—ফাইল চিত্র।
মে মাসে চুকে গিয়েছে লোকসভা ভোটের কর্মকাণ্ড। তার পরে চার মাসেও রাজ্যে গতি পায়নি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে প্রতি মাসে কর্মদিবস তৈরির যে-লক্ষ্যমাত্রা রাখা হত, তার চেয়ে খানিকটা বেশিই কাজ করে দেখাত বাংলা। ভোটের পরে ছবিটা কিন্তু ঠিক উল্টো। সেপ্টেম্বরকে ধরে পরপর পাঁচ মাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক গত বুধবার রাজ্যের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ‘মিড টার্ম রিভিউ’ করেছে। সেখানেও রাজ্যে কাজের শ্লথ গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। রাজ্যের কর্তারা কেন্দ্রকে আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলায় ১০০ দিনের কাজ চলে মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ে যে-কাজ হবে, তাতেই শ্রম দিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
কিন্তু এই শ্লথ গতি কেন? পঞ্চায়েতকর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নানা ধরনের পরিবর্তন করেছে। তাতে সম্পদ সৃষ্টিই একমাত্র লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সেই নিয়মকানুন মেনে কাজ করতে কিছুটা সময় লাগছে। বছর শেষে ঘাটতি মিটে যাবে। বিধানসভার সদ্য শেষ হওয়া অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ১০০ দিনের কাজের বিলিবণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী শর্ত চাপিয়ে প্রকল্পটি জটিল করে দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে গ্রামের গরিবদের মাটি কাটার কাজ দিতে সমস্যা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, আসলে যে-সব কাজ থেকে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ নেই, সে-ক্ষেত্রে কাজ না-করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। সেই হিসেবেই ব্যক্তি-মালিকানার পুকুর কাটা বা সংস্কার বন্ধ রাখা হয়েছে। নানা বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে মাটি কাটার কাজেও। সেই সঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েতকর্তাদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে কাজের হিসেব তোলার জন্য নতুন সফটওয়্যার নিয়েও নানা জটিলতা আছে।
যদিও জেলা স্তরের অফিসারদের অনেকেই মানছেন, লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের ৩,৩৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত আগের মতো সক্রিয় নয়। পঞ্চায়েত প্রধানদের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প গতি হারাচ্ছে। তৃণমূল পরিচালিত বহু পঞ্চায়েত তো ভোটের পর থেকে বন্ধই ছিল। সেগুলি সবে খুলতে শুরু করেছে। তার উপরে যে-সব জায়গায় বিজেপি জিতেছে, সেখানে কাজের প্রাপকদের নিয়েও দলাদলি শুরু হয়েছে। যার ফলে আদতে মার খাচ্ছে ১০০ দিনের কাজ।
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাজ ভাল হচ্ছে। কিন্তু কিছু জায়গায় ১০০ দিনের কাজে বাধা দিচ্ছে বিজেপি। পঞ্চায়েত সক্রিয় হয়ে আগামী ছ’মাসে আরও বেশি কাজ করবে। তাতে আমাদের শ্রম দিবসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’’ মন্ত্রীর অভিযোগ শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, ১০০ দিনের কাজ কেন্দ্রীয় প্রকল্প। বিজেপি তাতে বাধা দেবে কেন? ‘‘আসলে গ্রামের মানুষ এই প্রকল্পে চুরি ঠেকাতে তৎপর হয়েছেন। তাতেই চাপে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল পঞ্চায়েতগুলি। গত কয়েক বছরে অনেক চুরি হয়েছে। সেগুলো আর চলবে না,’’ বলছেন দিলীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy