Advertisement
E-Paper

করোনা জয় করে ফের কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসকেরা

২০১২ সালে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসাবে কর্মজীবন শুরু দিলীপের।

প্রসেনজিৎ সাহা ও  নবেন্দু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩৯
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে সোমবার কাজে যোগ দিলেন মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক দিলীপ বিশ্বাস। প্লাজমা দান করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

২০১২ সালে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসাবে কর্মজীবন শুরু দিলীপের। বাড়ি কলকাতার গড়িয়ায়। তবে বৃদ্ধা মা গুরুদাসি বিশ্বাস ও ভাইঝিকে নিয়ে থাকেন মিনাখাঁর চিকিৎসক কোয়ার্টারে। ২২ জুলাই রাতে বছর ছত্রিশের দিলীপের মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। সেই সঙ্গে গলা ব্যথা। পর দিন হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষা করান। বুঝতে পারেন, কোনও কিছুর স্বাদ বা গন্ধ পাচ্ছেন না। ২৩ তারিখ থেকেই বাড়িতে পৃথক ভাবে থাকতে শুরু করেন ডাক্তারবাবু। ২৫ তারিখ রিপোর্ট এলে দেখা যায়, করোনা পজ়িটিভ। তাঁর মায়ের করোনা পরীক্ষা করানো হয় ২৬ তারিখ। ৩০ তারিখ জানা যায়, ৬৮ বছরের গুরুদাসিও করোনা আক্রান্ত। তবে তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল না। এই সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছে পরিবারটি। দিলীপ বলেন, “পাড়ার ছেলেরা বাজার, ফল কিনে আনতেন। ওঁরা আবাসনের বাইরে দিয়ে যেতেন। পাশের যে বাড়িটি থেকে সারা বছরই হোম ডেলিভারি নেওয়া হত, তাঁরাও খাবার দেওয়া বন্ধ করেননি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব সাহায্য করেছেন প্রতিবেশীরা।” দিলীপ আরও জানান, মূলত এই সময়ে বই পড়ে, টিভি দেখে ও পরিচিতদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সময় কাটিয়েছেন। শারীরিক অবস্থার তেমন অবনতি না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে দু’বার করোনা পরীক্ষা করান দিলীপ ও তাঁর মা। দু’জনই এখন করোনামুক্ত।

সোমবার কাজে যোগ দিয়ে দিলীপ বলেন, “করোনা মারাত্মক কোনও অসুখ নয়। এটা সকলের জানা দরকার। তাই কেউ ভয় পাবেন না। আর সমাজের অন্যদের উচিত, আক্রান্তদের প্রতি খারাপ আচরণ না করা। সমাজের আচরণ অনেকখানি প্রভাব ফেলে আক্রান্তের মনে, যা করোনা সংক্রমণের থেকেও বেশি মারাত্মক।” মিনাখাঁ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাজু মণ্ডল বলেন, “এই চিকিৎসকের করোনা জয় করে আবার কাজে ফেরা আরও একবার প্রমাণ করল, চিকিৎসকেরা যে কোনও প্রতিকূলতার মধ্যেও রোগীর সেবা থেকে বিরত হন না। এই উদাহরণ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বাড়াবে।” করোনাকে জয় করে কাজে যোগ দিলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের তিন চিকিৎসকও। সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে এলে তিন চিকিৎসককে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিন কুড়ি আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের এই তিন চিকিৎসক। সেই থেকেই কেউ নিজেদের বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন, কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। অবশেষে তিনজনই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সোমবার কাজে যোগ দিলেন। এ দিন সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে এসে কাজে যোগ দিতে গেলে চিকিৎসক জনার্দন মণ্ডল, বিকাশ সিংহ ও মৃণালকান্তি দাসকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। অভ্যর্থনা জানান অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও। জনার্দন বলেন, “হাসপাতালে কাজ করতে গিয়েই আক্রান্ত হই। সুস্থ হয়ে আবারও কাজে যোগ দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ অন্য দুই চিকিৎসক বলেন, ‘‘বহু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে, সে কারণেই সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজে যোগ দিয়েছি।” এই তিন চিকিৎসক ছাড়াও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের আরও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক রোগী দেখতে গিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। দিন দশেক আগে এই হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক শাহনাওয়াজ করোনা জয় করে ফিরে এসে ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করেছেন। কয়েকজন চিকিৎসক এখনও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ও গৃহ নিভৃতবাসে রয়েছেন।

coronavirus in west bengal Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy