Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নৌকা চড়তে মাখতে হয় এক হাঁটু কাদা

দৃশ্য ১: রায়দিঘি কলেজের যাওয়ার জন্য কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পাথরপ্রতিমার সুতারবাগ খেয়াঘাটে এলেন কাওরাখালির সুপর্ণা কয়াল। বৃষ্টি হওয়ায় নদীঘাটে তখন থকথকে কাদা। নৌকায় উঠতে গিয়ে কাদা ছিটকে পোশাকে পড়ল। কলেজ না গিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন তিনি।

এ ভাবেই চলে পারাপার। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই চলে পারাপার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

দৃশ্য ১: রায়দিঘি কলেজের যাওয়ার জন্য কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পাথরপ্রতিমার সুতারবাগ খেয়াঘাটে এলেন কাওরাখালির সুপর্ণা কয়াল। বৃষ্টি হওয়ায় নদীঘাটে তখন থকথকে কাদা। নৌকায় উঠতে গিয়ে কাদা ছিটকে পোশাকে পড়ল। কলেজ না গিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন তিনি।

দৃশ্য ২: স্থানীয় বাসিন্দা তপন হালদার, বৃহস্পতি হালদারদের মতো এলাকার অনেকেই কৃষির উপরে নির্ভরশীল। ফসলের দাম পেতে তাঁদের ভরসা রায়দিঘি বাজার। কিন্তু কাদা পেরিয়ে কৃষিজপণ্য নৌকায় তুলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁদের। তবে এই ছবিগুলি কোনও ব্যতিক্রম নয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা জল পেরিয়ে নৌকা ধরতে হয় যাত্রীদের। কারণ পাথরপ্রতিমা ও মথুরাপুর ২ ব্লকের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া সুতারবাগ নদীর দুই পাড়েই কোনও জেটি নেই। ফলে মাঝেমাঝেই ঘটে দুর্ঘটনা। সুতারবাগ নদীর এক দিকে রয়েছে পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ রায়পুর, নারায়ণপুর ও দক্ষিণ গঙ্গাধরপুর পঞ্চায়েত এলাকা। অন্য পারে মথুরাপুর ২ ব্লকের রায়দিঘি, দিঘিরপাড় বকুলতলা ও কুমড়োপাড়া পঞ্চায়েতের একাংশ। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দশক ধরে এ ভাবেই নৌকা পারাপার চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নদীর দু’পাড়ে জেটি তৈরির জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বার বার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। যদিও সুতারবাগ নদীর উপরেই বছর আটেক আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেই সেতু থেকে রায়দিঘির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সেতুতে ওঠার জন্য সরাসরি গাড়ি পাওয়া যায় না। ফলে সেতু দিয়ে যাতায়াতে সময় ও অর্থ দু’টোই বেশি লাগে। তাই সমস্যা হলেও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ নৌকা করেই নদী পারাপার করেন। তবে যাত্রী-সংখ্যা ক্রমেই কমছে। কাওরাখালি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা মুনমুন দাসের ক্ষোভ, “খেয়াঘাটের দুরবস্থার জন্য যাত্রীরা আসতে ভয় পান। আগে দু’পার দিয়ে প্রতিদিন প্রায় কয়েকশো মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এখন সেই সংখ্যা কমেছে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, নদীর দু’পারে জেটি গড়তে আর্থিক বরাদ্দ না হওয়াতেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা জানান, সুতারবাগ খেয়াঘাটে যাত্রী পারাপারের দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন ব্যক্তি। সেখানে সাংসদ তহবিল থেকে একটি যাত্রী বিশ্রামাগার গড়ে দেওয়া হয়েছে। খেয়াঘাট পর্যন্ত নতুন মাটির রাস্তা করা হয়েছে। বর্ষার পরে ওই রাস্তা কংক্রিটের করার পরিকল্পনা রয়েছে। মথুরাপুর ২ ব্লক প্রশাসনকেও খেয়াঘাটের রাস্তা সারাই করতে অনুরোধ করা হয়েছে। জেটি নির্মাণ হলে পারাপারের জন্য বড় নৌকার ব্যবস্থা করা হবে।

পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আবদুর রেজ্জাক বলেন, “সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদই সুতারবাগ নদীঘাটে জেটি নির্মাণ করবে। ব্লকে অন্যত্র দু’টি জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পর্ষদ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patharpratima boat river sunderban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE