ খ্রিস্টপূর্ব।
পম্পেই নগরটি ছিল এক উঁচু পাহাড়ের মালভূমি অঞ্চল। ‘সারনো’ নদীর উপত্যকা, সুন্দর সাজানো বনাঞ্চল, আর প্রাণচঞ্চল নাগরিক জীবন নিয়ে পম্পেই তখন মত্ত আমোদ প্রমোদে। নগরে তখন চলছিল অগ্নি দেবতার বিশেষ উৎসব। কিন্তু বিধাতার কী পরিহাস! সেই রোদ ঝলমল সুন্দর দিনে নেমে এল অগ্নি দেবতারই অভিশাপ। পাশের চার হাজার ফুট পাহাড় থেকে নেমে এল ধুলো, ধোঁয়া, লাভা আর তীব্র অগ্নি স্রোত। ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুরো শহরটা ছাই, পাথর আর পিউমিসের তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল। ওই পাহাড়টি আসলে ছিল ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি। কেউ জানত না তার কথা। কারণ ১৮০০ বছর ধরে তা ঘুমিয়ে ছিল যে!

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

মধুকরদের মধুর উড়ান

গবেষকের পরীক্ষায় সকলেই সফল ভাবে উত্তীর্ণ। ফ্লাইট চেম্বারের মধ্যে তারা সবাই ৭৫০০ মিটার উচ্চতা অবধি উড়ে গেল। শুধুমাত্র দু’টি উড়ল ৯০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায়। তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকার ইয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাইকেল ডিলো। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৮৪৮ মিটার। তাহলে কি এভারেস্টের উচ্চতার চেয়েও বেশি উঁচুতে উড়তে পারে তারা?
তারা মধুকর। ছোট ছোট ডানায় ভর করে হাজার হাজার মিটার উচ্চতায় উড়ে যায় অনায়াসে। মাইকেল ডিলো চিনের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৬টি পুরুষ মৌমাছি সংগ্রহ করেন যারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ৩,২৫০ মিটার উচ্চতা অবধি উড়তে সক্ষম। কী ভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে মৌমাছিরা তা নিয়ে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করলেন বিজ্ঞানীরা। ‘রয়্যাল সোসাইটি জার্নাল’, ‘বায়োলজি লেটারস’ নামক বিজ্ঞান পত্রিকায় নানারকম ব্যাখ্যাও দিলেন তাঁরা। ডিলো জানালেন, বায়ুগতিবিদ্যার সূত্রকে কাজে লাগিয়েই অধিক উচ্চতায় যেখানে বায়ুর চাপ অনেক কম সেখানে সহজেই পৌঁছে যায় মৌমাছিরা। তাঁর মতে, ওড়ার সময় ডানার স্পন্দনমাত্রা একই রেখে বারে বারেই ডানার কৌণিক অবস্থান পরিবর্তন করে বায়ুর চাপকে প্রতিহত করে মৌমাছিরা। এই ভাবে যে গতির সৃষ্টি হয় তা বায়ুর ঘনত্বের সমানুপাতিক। বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, নেপালে অবস্থিত হিমালয়ের বেশ কিছু অংশে ৫৬০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় বসবাস করছে এমন মৌমাছিদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। শুধুমাত্র আল্পাইন মৌমাছিরাই ৯০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি প্রজাতির হাঁসেরা কমপক্ষে ২০০০ মিটার উচ্চতা অবধি উড়তে পারে। এমনকী, মশা-মাছিরাও ওই একই প্রক্রিয়ায় ১০০০ মিটার উচ্চতা অবধি তাদের পাখা মেলতে পারে।

গাছ বায় ‘বিদেশি’ কুমীর

গল্পের গরু গাছে ওঠার মতোই গাছে চড়তে ওস্তাদ কুমীরেরা। তবে এখানে বিন্দুমাত্র গল্প নেই। সম্পূর্ণটাই বাস্তব। যদিও কুমীরদের শারীরিক গঠন গাছে চড়ার উপযোগী নয়। তবে সম্প্রতি আমেরিকার টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভ্লাদিমির ডাইনেটস জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় এমন চার প্রজাতির কুমীরের সন্ধান মিলেছে যারা গাছে উঠতে পটু। এই গবেষণাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘হারপেটোলজি নোটস’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যাডাম ব্রিটন ও ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ম্যাথেউ শিরলের গবেষণাপত্রেও একই তথ্য প্রমাণ মিলেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, মাটি থেকে অন্তত ছ’ফুট উচ্চতা অবধি গাছে উঠতে পারে কুমীরেরা। তবে বিজ্ঞানী ডাইনেট এই ব্যাপারে তাঁর ভিন্ন মত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, আফ্রিকা বা উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় যারা দীর্ঘ দিন কুমীরদের সংস্পর্শে থেকে গবেষণা চালিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন কিছু প্রজাতির কুমীর ৩০ ফুট উচ্চতা অবধি গাছে উঠতে পারে। মূলত আকারে ছোট বা কম বয়সিরা লম্বালম্বি ভাবে গাছে চড়ে, আর পূর্ণবয়স্কদের পছন্দ গাছের আড়াআড়ি ডালপালা।

কিন্তু হঠাত্ করে মাটি ছেড়ে গাছে ওঠায় মতি হল কেন কুমীরদের? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কুমীরেরা একটু নিরিবিলি পছন্দ করে। তা ছাড়া কখনও মাটিতে জায়গা কম পড়লে, গাছই হয় তাদের নিশ্চিন্ত আরামের জায়গা, যেখানে নিরাপদে রোদ পোহানো যায়। গাছের ডালপালার মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে দিব্যি শিকারের উপর নজরও রাখা যায়।

মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বতসওয়ানা প্রভৃতি জায়গার কুমীরদের পছন্দ নদী তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ অরণ্য। একই গোত্রীয় সরীসৃপ শ্রেণির কিছু অ্যালিগেটরদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। যেমন অ্যালিগেটর মিসিসিপিএনসিস প্রজাতিটিকে মিসিসিপির ডেল্টা নদীর ধারে ৪-৬ ফুট উচ্চতার একটি গাছে চড়তে দেখেছিলেন এক জন চিত্রগ্রাহক। অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ কুমীরকেই গাছের নিচু ডালে বসে রোদ পোহাতে দেখা যায়। ডাইনেট জানিয়েছেন, আমেরিকায় তিন ফুট দৈর্ঘ্যের কুমীরেরা ম্যানগ্রোভ গাছের শাখায় তাদের আস্তানা গেড়ে থাকে। তবে এদের সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে মধ্য আমেরিকার ‘স্লেন্ডার-স্নাউটেড’ প্রজাতি, ৪.৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এই এই কুমীরেরা ১৩ ফুট উচ্চতার গাছে অবলীলায় উঠে যায়। অপর এক ওস্তাদ গাছ বাইয়ে হল বটসওয়ানার নাইল প্রজাতি। ৬.৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এই কুমীরেরা জলের উপর ঝুলন্ত কোনও গাছের ডালে চড়ে মনের আনন্দে পা দুলিয়ে রোদ পোহায়।

হাইড্রোজেন জ্বালানি তৈরি করবে ‘কৃত্রিম পাতা’

যান্ত্রিক সভ্যতার চাহিদা মেটাতে যে বিপুল শক্তির প্রয়োজন তা জোটাতে রীতিমত নাকানিচোবানি খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ কৃত্রিম উপায় শক্তি উত্পাদন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব নয়। অন্যথা ভরসা প্রাকৃতিক শক্তি। আর প্রাকৃতিক শক্তি বলতে প্রথমেই মাথায় আসে সৌরশক্তির কথা। তাই সৌরশক্তিকেই শক্তি উত্পাদনের বিকল্প পন্থা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নানা চেষ্টা-চরিত্র চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এরই একটি পর্যায় হল সৌরশক্তিকে হাইড্রোজেন ফুয়েলের মাঝে ধরে রাখা। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় হাইড্রোজেন জ্বালানি বা ফুয়েল সেল এখনও এতটা জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু ফুয়েল সেলের ওজন কম ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অটোমোবাইল শিল্পে এর চাহিদা বেড়েছে। তা ছাড়া এই সেলের স্থায়িত্বও অনেক বেশি। কিন্তু প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন তৈরি একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার। কারণ এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও বিপুল পরিমাণ শক্তির অপচয় হয়। তাই ‘অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’ ও শিকাগোর ‘আর্গন ন্যাশনাল লাইব্রেরি’-র বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন ‘কৃত্রিম পাতা’, যা সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মতো জলকে ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করে। গবেষণার প্রথম দিকে এই পদ্ধতিটি কার্যকরী হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস মুর। এই প্রক্রিয়ার দু’টি পর্যায় আছে, প্রথমত যেখানে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তিত হয়, দ্বিতীয়ত এই রাসায়নিক শক্তি জল বিশ্লেষণ করে হাইড্রোজেন তৈরি করে। এই গবেষণাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ন্যাচারাল কেমিস্ট্রি নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায়।

এর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জি নোসেরা পরীক্ষাগারে সিলিকনের সৌরকোষ তৈরি করেন। এই কোষের একপৃষ্ঠের কোবাল্ট-ভিত্তিক অনুঘটক জলকে ভেঙে অক্সিজেন তৈরি করে ও অপর পৃষ্ঠের নিকেল-মলিবডিনাম-জিঙ্ক অ্যালয় জল থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করে। এই কোষটির তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘কৃত্রিম পাতা’। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে পাতার মতোই কাজ শুরু দেয় এই সৌরকোষ। ২০১১-এ ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে প্রথম এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন নোসেরা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, নোংরা বা অপরিশোধিত জল থেকেও হাইড্রোজেন উত্পাদন করতে পারে কৃত্রিম পাতা।

হাইড্রোজেন উত্পাদনের এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা এই গবেষণা সম্পূর্ণ সফল হলে আগামী প্রজন্মে হাইড্রোজেন জ্বালানিই হবে শক্তির প্রধান উত্স।

৬৩ বছরেও মা হল ‘বুড়ি’ অ্যালবাট্রস

তার নাম উইসডম। বয়স ৬৩ বছর। নিবাস জাপান ও হাওয়াই-এর মধ্যবর্তী মিডওয়ে অ্যাটল ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজি অভয়ারণ্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা উইসডম বিশ্বের প্রবীনতম পাখিদের মধ্যে একটি। জাতে সে লেইসান অ্যালবাট্রস বা ফোবাসট্রিয়া ইমুটাবিলিস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই বছরে ৩৫ বারের জন্য সে মা হয়েছে। বিগত তিন দশকে জন্ম দিয়েছে অন্তত ৩৫টি ছানার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখনও বংশবিস্তার করতে সক্ষম ৬৩ বছরের এই বৃদ্ধা। মিডওয়ে অ্যাটল অভয়ারণ্যের কর্মকর্তা ড্যান ক্লার্কের মতে, উইসডম সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে আদর্শস্বরূপ। ১৯৫৬-এ বিজ্ঞানীরা প্রথম উইসডমের দেখা পান। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত উইসডম সমুদ্রপথে প্রায় ৩০ লক্ষ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। কখনও সামুদ্রিক মাছের ডিম, স্কুইড ধরে এনে নিজের ও বাচ্চাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করেছে। কখনও বা নিছক ভ্রমণের অভিপ্রায় সমুদ্রপথে পাড়ি জমিয়েছে। মার্কিন ভূ সর্বেক্ষকদের হিসাব অনুযায়ী এই দূরত্ব অতিক্রম করতে হলে কম করে হলেও পৃথিবী থেকে অন্তত চার থেকে ছ’বার চাঁদে গিয়ে আবার ফিরে আসা যায়। অভয়ারণ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৬-এর পর থেকে উইসডম পাঁচ গুণ বেশি ডিম পাড়া শুরু করেছে। সর্বশেষ সুসংবাদটি সে দেয় গত মাসের ৪ ফেব্রুয়ারি। লেইসানরা জীবনভর একটিমাত্র সঙ্গীর সঙ্গেই মিলিত হয় ও বছরে একবারই ডিম পাড়ে। তাই এই ৬২ বছরের দীর্ঘ জীবনে উইসডমের একটিমাত্রই পুরুষসঙ্গী ছিল কি না তা নিয়ে এখন মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
লেইসান প্রজাতির অ্যালবাট্রসদের দেখা মূলত প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলেই পাওয়া যায়। এদের শতকরা ৯৯ শতাংশ উত্তর-পশ্চিম হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাদের বাসা তৈরি করে। আশ্চর্যের বিষয় হল জীবনের প্রথম তিন থেকে পাঁচ বছর এরা শুধু উড়েই কাটিয়ে দেয়, মাটি স্পর্শ করে না। আইইউসিএন লেইসান অ্যালবাট্রসদের বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত করেছে। বর্তমানে এদের ১৯টি প্রজাতিই বিলুপ্তপ্রায়।

পার্বণ

তিব্বতি মতে নববর্ষ লোসার

লোসার হল তিব্বতি মতে নববর্ষ। হিমালয়ের কোল জুড়ে বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। লোসারের দু-এক দিনের মধ্যেই বা একই দিনে পালিত হয় চিন ও মঙ্গলীয় নববর্ষ। নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের একটি অন্যতম উত্সব এই লোসার। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৫ দিন ধরে এই উত্সব পালিত হয়। এ বছর ২ মার্চ থেকে এই উত্সব শুরু হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মের আগে থেকেই তিব্বত ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিত হত এই উত্সব। কথিত আছে, তিব্বতের নবম রাজা পুর গঙ্গেয়ালের সময় থেকে লোসার বৌদ্ধ মতে পালিত হয়। স্থানীয় ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নাগদেবতাই ওই এলাকার জলের উত্স সৃষ্টি করেন। তাই তাঁকে তুষ্ট করতে তিব্বতের মানুষ নাগদেবের পুজো দেন। পরিবারে মঙ্গল কামনায় সেখানকার মানুষ ঈশ্বরের কাছে ধূপ, মাখন চা ইত্যাদি উত্সর্গ করেন। এই উত্সবকে ঘিরে কয়েকশো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যশালী নাচ-গানে মেতে ওঠেন স্থানীয় মানুষ। উত্সবের ঐতিহ্য এবং পরম্পরা মেনে পুরুষ ও মহিলারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরেন। ঝলমলে বর্ণময় মহিলাদের পোশাকের আঞ্চলিক নাম কিরাতিগো এবং পুরুষদের ওই বিশেষ পোশাকের আঞ্চলিক নাম বক্কু। এই উৎসবে নাচ গানের পাশাপাশি তিরন্দাজি-সহ নানা খেলা হয়। পাথর ছুঁড়ে অদ্ভুত্ খেলা ‘দুগো’, নেপালি ও আদিবাসী নাচে মেতে ওঠেন স্থানীয় মানুষজন। অনুষ্ঠান চলাকালীন গ্রামের সকলে শুকনো মাংস ও শাক দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার এবং ভাত খেয়ে থাকেন। জলের বদলে বোতল ভর্তি করে ঠান্ডা মাখন চা পান করেন তাঁরা। সব মিলিয়ে পাহাড়ে বছরের শুরুটা বেশ জাঁক-জমকের সঙ্গেই হয়। বছরের এই সময় হিমালয়ের টানে ছুটে আসা দেশ-বিদেশের অগনিত পর্যটকের কাছে এ এক বাড়তি পাওনা।

খাটু শ্যামজির মেলা

রাজস্থান তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক উত্কর্ষ, অসংখ্য ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর এ সবের টানেই এখানে আসেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক। তার উপর পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজস্থানের মেলা-পার্বণের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। তার মধ্যে একটি অন্যতম খাটু শ্যামজির মেলা। খাটু শ্যামজির মন্দির রাজস্থানের একটি অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় পীঠস্থান। ভগবান কৃষ্ণই এখানে খাটু শ্যামজি নামে পূজিত হন। সারা বছরই খাটু শ্যামজির মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ এই মন্দিরকে ঘিরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই সময় শ্যামজির মন্দিরে আগত ভক্তদের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যায়। শুধু ভক্তই নয়, মেলার টানে এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক। খাটু শ্যামজির মেলাটি মূলত ধর্মীয়। তবে এই মেলাতে পসরা সাজিয়ে বসেন অসংখ্য স্থানীয় কুটির শিল্পী ও বিক্রেতা। তার মধ্যে রয়েছে শ্যামজির মূর্তি, ছবি-সহ পুজোর নানা সামগ্রী। এ ছাড়াও স্থানীয় রেওয়াজের পোশাক, খাবারদাবার, ছোটখাটো ঘর সাজানোর সামগ্রীর দেখা মেলে এই মেলায়। মেলায় আসা বিক্রেতা থেকে ক্রেতা-ভক্ত— সকলের নানা রঙের বাহারি পোশাক, মেলাজুড়ে অসংখ্য লেনদেনের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে এই খাটু শ্যামজির মেলা। দেখে মনে হয়, এখানে ভারতের মেলার চিরন্তন ছবিটা আজও অমলিন, অপরিবর্তিত।

ফুলেরা দুজ

ফুলেরা দুজ উত্তরপ্রদেশের একটি অন্যতম ধর্মীয় উত্সব। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরধনায় প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়ায় বৃন্দাবনের রাধাবল্লভ মন্দির, মথুরার শ্রীকৃষ্ণ মন্দির-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয় এই উত্সব। দেশে এবং দেশের বাইরে ইসকনের মন্দিরগুলিতে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। উত্সব উপলক্ষে কৃষ্ণের বিগ্রহকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন ইসকন-সহ বিভিন্ন মন্দির ও প্রতিষ্ঠানগুলি। উত্তরপ্রদেশের মথুরা ও বৃন্দাবনে এই শোভাযাত্রায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে। দেশের সুপ্রাচীন লোককথা অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম, তাঁর লীলাক্ষেত্র এই মথুরা ও বৃন্দাবন। তাই বিশ্বজুড়ে কৃষ্ণ ভক্তদের কাছে এই দুই জায়গার ফুলেরা দুজ উত্সবের একটি বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। শোভাযাত্রায় কীর্তন, ভজন গাইতে গাইতে পায়ে পা মেলান প্রচুর মানুষ। কথিত আছে, কৃষ্ণ ছিলেন যাদব কূল শিরোমণি— অর্থাত্ গোপালক। তাই এই উত্সবে গো-মাতার পুজো হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ভক্তদের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশির্বাদী ফুল, প্রসাদ, মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এ বছর ৩ মার্চ সাম্বরে পালিত হয় এই ফুলেরা দুজ।

করণী মাতার মেলা

রাজস্থান তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ধর্মীয় সংস্কারের জন্য জগতজুড়ে বিশেষ ভাবে পরিচিত। এই রাজ্যে উত্সব, মেলা-পার্বণ সারা বছর ধরে লেগেই থাকে। এই মেলা বা পার্বণগুলি হয় কোনও ঐতিহাসিক ঘটনাকেন্দ্রীক অথবা সেগুলি কোনও ধর্মীয় সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জন সমাবেশ। যেমন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিকানের থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে দেশনোকে আবস্থিত করণী মাতার মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেলা-পার্বণ যা বছরে দু’বার আয়োজিত হয়। চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রথম দশ দিন এবং আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের প্রথম দশ দিন— এই দু’বার পালিত হয় করণী মাতার মেলা। তবে চৈত্র মাসের মেলায় জনসমাগম সবচেয়ে বেশি হয়। স্থানীয় ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী করণী মাতা মা দুর্গারই অবতার। সাধারণ মানুষের দুঃখ, কষ্ট লাঘব করতেই তিনি জন্মেছিলেন। অলৌকিক ক্ষমতার সাহায্যে তিনি অসংখ্য মানুষকে দুঃখ, দুর্দশা থেকে উদ্ধার করেন। এই বিশ্বাসে ভর করেই আজও হাজার হাজার মানুষ নিজের এবং সংসারের মঙ্গল কামনায় ছুটে আসেন করণী মাতার মন্দিরে। জোধপুর এবং বিকানেরের রাজপরিবারে করণী মাতাই কূলদেবী রূপে পূজিত হতেন। এই মন্দিরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়, মন্দির কর্তৃপক্ষের আন্তরিক পরিচর্যায় প্রায় ২০ হাজার ইঁদুরের সহাবস্থান। যদি এর মধ্যে কোনও ইঁদুরের মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে তার জায়গায় সোনার ইঁদুর রেখে ওই মৃত ইঁদুরের স্থান পূরণ করেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

পর্যটন কেন্দ্র

কেরল ‘নেচভেঞ্চার’

অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় যারা ঘর ছাড়েন, তাঁদের জন্য সুখবর। কেরলে শুরু হতে চলেছে ‘নেচভেঞ্চার’। ছুটি কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চারের উত্তেজনায় গা ভাসাতে এ বার যাওয়া যেতে পারে কেরল। কেরল ট্যুরিজমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে জানান সংস্থার ডিরেক্টর এস হরিকিশোর। এ জন্য হিল স্টেশন থেকে শুরু করে সমুদ্রতট বনারণ্য-সহ বিভিন্ন জায়গাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের প্রসার ঘটানো হবে। কেরল ‘নেচভেঞ্চার’ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটকরা নানা ভাবে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে পারবেন। ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, রক ক্লাইম্বিং থেকে শুরু করে পাহাড়-জঙ্গলে ঘোরার ব্যবস্থা বা পাখি দেখা, সাইক্লিং-কায়াকিং-কেনুয়িং ছাড়াও প্যারা-গ্লাইডিং করতে পারবেন এ রাজ্যের ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। হরিকিশোর জানান, চলতি আর্থিক বছরে কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকার অর্থসাহায্য পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৫ সালের মধ্যে আরও একশো কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

পর্যটনের প্রসার কেরলে

রাজ্যের পর্যটন শিল্পের প্রসারে পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দিল কেরল সরকার। কেরল ট্যুরিজমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান সংস্থার ডিরেক্টর এস হরিকিশোর। গত আর্থিক বছরে রাজ্যে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে পর্যটন শিল্প থেকে রাজ্যের মুনাফা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে তা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। সাধারণত আয়ুর্বেদিক চিকিত্সার জন্য ভিন্ রাজ্যের মানুষরা এ রাজ্যে বেড়াতে আসেন। এমন ভ্রমণার্থী ছাড়াও কেরলের বিভিন্ন ঐতিহ্যময় জায়গাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের প্রসার করতে চায় সরকার। এ জন্য রাজ্যে ‘অ্যাডভেঞ্চার হলিডে’ প্রকল্প গড়া হবে। হরিকিশোর আরও জানান, ‘মুজিরিস হেরিটেজ সাইট’ ও ‘স্পাইস রুট’ ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চতুর্দশ শতক পর্যন্ত মুজিরিস ছিল বিশ্বে স্পাইস রুট-এর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যবন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমেই প্রাচ্যে বাণিজ্যে করতে আসতেন আরব, চিনা, ইহুদি, রোমান, পর্তুগিজ থেকে ডাচ-সহ বহু জাতির বণিকরা। কেরল ট্যুরিজম এই মুজিরিসের ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে ২৫-টিরও বেশি সংগ্রহালয় গড়বে। এর মধ্যে ১১টি সংগ্রহালয় গড়ার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এ মাসের শেষে যা সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পে রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও)-এর সহায়তা পাওয়া গেছে বলে জানান হরিকিশোর। ‘স্পাইস রুট’-এর সাহায্যে বিশ্বের ৩১টি দেশের সঙ্গে জুড়বে মুজিরিস। এ ছাড়াও রাজ্যে ‘সি-প্নেন’ পরিকল্পনার অন্তর্গত আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি করা হবে বলে জানান হরিকিশোর। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ‘সি-প্নেন’ পরিকল্পনা চালু করা হবে।

কর্নাটকের মুরুদেশ্বরে

কর্নাটকের উপকূলবর্তী ছোট্ট শহর মুরুদেশ্বরে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়ছে। বেশ কিছু দিন আগে পর্যন্তও এখানে বেশি মানুষ আসতেন না। কিন্তু সম্প্রতি এই চিত্রটা বদলাতে শুরু করেছে। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে নতুন জায়গায় ঘোরার আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। সম্ভবত এই কারণেই স্বল্প-পরিচিত মুরুদেশ্বরে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষেরা। মুরুদেশ্বরের সমুদ্রতট ছাড়াও এখানে স্কুবা ডাইভিং-এর কারণে বিগত দু’বছরে এর জনপ্রিয়তা উত্তরত্তোর বেড়েছে। এখানে বেড়ানোর একেবারে আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এ সময় এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম। তবে জুলাই-সেপ্টেম্বরের বর্ষার সময় ছাড়া অন্যান্য সময়েও এখানে বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে। ভগবান শিবের নামে নামকরণ হওয়া এই শহরে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম শিবের মূর্তি রয়েছে। ১২৩ ফুট উঁচু এই মূর্তির টানে এ শহরে আসেন বহু ভক্ত। আর এন শেঠি নামে শহরেরই এক ব্যবসায়ী ২০ তলা উঁছু একটি টাওয়ার তৈরি করেছেন। এই টাওয়ারের আঠারো তলায় উঠে ওই শিবের মূর্তি দেখতে পাওযা যায়। শিবের মন্দির ছাড়াও এখানে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। শহরে পূণ্যস্নান করতেও আসেন বহু পূণ্যার্থী। তবে ধর্মীয় আবহের কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণ, আমিষ খাবারের রেস্তোরাঁর খোঁজ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। মন্দির ছাড়াও এখানকার সমুদ্রতটের আকর্ষণে মুরুদেশ্বরে আসেন বহু মানুষ। শহর থেকে সওয়া এক ঘণ্টার নৌকাবিহারে যাওয়া যেতে পারে নেত্রানি নামের ছোট্ট দ্বীপে। এখানে স্কুবা ডাইভিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে।

লন্ডনের বাইরে

লন্ডনের বাইরে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেল চেস্টার চিড়িয়াখানা। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব লিডিং ভিজিটর্স অ্যাট্রাকশনস’ (এএলভিএ)-এর বিচারে টানা তিন বার এই তকমা পেল চেস্টারশায়ারের এই চিড়িয়াখানা। গত বছরে এখানে এসেছেন চোদ্দো লাখেরও বেশি দর্শক। টানা তৃতীয় বছর এই তকমা মেলায় উত্ফুল্ল চিড়িয়াখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেমি ক্রিস্টন বলেন, “আমরা যে ঠিক কাজ করছি এটি তার প্রমাণ।” তিনি বলেন, গত বছরে চিড়িয়াখানায় বাঘ, চিতা, গন্ডার— ইত্যাদি বহু প্রাণীর প্রজনন ঘটানো হয়েছে। এর ফলে এই প্রজাতির প্রাণীদের সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে এখানে পর্যটকদেরও সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরে চিড়িয়াখানায় দু’টি কমোডো ড্রাগনের আগমনে দর্শক সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, এখানে সম্প্রতি একটি বিরল প্রজাতির গ্রেভি জেব্রার জন্ম হয়েছে। দর্শকদের আকর্ষণ করতে তারাও যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছে। পর্যটকদের কাছে চিড়িয়াখানার চাহিদা আরও বাড়াতে এখানকার কর্তৃপক্ষ ‘আইল্যান্ড প্রজেক্ট’ নামে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রকল্প চালু করবে। আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি শেষ হবে বলে আশা করা যায়। প্রকল্পের অধীনে ছয় হেক্টর জমিতে চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণ করা হবে। এই জমিতে ফিলিপিন্স, পাপুয়া নিউ গিনি, বালি, সুমাত্রা, সুম্বা এবং সুলাওয়েসি থেকে প্রাণীদের আনা হবে। গোটা এলাকাটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

পরিষেবা

• ১ এপ্রিল থেকে রেলযাত্রা শুরু অসম থেকে মেঘালয়

পয়লা এপ্রিল থেকে অসমের দুধনোই থেকে মেঘালয়ের মেন্দিপাথার পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু করবে ভারতীয় রেল। নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জনসংযোগ আধিকারিক ডিসি বোরা জানিয়েছেন, দুধনোই-মেন্দিপাথার লাইনটি জাতীয় রেলওয়ে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে রেল মানচিত্রে মেঘালয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম পা রাখল ভারতীয় রেল। তিনি আরও জানান, ট্রেনটি প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হবে। কারণ, এই লাইনে এখনও পর্যন্ত ইন্টারলকিং সিস্টেম ও সিগনালিং সিস্টেমের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।

যদিও ১৯.৪৭ কিলোমিটার লম্বা এই লাইনটি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৯৯২-’৯৩ সালে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা সম্পূর্ণ করা যায়নি। পরে নতুন ভাবে এর কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে এর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বলেন, “অতীতে আমরা অনেক সুযোগ হারিয়েছি। রেলওয়ের সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদেরও মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে।”
১৮৯৫-’৯৬ সালে তত্কালীন ব্রিটিশ সরকার চেরা কোম্পানিগঞ্জ স্টেট রেলওয়ে লাইন মেঘালয়েই স্থাপন করেছিল। সেটা ছিল ভারতে সেই সময়ের অন্যতম প্রথম রেলপথ। সেই একই সময়ে দার্জিলিংয়ে হিমালয়ান রেলওয়ে তৈরি হয়েছিল। যা ‘টয় ট্রেন’ নামে পরিচিত।

টিকিট সংরক্ষণ হলেই মিলবে এসএমএস

ওয়েটলিস্টিংয়ে থাকা টিকিট সংরক্ষিত হলে এসএমএস-এর মাধ্যমে যাত্রীরা সেই খবর জানতে পারবেন। রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, টিকিট বুকিংয়ের সময় ফর্মে যে মোবাইল নম্বর যাত্রীরা লিখবেন, যাত্রার আগে সেই নম্বরেই ওয়েটিং লিস্ট থেকে সংরক্ষণ সংক্রান্ত এসএমএস আসবে। বর্তমানে টোল ফ্রি নম্বর ১৩৯-এ ফোন করে অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েটিং লিস্ট সংক্রান্ত তথ্য জানা যায়। স্টেশনে এসেও অনেকে খবর জেনে নেন। রেল মন্ত্রকের প্রযুক্তি বিভাগ ‘ক্রিস’ জানিয়েছে, এই এসএমএস পরিষেবা চালু হলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে যাত্রীরা টিকিট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাবেন। তবে, সেই সব যাত্রীরাই এসএমএস পাবেন, যাঁদের টিকিট ওয়েটিং লিস্ট থেকে সংরক্ষিত হবে।

উত্তরপ্রদেশে ৭টি বিমানবন্দর ঢেলে সাজাবে এএআই

উত্তরপ্রদেশে ৭টি বিমানবন্দর ঢেলে সাজানোর জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহের উপস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া একটি মউ চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রস্তাবিত ৭টি বিমানবন্দর হল যথাক্রমে- মেরঠ, মোরাদাবাদ, ফৈজাবাদ, আগরা, ইলাহাবাদ, বরেলি এবং কানপুর। এর মধ্যে মেরঠ, মোরাদাবাদ এবং ফৈজাবাদ বিমানবন্দরগুলি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। বাকি চারটি বিমানবন্দর- আগরা, ইলাহাবাদ, বরেলি ও কানপুর এ মুহূর্তে সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে। এই বিমানবন্দরগুলি সংলগ্ন জমি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিয়ে এয়ারপোর্ট অথরিটিকে সাহায্য করার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার সবুজ সঙ্কেতও দিয়েছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি জানিয়েছে, ভারতে টিয়ার-টু ও টিয়ার-থ্রি শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়াতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শতাব্দী এক্সপ্রেসের গতি বাড়াতে উদ্যোগ

যাত্রাকালীন সময় কমানোর জন্য দিল্লি-আগরা ও দিল্লি-চণ্ডীগড় রুটে শতাব্দী এক্সপ্রেসের গতি বাড়াতে (১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) উদ্যোগ নিল ভারতীয় রেল। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে এই দু’টি রুটকে বাছা হয়েছে। কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ চলছে। প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি হলে তা হাই স্পিড রেল কর্পোরেশনের কাছে পাঠানো হবে। এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর হাই স্পিড রেল কর্পোরেশনকে তিন মাসের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই দু’টি রুটে যে রেল লাইন পাতা রয়েছে, তাতে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে আরও দ্রুত গতির ট্রেন চালানো যায়। তার সঙ্গে রেলের কোচ ও ইঞ্জিনেও সামান্য উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তা হলেই এ বছরের শেষে এই দু’টি রুটে হাই স্পিড ট্রেন চালানো যেতে পারে।

বর্তমানে দিল্লি-আগরা রুটে কিছু জায়গায় শতাব্দী এক্সপ্রেস ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। যেখানে দিল্লি-চণ্ডীগড় রুটে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ট্রেন চালানো যায়। এই দু’টি রুটে পরীক্ষা সফল হলে দেশের বাকি শতাব্দী এক্সপ্রেসের রুটগুলিতেও তা কার্যকর করা হতে পারে।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE