Advertisement
E-Paper

১৪৪ ঘণ্টা ধরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’! এক কোটি টাকা খোয়ালেন বৃদ্ধ, ন’জন ধৃত কলকাতা-দিল্লি থেকে

ধৃতদের মধ্যে এক মহিলাও রয়েছেন। তাঁর নাম সুকৃতি চৌধুরী। কলকাতার হরিদেবপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুকৃতিই ওই প্রতারণাচক্রের ‘মাস্টারমাইন্ড’।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫২
Share
Save

টানা ১৪৪ ঘণ্টা ধরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টের’ শিকার হলেন আসানসোলের এক অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। খুইয়েছেন এক কোটি তিন লক্ষ টাকাও! অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে কলকাতা এবং দিল্লি থেকে ন’জনকে গ্রেফতার করল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা এবং সাইবার অপরাধ বিভাগ।

ধৃতদের মধ্যে এক মহিলাও রয়েছেন। তাঁর নাম সুকৃতি চৌধুরী। কলকাতার হরিদেবপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুকৃতিই ওই প্রতারণাচক্রের ‘মাস্টারমাইন্ড’। বাকিরা নেপাল-চিন-দক্ষিণ কোরিয়া এবং এ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সাইবার গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন। গ্যাংটির মোট ৪০টি অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব ক’টি অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকা জমা রাখা ছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ ছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ১০ তারিখ তাঁর কাছে একটি ক্যুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ কল আসে। তারা দাবি করে, চঞ্চলের আধার কার্ড ব্যবহার করে বেশ কিছু পার্সেল ব্যাঙ্ককে পাঠানো হয়েছে। ওই পার্সেলে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। এর পরেই দিল্লি সাইবার ক্রাইম এবং সিবিআইয়ের নামে ফোন আসে। ভিডিয়ো কলও করা হয় তাঁকে। চঞ্চলকে জানানো হয়, তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে। ভিডিয়ো কলে ফোনের ও পারে উর্দিধারী কিছু লোককেও দেখতে পান চঞ্চল। এর পর তাঁকে ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে এক কোটি তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন প্রতারকেরা।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে শুরুতেই দেখা হয়, চঞ্চলের টাকা প্রথমে কোনও অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। দেখা যায়, প্রথমে শিলিগুড়ির একটি অ্যাকাউন্টে ৬৭ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়। সেই অ্যাকা‌উন্টের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কলকাতা থেকে সুকৃতি-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয় দিল্লি থেকে।

কী ভাবে করা হয় ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’?

তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রথম ধাপে কোনও ব্যক্তিকে ক্যুরিয়ার সার্ভিস, এয়ারপোর্ট অথরিটি বা ‘ট্রাই’ এই ধরনের সংস্থার নাম করে ফোন করা হয়। সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, ‘‘আপনার নামে একটি পার্সেল ধরা পড়েছে ‘কাস্টমসে’, যার মধ্যে থেকে মাদক বাজেয়াপ্ত হয়েছে।’’ আবার অনেক সময়ে বলা হয়, ‘‘আপনার নামে একাধিক আধার কার্ড বা প্যান কার্ড পাওয়া গিয়েছে, যা বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হয়েছে।’’ দ্বিতীয় ধাপে ভিডিয়ো কল করা হয় ওই ব্যক্তিকে। ইডি, সিবিআইয়ের নকল দফতর তৈরি করে ভিডিয়ো কল করা হয়। এফআইআর করে গ্রেফতার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ভয় তৈরি করা হয় মনে। এর পর নিজেদের আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট মেমো’ও পাঠানো হয়। শেষে সেই মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। তাতেই পা দিয়ে ফেলছেন বহু মানুষ। এই ফাঁদে পা দিলেই সর্বনাশ।

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (সদর) অরবিন্দকুমার আনন্দ বলেন, ‘‘ডিজিটাল অ্যারেস্টের জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। আইনে এই ধরনের কোনও কিছুর উল্লেখ নেই। তদন্তের জন্য কোনও সংস্থাই কাউকে ফোনে বা ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ করে না।’’

Digital Arrest Asansol

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}