Advertisement
E-Paper

রক্তাক্ত মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে

লোকমুখে কথাটা ভেসে এসেছিল অজয় সাধুখাঁর কানে। বছর তেইশের যুবক নেহাতই কৌতুহলবশতই পৌঁছে যান লাইনের ধারে। দেখেন, তখনও দেহে প্রাণ আছে মহিলার। 

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৮
হাসপাতালে নিেয় যাওয়া হচ্ছে মহিলাকে। ইনসেটে, অজয় সাধুখাঁ। শনিবার ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

হাসপাতালে নিেয় যাওয়া হচ্ছে মহিলাকে। ইনসেটে, অজয় সাধুখাঁ। শনিবার ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

ট্রেনের ধাক্কা লেগে রেল লাইনের পাশে ছিটকে পড়েছিলেন মহিলা। যন্ত্রণায় ছটছট করছিলেন। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছিল। অথচ, তাঁকে ঘিরে থাকা ভিড়টার মুখে তখন শুধুই কৌতুহল। মধ্যে মধ্যে ভেসে আসছিল কিছু ‘আহা-উহু’ ধ্বনি। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে যে প্রাণটা বাঁচে, তা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই।

লোকমুখে কথাটা ভেসে এসেছিল অজয় সাধুখাঁর কানে। বছর তেইশের যুবক নেহাতই কৌতুহলবশতই পৌঁছে যান লাইনের ধারে। দেখেন, তখনও দেহে প্রাণ আছে মহিলার।

অজয়ের বাবা ভ্যানচালক। বাড়িতে রাখা ছিল ভ্যান। অজয় এক দৌড়ে পৌঁছে যান বাড়িতে। সেখান থেকে ভ্যান নিয়ে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। ধরাধরি করে মহিলাকে ভ্যানে চাপিয়ে চলে যান হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য মারা যান রিনা দেবনাথ (৫০) নামে ওই মহিলা।

হাবড়া হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ বলেন, ‘‘মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। জ্ঞান ফেরেনি। মাথায় চোট ছিল। কোমরের হাড়ও ভেঙেছে। আগে আনলেও বাঁচানো সম্ভব হত কিনা বলা কঠিন।’’

আগা আনা কি সত্যিই অসম্ভব ছিল? সেখানেই উঠছে প্রশ্ন।

শনিবার সকাল ১১টা ২০ নাগাদ ঘটনাটি ঘটে হাবড়ার ইতনা নতুন কলোনি এলাকায় বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায়। তারপরে আরও পঁচিশ মিনিট তাঁকে ঘিরে ভিড়টা শুধু আলোচনাই করেছে। আর হা-হুতাশ। কিন্তু জখম মহিলাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সাহস বা উদ্যোগ— কোনওটাই দেখায়নি।

পেশা চা-দোকানি অজয়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘কয়েক জন বন্ধুর সাহায্যে যখন মহিলাকে ভ্যানে তুলছি, তখনও কেউ কেউ ভিড়ের মধ্যে থেকে বলেছে, ছেড়ে দে, থানা-পুলিশের ঝামেলায় পড়বি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, যা হওয়ার হবে। আগে একটা মানুষের প্রাণটুকু বাঁচানোর চেষ্টা তো করি!’’

অজয়ের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী দাসও রিনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘‘চোখের সামনে একটা মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। চিনি না, জানি না। কিন্তু তা বলে এমন বিপদের সময়ে হাত গুটিয়ে থাকতে পারিনি।’’

রেল পুলিশ ও হাসপাতালে সূত্রের খবর, রিনার বাড়ি কাছেই বাণীপুরে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর স্বামী সুভাষ কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকেন। রিনার স্নায়ুর সমস্যা ছিল। চিকিৎসাও চলছিল। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। ছেলে সৌমেন বলেন, ‘‘মা কী কারণে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন, জানি না। ওঁকে বাঁচানো গেল না ঠিকই, কিন্তু যাঁরা মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন, তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’

হাবড়ার বাসিন্দা শান্তি সাহা বহু বার ট্রেনের ধাক্কায় জখমদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছেন। অজয়ের কথা শুনে তিনি এ দিন বলেন, ‘‘খুবই ভাল কাজ করেছেন ওই যুবক। মানুষের বোঝা উচিত, কারও প্রাণ বাঁচানোটা সব থেকে আগে। আমি বহু বার এ কাজ করে দেখেছি, থানা-পুলিশের কোনও ঝামেলাও হয় না।’’

Injury Woman Hospital Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy