Advertisement
E-Paper

ঠাঁই পেতে পারে ৪০, তবু ক্লাসে ২০০ জন!

কিছু দিন আগে স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা মানদণ্ডের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট সামনে এসেছিল। দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্কুলগুলি কী ভাবে চলছে, তা-ই নিয়ে সমীক্ষা করেছিল কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিয়মবিধি অনুযায়ী সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ৪০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী থাকার কথা নয়। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ জেলাতেই স্কুলের এক-একটি ক্লাসে রয়েছে চল্লিশের বেশি পড়ুয়া। কোনও কোনও শ্রেণিতে সংখ্যাটা ১০০ ছাড়িয়েছে। এমনকি এক জেলায় এমন একটি শ্রেণিকক্ষের খোঁজ মিলেছে, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২০০! সম্প্রতি সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

কিছু দিন আগে স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা মানদণ্ডের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট সামনে এসেছিল। দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্কুলগুলি কী ভাবে চলছে, তা-ই নিয়ে সমীক্ষা করেছিল কেন্দ্র। সেই রিপোর্টে দেখা যায়, শিক্ষামান ও ফলাফল এবং পরিকাঠামোয় পশ্চিমবঙ্গের স্থান পঁয়ত্রিশে। কেন কেন্দ্রীয় রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের স্থান হল তলানিতে, রাজ্যের সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টে তারই যেন ব্যাখ্যা মিলল।

সর্বশিক্ষা মিশনের ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সব থেকে খারাপ অবস্থা দার্জিলিং জেলার। সেখানে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে এক-একটি ঘরে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩০.৩২। মাধ্যমিক স্কুলগুলির ছবি আরও খারাপ। সেখানে এক-একটি ঘরে পড়ুয়ার সংখ্যা ২০৪.৩৩ জনের মতো। আলিপুরদুয়ারে মাধ্যমিক স্কুলের এক-একটি ঘরে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২১.৪৬। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে এক-একটি ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৭৫.৯৭। কালিম্পংয়ে উচ্চ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে স্কুলে এক-একটি শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রী আছে যথাক্রমে ১২২.৬৬ জন এবং ১৯৪.৪৭ জন।

শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিণবঙ্গেরও বেশ কিছু জেলার স্কুলের ছবি অনেকটা একই। পুরুলিয়ার মাধ্যমিক স্কুলগুলির শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৮.৮৯। পূর্ব, পশ্চিম বর্ধমানেও মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে শ্রেণিকক্ষ-পিছু পড়ুয়ার সংখ্যা চল্লিশের অনেক বেশি। ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র কলকাতা জেলাতেই প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব স্তরের স্কুলে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা চল্লিশের কম। এর কারণ কী? শিক্ষা শিবিরের অনেকের ব্যাখ্যা, কলকাতায় সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা খুব কম। বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই পড়ে বেসরকারি স্কুলে।

সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই যথেষ্ট শ্রেণিকক্ষ নেই। নতুন ঘর নির্মাণ করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু জেলার বেশির ভাগ স্কুলই বেশ পুরনো। তাই সেখানে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরির ক্ষেত্রে নানা অসুবিধা আছে। ‘‘স্কুলবাড়ির উচ্চতা বাড়িয়ে দোতলার জায়গায় তেতলা করলেও সুরাহা হয়। কিন্তু তেতলার ভিত না-থাকলে সেটা করা সম্ভব নয়। আবার লম্বায় স্কুলবাড়ি বাড়াতে হলে জমি প্রয়োজন। সেই বাড়তি জমিও নেই অনেক স্কুলে,’’ বলেন ওই শিক্ষাকর্তা।

এই রিপোর্ট নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার স্কুলের বাহারি উন্নয়নের বিষয়ে বেশি মনোযোগী। তার ফলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্য ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে সরকারেরই নজর দেওয়া উচিত।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের বক্তব্য, স্কুলগুলো যখন তৈরি হয়েছিল, তখন বোধ হয় এটা ভাবনার মধ্যে ছিল না যে, ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রী উপচে পড়তে পারে। কী ভাবে বিভিন্ন স্কুলে শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো যায়, তা নিয়ে সরকারকে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

Sarba Siksha Abhiyan Education West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy