পাত্রের বয়স ৯৫ বছর, পাত্রীর ৯০ বছর। ৭০ বছরের একত্রবাস পর্বের পর চার হাত এক হল নবতিপর দম্পতির। রাজস্থানের দুঙ্গারপুর জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত গালান্দার গ্রাম। সেখানেই বসেছিল ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আসর। পূর্ণতা পেল দীর্ঘ দিনের ভালবাসা। গোধূলি লগ্নে গাঁটছড়া বাঁধলেন রামা ভাই খারারি এবং জিওয়ালি দেবী। জোথ্রি পঞ্চায়েতের গলন্দর গ্রামে পরিবার, প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই দম্পতি।
আধুনিক সমাজে ‘লিভ-ইন’ বা একত্রবাস সম্পর্ক নিয়ে ছুতমার্গ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু ভারতের বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটি স্বীকৃত প্রথা। তেমনই রাজস্থানের ভগদ অঞ্চলে এই ধরনের মিলন সামাজিক ভাবে গৃহীত। এই দম্পতির কাহিনি এক উপজাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারাকেই বহন করে। এই প্রথাটি ‘নাট প্রথা’ নামে পরিচিত। সাত দশক ধরে নাট ঐতিহ্য মেনে একত্রবাস করতেন রামা এবং জিওয়ালি। চার ছেলে এবং দুই মেয়ে এই নবতিপর দম্পতির। এঁদের মধ্যে চার জন সরকারি চাকরি করেন। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছাকে মূল্য দিতেই বিয়েতে সম্মতি দেন রামা ও জিওয়ালি।
তাঁদের সন্তানেরাই একটি জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন করেন। সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১ জুন গায়েহলুদ অনুষ্ঠান হয়। ৪ জুন সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। নাচ, গানে মেতে ওঠেন দম্পতির পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও গ্রামবাসীরা। বরের বাড়ি থেকে ‘বিন্দৌলি’ নামের একটি প্রাক্-বিবাহ শোভাযাত্রারও আয়োজন করা হয়েছিল। সব শেষে আগুনের সামনে সাত পাক ঘুরে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়। ছিল সম্মিলিত ভোজের আয়োজনও। রাজস্থানের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি বছরের পর বছর ধরে এই ‘নাট ঐতিহ্য’ অনুসরণ করে আসছে। এখানে পুরুষ ও মহিলারা আনুষ্ঠানিক বিবাহ ছাড়াই একসঙ্গে থাকার অধিকার অর্জন করেন। তাঁদের সন্তানদের পিতার সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার জন্মায়। তবে এই সম্পর্কে যে সব মহিলারা থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কিছু বিধি আরোপ করা হয়ে থাকে।