Advertisement
০২ মে ২০২৪
PMAY

আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ কাকদ্বীপের পঞ্চায়েতে, শিক্ষক-দম্পতির নামও উঠল তালিকায়

বিরোধীদের অভিযোগ, অক্ষয়নগর মৌজার ১১২, ১১৩ এবং কাকদ্বীপ মৌজার ১১৯ নম্বর বুথ এলাকার অন্তত ৪৬ জন এমন উপভোক্তার নাম ওয়েবসাইটে উঠেছে, যাঁদের একতলা-দোতলা পাকা বাড়ি আছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৬
Share: Save:

বহু পাকা বাড়ির মালিকের নাম আবাস প্লাস যোজনার তালিকায় উঠেছে বলে অভিযোগ উঠছে নানা দিক থেকে। কেউ কেউ সরকারি চাকরি করেন, তা-ও নাম উঠেছে তালিকায়।

কাকদ্বীপ ব্লকের স্বামী বিবেকানন্দ পঞ্চায়েত এলাকাও ব্যতিক্রম নয়। চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের নাম উঠেছে এখানে। প্রথম দফায় যাঁরা টাকা পাবেন, এমন ৮৩২ জনের নাম সরকারি ওয়েবসাইটে উঠেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, অক্ষয়নগর মৌজার ১১২, ১১৩ এবং কাকদ্বীপ মৌজার ১১৯ নম্বর বুথ এলাকার অন্তত ৪৬ জন এমন উপভোক্তার নাম ওয়েবসাইটে উঠেছে, যাঁদের একতলা-দোতলা পাকা বাড়ি আছে। কেউ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। কেউ এখনও সরকারি চাকরি করেন। কারও বাবা কেরোসিনের ডিলার!

পঞ্চানন মণ্ডলের কথাই ধরা যাক। বেসরকারি একটি স্কুলে পড়ান। পঞ্চাননের দাবি, ‘‘শুনতেই শিক্ষক, বেতন তো পাই মাসে মাত্র ১৩ হাজার টাকা। আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। আমি কি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য নই?’’

স্বপন শাসমলও শিক্ষক। একই পেশায় আছেন তাঁর স্ত্রী। তালিকায় নাম উঠেছে স্বপনের। তাঁর যুক্তি, ‘‘স্বামী-স্ত্রী চাকরি করি ঠিকই, কিন্তু মাটির বাড়িতে থাকি। একতলা পাকা বাড়িতে আমার ছেলে থাকে। তবুও কেউ যদি অভিযোগ করে, তা হলে তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দেব।’’

প্রদীপ সামন্তের দোতলা পাকাবাড়ি। বাবা কেরোসিন ডিলার। তাঁরও নাম আছে তালিকায়। প্রদীপ বলেন, ‘‘আমি আলাদা থাকি। পাকা বাড়িতে বাবা থাকেন। আমার সম্পত্তি কিছু নেই।’’ বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য অনেক সময়ে পৈতৃক বাড়ির একটি ঘরে থাকেন, এমনও জানালেন প্রদীপ।

১২২ নম্বর বুথের তৃণমূলের সভাপতির স্ত্রী প্রতিভা পাঁজা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাড়ি গিয়ে তালিকা ধরে খতিয়ে দেখার কাজ করেছেন। পাকা বাড়ি থাকা লোকজনের নাম তালিকায় উঠল কী করে? প্রতিভার দাবি, ‘‘আমরা সার্ভে করে চলে এসেছিলাম। পরে পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের একজন দিদিকে অফিসে ডেকে বেশ কয়েকটা ভুয়ো আবেদনপত্রে সই করিয়ে নিয়েছেন। প্রধান বলেছেন, তাঁরা কিছু সার্ভে করে নেবেন।’’

পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূলের বাসুদেব দাস সে কথা মানছেন না। তিনি বলেন, ‘‘তিন দফায় সার্ভে হয়েছে। তা-ও যদি কারও নাম ভুল করে থেকে যায়, তদন্ত করে তা বাদ দেওয়া হবে।’’

স্থানীয় বিজেপি নেতা গোপালকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘যাঁরা তৃণমূল করেন, অথচ বাড়ি পাওয়ার যোগ্য নন, এমন অনেকের নাম চূড়ান্ত তালিকায় উঠেছে। প্রকৃত গরিব মানুষ বাড়ি পাচ্ছেন না। যেখানে কাটমানি, সেখানে তৃণমূল।’’ কাকদ্বীপ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘কী ভাবে এঁদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকল, তা বলতে পারব না। যদি এমন কেউ থেকে থাকেন, তা হলে নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চয়ই প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে।’’

কাকদ্বীপের বিডিও ঋক গোস্বামী জানান, যাঁদের নামে অভিযোগ উঠছে, তালিকা যাচাই করে দ্রুত সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PMAY Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE