চলন্ত নাগরদোলায় উঠে নিজস্ব তুলতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হল একাদশ শ্রেণির এক কিশোরীর। ঘটনাটি ঘটেছে গোসাবার কুমিরমারিতে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে নাগরদোলা মালিককে। এই ঘটনার পরে, মঙ্গলবার থেকে মেলা বন্ধ করে দিয়েছে কমিটি।
ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে পাঁচ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা বসেছে কুমিরমারিতে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এই আয়োজন। সোমবার রাতে সেখানে অনুষ্ঠান করতে আসার কথা ছিল টলিউডের এক অভিনেত্রীর। প্রচুর ভিড় হয়েছিল। বিকেলের দিকে মেলায় এসে বৈদ্যুতিক নাগরদোলায় ওঠে তিন স্কুল ছাত্রী। অভিযোগ, চলন্ত নাগরদোলায় ‘সেলফি’ তোলার সময়ে ছিটকে পড়ে যায় সকলে। চেয়ারের একটি ‘নাট’ খুলে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
গুরুতর জখম সায়ন্তনী মণ্ডলকে (১৭) রাতেই কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সেখানে মৃত্যু হয়েছে তার। সায়ন্তনীর দুই বন্ধু মানসী মণ্ডল ও টুম্পা মণ্ডল অল্পবিস্তর চোট পেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে তাদের।
নাগরদোলার মালিক অমল বৈদ্যকে মঙ্গলবারই গ্রেফতার করে সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ। বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হয় তাঁকে। অমল বলেন, ‘‘অনেকে ছেলেমেয়েই নাগরদোলায় উঠে সেলফি তুলছিল। বার বার বারণ করা হলেও শোনেনি। নাগরদোলায় উঠে চলন্ত অবস্থায় নড়াচড়া করতে গিয়ে বসার জায়গার একটা নাট কোনও ভাবে খুলে গিয়েছিল। ওরা নিজেরা নড়াচড়া করছিল বলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নীচে পড়ে যায়।’’
সায়ন্তনীর বন্ধু মানসীর অবশ্য দাবি, নাগরদোলায় বসে ছবি তুললেও খুব বেশি নড়াচড়া করেনি তারা। তবে আচমকাই প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। তিন জনই পড়ে যায় উপর থেকে। মেয়েটির কথায়, ‘‘মেলায় আনন্দ করতে গিয়ে এ ভাবে বন্ধুকে হারাতে হবে ভাবতে পারিনি।’’
মেলা কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা কুমিরমারি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঙ্কন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই দুর্ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। আমরা ওই কিশোরীর পরিবারের পাশে আছি। আগামী দিনে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমরা সচেষ্ট থাকব।’’
নাগরদোলায় উঠে ঝুঁকি নিয়ে নিজস্বী তুলতে গিয়ে বিপদ এই প্রথম নয়। মাস দু’য়েক আগে বারুইপুরে একটি মেলাতেও নাগরদোলায় উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে ছিটকে পড়েন এক মহিলা, এক কিশোরী। সে বার অবশ্য ‘বরাত জোরে’ বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা।
মৃতের বাবা তুষার মণ্ডল বলেন, ‘‘ছোট থেকেই নাগরদোলায় চড়তে ভালবাসত। সেই নাগরদোলাই যে ওর প্রাণ কেড়ে নেবে, ভাবতেই পারছি না। নাগরদোলার নাট যদি না খুলত, তা হলে হয় তো মেয়েটা বেঁচে যেত!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)