Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজকে বাড়ি ফিরিয়েই আনন্দ পান রফিকুজ্জামান

কারও বাড়ি বিহার, কারও বাংলাদেশ। ওঁরা সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন, অসুস্থ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাস্তায়। রাস্তা থেকে তুলে এনে তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন রফিকুজ্জামান।

রফিকুজ্জামান।

রফিকুজ্জামান।

  নির্মল বসু
বসিরহাট: শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৬
Share: Save:

কারও বাড়ি বিহার, কারও বাংলাদেশ। ওঁরা সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন, অসুস্থ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রাস্তায়। রাস্তা থেকে তুলে এনে তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন রফিকুজ্জামান।

এই হল বাদুড়িয়া থানার আটঘরা গ্রামের রফিকুজ্জামানের ব্রত। বছর ছত্রিশের রফিকুজ্জামান ইতিমধ্যেই ৯ জন এমন মানুষকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। এ বারে মূক ও বধির এক মহিলার ঠিকানা খুঁজে তাঁকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।

মহিলার নাম জয়মালাদেবী। বিহারের বিহারিগঞ্জ থানার রাজগঞ্জ গ্রামে বাড়ি। জয়মালাদেবী স্থানীয় একটি হোমে আছেন। আজ, বৃহস্পতিবার বিহার থেকে কয়েকজন আসছেন তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। সেখানে তাঁর সন্তান তাঁর জন্য অপেক্ষায়।

ছোটবেলাতেই রফিকুজ্জামানের বাবার মৃত্যু। কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাঁর পড়াশোনা। রুদ্রপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পরে বেশি দূর পড়তে পারেননি। তিন মেয়ে, স্ত্রী, অসুস্থ মা এবং ঠাকুমাকে নিয়ে তাঁর সংসার। এরই মধ্যে সময় পেলেই ঘুরে বেড়ান মানসিক ভারসাম্যহীনের খোঁজে। কাউকে পেলে বাড়িতে আনেন। হাসপাতালে ভর্তি রেখে সাধ্যমতো চিকিৎসাও করান। তার পর তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন। এ কাজে প্রতিবেশীরাও তাঁকে অল্প-বিস্তর সাহায্য করেন।

বাংলাদেশের জামালপুরে বাড়ি সফিকুল ইসলামের। অসুস্থ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। চোখে পড়ে যায় রফিকুজ্জামানের। তাঁকে বাড়িতে এনে শুরু করেন চিকিৎসা। একদিন বাংলাদেশে নিজের গ্রামে তাঁকে পাঠিয়েও দেন। সেই শুরু। এর পর উত্তর প্রদেশের গাজিপুরের প্রেম সিংহ, বিহারের ছাপরার আবুল কালাম, অন্ধ্রপ্রদেশের রাঙা রেড্ডি, বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার ওমর আলি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাশীপুরের নাসিরউদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশের যশোরের মৃদুল, বাংলাদেশের খুলনার মহিদুল ইসলাম, বিহারের মাধোপুরের পাপ্পুকুমার সিংহকে রফিকুজ্জামান রাস্তা থেকে তুলে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠান। এ বার জয়মালাদেবীকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেছেন।

গ্রামেরই একজনের এ হেন ভূমিকায় খুশি স্থানীয় মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বাদুড়িয়ার কাদম্বিনী গার্লস হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা সাহানা পারভিন বলেন, ‘‘উনি যে ভাবে একের পর এক অসুস্থ মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে এনে তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠাচ্ছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। ওঁর কাজে আমরা মুগ্ধ।’’

আর রফিকুজ্জামান নিজে কী বলছেন?

রফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ বড় অসহায়। তাই ওঁদের সাধ্যমতো সাহায্য করি। দরকার পড়লে চিকিৎসা করাই। তার পর ঠিকানা জোগাড় করে তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠাই। কাজটা ভাল লাগে।’’ তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে তিনি এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্যও নেবেন। খুলবেন এই সংক্রান্ত একটি পোর্টালও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Personality Unique Missing Diaries Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE