প্লাস্টিকে মোড়া বধূর দেহ বের করছেন এলাকার বাসিন্দারা। — নিজস্ব চিত্র।
এক গৃহবধূকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগে স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উস্থির রাজারহাটের ঘটনা। মৃতার নাম ওজিফা বিবি (২৪)।
ওই বধূর বধূর মৃত্যুর খবর ছড়াতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ দেহ উদ্ধারে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। মেয়েটির শ্বশুরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জখম হন উস্থি থানার সাব ইনস্পেক্টর সন্দীপ পাল এবং দুই গ্রামবাসী। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ডিএসপি (ফলতা) বিশাল পুলিশবাহিনী, র্যাফ নিয়ে গিয়ে দেহ উদ্ধার করেন। মৃতার পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে পুলিশ ওই ওজিফার স্বামী ইমরান শেখ, শ্বশুর ইস্রাফিল শেখ এবং শাশুড়ি সালমা বিবিকে গ্রেফতার করে। ঘটনাচক্রে, ইস্রাফিল সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লার মাসতুতো ভাই।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইমরানের সঙ্গে ওজিফার বিয়ে হয় তিন বছর আগে। তাঁদের এক ছেলে রয়েছে। অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পণের জন্য চাপ দিতেন ওজিফাকে। মারধরও করা হত তাঁকে। ওজিফার বাপের বা়ড়ির লোকজনের দাবি, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করতেন ওজিফার বাবা ওয়াজেদ আলি শেখ। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত স্তরে সালিশিও হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। অত্যাচার বন্ধ হয়নি।ওয়াজেদ আলি শেখ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দুপুরে ইস্রাফিল আমাকে ফোন করে বলে, মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে। ওরা মিথ্যে বলছে। দিনের পর দিন মেয়ের উপর অত্যাচার করা হত। আজ মেরে ফেলে দেহ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার গল্প ফাঁদছে। এর বিচার চাই।’’ পড়শি আমিনা বিবি এবং সুফিয়া বিবিরা জানান, পাড়ায় ইস্রাফিলের পরিবার কার্যত একঘরে ছিল। ওজিফার উপর অত্যাচারের জন্য গ্রামের কেউ ওদের পছন্দ করতেন না।
এ দিন ওজিফার মৃত্যুর খবর ছড়াতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইস্রাফিল শেখের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। ওজিফার বড়দা সাবির আলি শেখের দাবি, ‘‘গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেহটি নিতে গেলে আমাদের সরে যেতে বলেন মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন এবং তাঁর ছেলে।’’ ক্ষিপ্ত জনতাকে সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জ্বলছে ইস্রাফিলের বাড়ির ঝুপড়ি। বাড়ির চারদিকে র্যাফ।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার নিজের পাড়ার ঘটনা। খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু এলাকার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে একজন মন্ত্রীর এলাকায় গিয়ে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টাই কাম্য। আমি তাই করতে গিয়েছিলাম। তারপর চলে এসেছি। আইন আইনের পথে চলবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনায় ওই গৃহবধূর পরিবারের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাজনিত একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।’’ লাঠিচার্জের কথা মানেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy