Advertisement
E-Paper

অন্ধকার জগত ছেড়ে ভোটে দাঁড়ালেন খলিল

একটা সময় ছিল, যখন এলাকায় ‘ত্রাস’ হিসাবে লোকের মুখে মুখে ফিরত তাঁর নাম। তিনি নিজে অূবশ্য আগাগোড়া বলে এসেছেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা পরিকল্পনা করে তাঁকে বারে বারে মিথ্যা অভিযোগে অন্ধকারের জগতে ঠেলে দেওয়ায় জেলে যেতে হয়েছে।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪৮
প্রচারে বেরিয়েছেন প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে বেরিয়েছেন প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

একটা সময় ছিল, যখন এলাকায় ‘ত্রাস’ হিসাবে লোকের মুখে মুখে ফিরত তাঁর নাম। তিনি নিজে অূবশ্য আগাগোড়া বলে এসেছেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা পরিকল্পনা করে তাঁকে বারে বারে মিথ্যা অভিযোগে অন্ধকারের জগতে ঠেলে দেওয়ায় জেলে যেতে হয়েছে।

কিন্তু সে সব কথা এখন ইতিহাস। বর্তমানটা হল, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল বিক্রি আর ইঞ্জিন ভ্যান চালিয়ে দিব্যি আছেন বাদুড়িয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শুক পুকুরিয়া পূর্বপাড়ার বাসিন্দা খলিল মণ্ডল। সুখে-শান্তিতে সংসারধর্ম করছেন। কিন্তু পুরনো দিনগুলোর কথা তিনি অন্তত এখনও ভোলেননি। নিজের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া ‘অন্যায়ের’ প্রতিবাদ জানাতে এ বার ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তিনি। জোড়া পাতা চিহ্নে প্রার্থী খলিলেল স্ত্রী রূপা তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট। রূপার কথায়, ‘‘আমরা গরিব। তাই আমার স্বামীকে অন্যায় ভাবে ডাকাত বলে দেগে দেওয়া হয়েছে বারে বারে। ওঁকে জেলেও যেতে হয়েছে। অথচ রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখুন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা তাঁরা রাখেন না। সরকারি টাকা নয়ছয় করে পুর এলাকার উন্নয়ন করেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তির ব্যবস্থাও নেই।’’ রূপার দাবি, এলাকার মানুষের মধ্যে স্বামীর সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে এবং একজন গরিব হয়ে গরিব মানুষের জন্য কাজ করতে স্বামী প্রার্থী হয়েছেন।’’

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খলিলের সমর্থনে মিছিল বেরিয়েছে। পানীয় জলের পাত্র নিয়ে শতাধিক বাসিন্দা তাঁকে ঘিরে হইচই করছেন। এক সময়ে তাঁর নাম শুনলেও যে মানুষগুলো ভয়ে ঘরে ঢুকে পড়তেন, তাঁদের অনেকে এখন খলিলের সমর্থনে পথে নেমেছেন। খলিল জানালেন, দিল্লিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টির লড়াই দেখে তিনি আগ্রহ বোধ করেছিলেন। নিজেই খোঁজখবর করে যোগাযোগ করেছিলেন দিল্লির নেতাদের সঙ্গে। আপের সমর্থন তিনি পেয়েছেন বলেও দাবি খলিলের।

যদিও দলের রাজ্য নেতা অলোক চতুর্বেদী এই দাবি মানতে চাননি। যদিও নিজের নির্বাচনী প্রচারে আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিবালের ছবি ব্যবহার করছেন খলিল।

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা খলিলের। দরমার বেড়ার উপরে টালির চাল দেওয়া ঘর। চার মেয়ের বড় জন রেশমা পড়ে নবম শ্রেণিতে। রহিমা আর আসমা অষ্টম এবং ছোট নাজমা পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। একমাত্র ছেলে ইব্রাহিম দিল্লিতে দর্জির কাজ করে। খলিলের কথায়, ‘‘এক সময়ে রাজনৈতির প্যাঁচে পড়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। তখন থেকেই বিনা দোষে জেল খেটে গরিব হওয়ার জ্বালা বুঝেছি। তাই তো ঠিক করেছিলাম, একবার সুযোগ পেলে বাবুদের বুঝিয়ে দেব, একজন গরিবেরও অধিকার আছে ভাল ভাবে জীবনযাপন করার। ভোটে লড়ার।’’ জয়ী হলে কি করবেন? খলিল বলেন, ‘‘মানুষকে যাতে জল কিনে খেতে না হয়, তাই আগে বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করাই হবে আমার প্রথম কাজ।’’ দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গড়তে চান তিনি। নিকাশি, আলোর উন্নতি, পার্কের ভোল বদল করতে চান। খলিল বলেন, ‘‘ভোটে জিতে কাউন্সিলর হলে ওয়ার্ডের উন্নতিতে এলাকার বিশিষ্ট মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে কাজ করাব।’’

খলিলের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে ভালই আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক থানায় বহু অভিযোগ থাকলেও গত কয়েক বছরে সত্যিই কোনও অভিযোগ আসেনি খলিলের নামে, জানালেন মহকুমার এক পুলিশ কর্তা।

খলিল প্রার্থী হওয়ায় ওয়ার্ডের বাকি দলগুলির প্রার্থীরা অবাক। তবে খুশি হয়েছেন বহু স্থানীয় মানুষ। তাঁদেরই মধ্যে হাবিবুল বিশ্বাস, সহিদুল মণ্ডল, মেহেরুনেশা বিবি, অহাব গাজি, রাজিয়াতুননেশা বিবি বলেন, ‘‘এখানকার পুরসভায় সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল সকলেই ক্ষমতা ভোগ করেছে। কিন্তু বিশেষ করে গরিব মানুষের কোনও উন্নয়ন করেনি। খলিল স্পষ্টবাদী মানুষ। অন্যের উপকারে সময়ে অসময়ে ছুটে যান। স্পষ্ট কথা বলার জন্যই নানা সময়ে জীবনে অসুবিধায় পড়েছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ওঁকে একাধিকবার ফাঁসিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। তাই আমরা সকলে খলিলের পাশে আছি।’’ এক দিন যার নাম শুনে ভয় পেত মানুষ, এখন তারই পিছু নিয়ে প্রচারে গা ঘামাচ্ছেন এলাকার মানুষ।

Khalil Mondal independent candidate Baduria Municipal election Trinamool Congress BJP Nirmal Basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy