আর দশটা সাধারণ যাত্রীর মতোই রবিবার, দোলের দিন রাতে তাঁরা ঢাকা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। কিন্তু, ওই ১১ জন দক্ষিণ আফ্রিকার যুবককে দেখে সন্দেহ হয় কলকাতা বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতরের অফিসারদের। সে দিন থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁদের বিমানবন্দরেই আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন অভিবাসন দফতরের কর্তারা। বিধাননগর পুলিশের হাতে তাঁদের তুলে দেওয়া হতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, এই ১১ জন যুবকের কাছে ভারতে ঢোকার পর্যটক ভিসা থাকলেও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারণ, তাঁরা এ দেশে ‘তবলিক জামাত’ বা ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসেছেন। অথচ ভিসার কাগজে সেই কারণ লেখা ছিল না। বাংলাদেশেও তাঁরা বেশ কিছু দিন ধরে এই কাজ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই কর্তা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজনদের ‘এন্ট্রি রিফিউজাল’-এর অধিকার আর সব দেশের মতো ভারতেরও রয়েছে। প্রাথমিক জেরার পরে জানা গিয়েছে, কলকাতায় ধর্মপ্রচারের পর বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেখানেও তাঁরা একই কাজ করতেন বলপে জানিয়েছেন। বেশ কিছু দিন দক্ষিণ ভারতে কাটিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ওই যুবকদের। পাকিস্তানের ভিসা দেখেই সন্দেহ দানা বাঁধে অভিবাসন দফতরের। এখন ওই যুবকদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।
তবে আটক যুবকদের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই। এ রাজ্যে মুসা নামে যে আইএস জঙ্গি ধরা পড়েছে, সে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও তামিলনাড়ুতে গিয়ে ডেরা বেঁধেছিল। দক্ষিণ ভারতের কিছু ছেলে সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এর জঙ্গি দলে নাম লেখান বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন। বেশ কিছু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইদানিং ভারতে এসে কিছু দিন মুর্শিদাবাদ, মালদহে থাকার পরে দক্ষিণ ভারতে চলে যাচ্ছেন বলেও খবর। ফলে ঢাকা থেকে আসা ১১ যুবকের কলকাতা-বেঙ্গালুরু হয়ে পাকিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনায় সন্দিহান নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি।
যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, এঁরা সকলেই সন্দেহভাজন এবং তাঁদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। কিন্তু এই ১১ জন যুবককে নিয়ে রবিবার রাত থেকে কম নাটক হয়নি বিমানবন্দরে। নোভো এয়ার নামে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার উড়ানে তাঁরা কলকাতায় আসার পরে প্রথমে ভাষার সমস্যা দেখা দেয়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দা হলেও তাঁরা কিছুতেই ইংরেজিতে কথা বলতে চাইছিলেন না। নিজেদের মধ্যে এমন কোনও ভাষায় কথা বলছিলেন, যা বিমানবন্দরের অফিসারেরা বুঝতে পারছিলেন না।
রবিবার রাত থেকে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের দোতলায় অভিবাসন দফতরের একটি ঘরে তাঁদের রাখা হয়েছে। কেন তাঁদের ভারতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই যুবকরা। কয়েক জন চিৎকার চেঁচামেচিও শুরু করেন। রবিবার রাত থেকে যে খাবারই তাঁদের দেওয়া হয়েছে, কোনওটাই তাঁদের পছন্দ নয় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কলকাতায় নামার পর থেকে বেশ কয়েক বার তাঁদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হয়। তাঁদের মালপত্রও খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। তল্লাশি এড়াতে বেশ কয়েক জন অসুস্থতার কথা বলেন। বিমানবন্দরের মেডিক্যাল ইউনিট থেকে চিকিৎসকদের ডেকে তাঁদের চিকিৎসাও করানো হয়। তাঁদের রক্ত পরীক্ষা ও ইসিজি-ও করানো হয়েছে বলে বিমানবন্দরের এক অফিসার জানিয়েছেন। যদিও পরে এক অফিসার জানান, সবটাই নাটক। এঁরা কেউই অসুস্থ নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy