Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

শিল্পীর আবার জাত কী, বলছেন হাসেম চাচা

ভাঙড়ের লাঙ্গলবেঁকি গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ হাসেম ঘরামির কাজ করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। বয়সের ভারে ঘরামির কাজ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন হাসেম।

হাতে-হাতে: কাজে ব্যস্ত হাসেম। নিজস্ব চিত্র

হাতে-হাতে: কাজে ব্যস্ত হাসেম। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫০
Share: Save:

শেষ মুহূর্তে মণ্ডপ তৈরির কাজে ব্যস্ত হাসেম আলি মোল্লা ও তাঁর দুই ছেলে মজনু, ফজলু। পুজোর আগে নিখুঁত ভাবে সব কিছু শেষ করতে হবে। এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারই পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন। সব মিলিয়ে তিন বাপ-ব্যাটার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।

গত কয়েক বছর ধরেই ভাঙড়ের কাশীপুর শতধারা প্রমিলা সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপ তৈরি করছেন হাসেমরা। এই পূজোর সঙ্গেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন হাসেম, জাফর, সাইদা, সোনামণি বিবিরা। মুসলিমরাই এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা।

পুজো কমিটির সম্পাদক রিনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসেম চাচাদের মতো লোকজন আমাদের পুজোর কমিটির আসল সম্পদ। ওঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই পুজো সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হত না। ওঁদের তৈরি মণ্ডপ সজ্জার কারণেই আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে নানা পুরস্কার পেয়েছি।’’

ভাঙড়ের লাঙ্গলবেঁকি গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ হাসেম ঘরামির কাজ করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। বয়সের ভারে ঘরামির কাজ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন হাসেম। কিন্তু পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজে এখনও পুরোদস্তুর হাত লাগান।

পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপের সামনে চেয়ার নিয়ে বসে থাকেন হাসেম। তাঁর কথায়, ‘‘মণ্ডপে থাকতে খুব ভাল লাগে। বহু মানুষ আসেন। তাঁরা যখন আমার হাতের কাজের প্রশংসা করেন, খুব ভাল লাগে। কেউ কেউ শিল্পীর কথা জানতেও চান।’’

ভাঙড়, রাজারহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপ তৈরি ডাক পান হাসেম। তবে বাড়ির কাছের এই মণ্ডপ ছাড়া অন্য কোথাও কাজে যেতে ভাল লাগে না বলে জানালেন। হাসেমের আক্ষেপ, ‘‘বয়স হয়েছে। আগের মতো খাটতে পারি না। বার্ধক্য ভাতা থেকে শুরু করে সরকারি কোনও সাহায্য আজও পাইনি।’’

ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘হাসেম আলি মোল্লা কেন কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি, তা খোঁজ নিয়ে দেখব। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

শতধারা প্রমিলা সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপ প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে তৈরি হচ্ছে। কুঁড়েঘরের আদলে তিনটি মণ্ডপ। মাটির দেওয়াল, টালির ছাউনি, বাঁশ-কাঠ-প্লাই দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। আদিবাসী শিল্প-সংস্কৃতির নানা কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে শিল্পী প্রীতম আইচের হাতের ছোঁয়ায়। জাকির ছেঁচকি মণ্ডপে রং, তুলি দিয়ে নানা কারুকার্য করছেন। আলোক সজ্জার দায়িত্বে জাফর মোল্লা। পুজো কমিটির সভাপতি পাপিয়া চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মণ্ডপে ছৌ নাচের অসংখ্য মুখোশ, টুসু পুতুল, বেতের কারুকার্য দর্শকদের নজর কাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।’’

ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আরাবুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভাঙড়ে হিন্দু-মুসলিমের কোনও ভেদাভেদ নেই। যে কোনও উৎসবে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। ভাঙড়ের দুর্গোৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে।’’

ধর্মপ্রাণ হাসেম মণ্ডপ তৈরির কাজ থামিয়ে মসজিদের আজানের শুনে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। আজানের সুরে মিশে যায় বৃদ্ধের কথা। বললেন, ‘‘শিল্পীর আবার জাত কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE