Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মতুয়া মহাসঙ্ঘে ফাটল, তৈরি হচ্ছে দু’টি কমিটি

প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে দুই দেওরপো, মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুর। তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি তৈরি করলেন বুধবার। দেওরপো সুব্রত ঠাকুর জানান, তিনি বৃহস্পতিবার পাল্টা কমিটি গড়বেন। জেঠিমার বুদ্ধিকে কটাক্ষ করে তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগও আনলেন সুব্রত। দুই পক্ষই ‘শেষ দেখে ছাড়া’-র মনোভাব নিয়েছে।

মতুয়া মহাসঙ্ঘের নামের তালিকা হাতে মমতাবালা দেবী।—নিজস্ব চিত্র।

মতুয়া মহাসঙ্ঘের নামের তালিকা হাতে মমতাবালা দেবী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
Share: Save:

প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে দুই দেওরপো, মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুর। তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি তৈরি করলেন বুধবার। দেওরপো সুব্রত ঠাকুর জানান, তিনি বৃহস্পতিবার পাল্টা কমিটি গড়বেন। জেঠিমার বুদ্ধিকে কটাক্ষ করে তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগও আনলেন সুব্রত। দুই পক্ষই ‘শেষ দেখে ছাড়া’-র মনোভাব নিয়েছে।

‘বড়মা’-র পরিবারে ফাটল ধরতে টানাপড়েন শুরু হয়েছে গোটা মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেই। কপিলকৃষ্ণ এবং মঞ্জুলকৃষ্ণের খুব সদ্ভাব ছিল না বহু দিনই। তৃণমূল সাংসদ তথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রাক্তন সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ প্রয়াত হওয়ার পর ফাটল আরও চওড়া হয়। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা, আর পরিবারের সম্পত্তির উপরে দখল রাখার মরিয়া চেষ্টার জন্যই দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার মমতাবালা মতুয়াদের সমর্থন পেতে মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি তৈরি করেন। এ দিন ১৫১ জনের নামের তালিকা ঘোষণা করে মমতাবালা জানান, ১৫ দিনের মধ্যে এই সদস্যেরা সঙ্ঘাধিপতি, সভাপতি-সহ অন্য পদে মনোনয়ন করবেন।

মঞ্জুলকৃষ্ণ এবং সুব্রত ঘোষণা করেছেন, তাঁরা বৃহস্পতিবার নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন। সুব্রতর প্রতিক্রিয়া, “সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্যাড চুরি করে তাতে কিছু নাম লিখে কমিটি গড়া হয়েছে বলে চালানো হচ্ছে। ওই প্যাডে কারও সই নেই। এমন কমিটির কোনও আইনি বৈধতা নেই।” সুব্রতর দাবি, প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার দিন (যা এ বছরে পড়েছে ৬ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার) সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি গড়া হয়। সেই মতোই এ বারও গড়া হবে।

উত্তর ২৪ পরগনা এবং সংলগ্ন এলাকায় নিজের রাজনৈতিক জমি শক্ত করার ক্ষেত্রে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে বেশ কিছু বছর ধরেই পাশে পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এ বার ‘বড়মা’-র পরিবারের দুই শাখার দ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকেও। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রয়াত সাংসদের পত্নীর দিকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের। দলের এই অংশটিই গত লোকসভা ভোটে সুব্রত ঠাকুরকে টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল।

কেন ভাঙা হল কমিটি? মমতাবালার দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসে কপিলবাবুই কমিটি ভেঙে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, পরে গণতান্ত্রিক উপায়ে মতুয়া ভক্তেরা যেন কমিটি গড়ে। কপিলবাবু মুখে কমিটি ভাঙার কথা বলেছিলেন, তা মেনে নিয়েও মঞ্জুলের বক্তব্য, “এ ভাবে কমিটি ভাঙা বৈধ নয়।” তাঁর দাবি, পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী বড় ছেলেই সঙ্ঘাধিপতি হন। তাই তিনিই উত্তরসূরী।

সুব্রত এ দিন বলেন, “জেঠিমার বিদ্যা-বুদ্ধি কম। ওঁকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছে কেউ কেউ।” মমতাদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, “মতুয়া ভক্তেরা নিজেরাই কমিটি গড়েছেন। আমি কেউ নই।”

এ অবস্থায় মতুয়াদের একাংশ মনে করছেন, বড়মা যাঁকে সমর্থন করবেন, তাঁর সঙ্গেই থাকবেন মতুয়ারা। তবে দু’টো কমিটি তৈরিকে গ্রহণ করতে পারছেন না অনেকে। আগরপাড়ার ভক্ত সুভাষচন্দ্র মন্ডল বুধবার বলেন, “দু’টো কমিটি হতে দেব না। কমিটি একটাই থাকবে, দরকারে মতুয়ারাই দায়িত্ব নেবেন।”

তবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের একাংশ মনে করছে, মতুয়া ভোটে ফাটল ধরলে লাভ বিজেপির। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “ঠাকুরবাড়ির ভিতরের দ্বন্দ্ব অনেক ভক্তের আবেগকে আঘাত করছে। তাঁরা বিজেপিতে ঝুঁকছেন।” জেলা তৃণমূলের এক নেতাও বলেন, “ঠাকুরবাড়ির দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব মেটাচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দিনের পর দিন তা দেখে তৃণমূল সমর্থক ভক্তরা দলের প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE