Advertisement
E-Paper

অতিথি-রক্ষায় বসল পাহারা 

স্থানীয় মানুষজন পাখি শিকারে বাধা দিলেও তাতে খুব একটা কাজ হয় না। এ বছর এখনও শিকারিদের দেখা মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ।

প্রসেনজিৎ সাহা, নির্মাল্য প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৪৫
পাখিদের নিরাপত্তায় পাহারা চুনাখালিতে। নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে, বন্দুক নিয়ে পাখি শিকারের পথে। বাগদায়। ফাইল চিত্র।

পাখিদের নিরাপত্তায় পাহারা চুনাখালিতে। নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে, বন্দুক নিয়ে পাখি শিকারের পথে। বাগদায়। ফাইল চিত্র।

শীতের অতিথিরা এ বার একটু তাড়াতাড়িই আসতে শুরু করেছে। তাদের ঘিরে স্থানীয় মানুষের উৎসাহ প্রচুর। ভয় শুধু চোরাশিকারিদের নিয়ে। আর তাই শিকারিদের হাত থেকে পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করতে পাহারার ব্যবস্থা করেছে পঞ্চায়েত।

টানা লকডাউনের জেরে দূষণের মাত্রা বেশ খানিকটা কমেছিল গত কয়েক মাসে। এই আবহে সুন্দরবনে বেশ কিছু দিন ধরেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছিল। দুর্গাপুজোর পর থেকে গত এক সপ্তাহে প্রচুর পরিমাণে পাখি আসছে। ইতিমধ্যেই বাসন্তী ব্লকের চুনাখালি ও বগুলাখালি এলাকায় নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে পাখির ঝাঁক।

পাখিরা এলাকায় ঢোকার পর থেকে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ে প্রতি বছরই। এ বারেও একই পরিস্থিতি। রাতের অন্ধকারে তারা পাখি শিকার করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পাখিদের বাঁচাতে তাই ব্যবস্থা নিয়েছে চুনাখালি পঞ্চায়েত।

ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পাহারাদারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকালে দু’জন, রাতে দু’জন করে পাহারা দিচ্ছেন। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নরেশচন্দ্র নস্কর বলেন, ‘‘প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিরা শীত পড়লেই এই এলাকায় আসে। তবে এ বার শীতের অনেক আগে থেকেই আসতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে প্রচুর পরিমাণে পাখি এসেছে। চোরাশিকারিদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে আমরা পাহারার ব্যবস্থা করেছি।’’

গত কয়েক দিন ধরে সুন্দরবনের দয়াপুর, পাখিরালয়, সাতজেলিয়া, চুনাখালি, পিয়ালি, ঝড়খালি এলাকায় প্রচুর পাখির দেখা মিলছে। সুন্দরবনের বহু এলাকা পাখিদের কলতানে মুখরিত। গত সপ্তাহেই দু’জন চোরাশিকারিকে বাসন্তীর চুনাখালি এলাকায় হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের সাবধান করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, আরও বহু শিকারি হানা দিতে পারে। চুনাখালি পঞ্চায়েতের নির্দেশে স্থানীয় বাসিন্দা অবিনাশ মণ্ডল, স্বপন সর্দার উদ্যোগী হয়েছেন পাখিদের নিরাপত্তা দিতে। তাঁরা বলেন, ‘‘পাখিরা এলাকায় আসতেই বহু পর্যটকও ভিড় করছেন। দোকান, বাজারে বিক্রি বেড়েছে। তা ছাড়া, সারাক্ষণ এই পাখিদের কলতানে আমাদের গ্রাম মুখরিত হয়ে থাকে। পাখিদের দল আমাদের গ্রামের গৌরব। তাদের রক্ষা করতেই হবে।’’

এই এলাকারই বাসিন্দা গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করার জন্য ইতিমধ্যেই বন দফতরকে চিঠি লিখেছি। যাতে এই পাখিদের কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সে বিষয়টি দেখার জন্য পঞ্চায়েতকেও বলেছি। আমি নিজেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন জলাভূমিতে, বাওরেও আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। বাগদার আমডোব, কুড়ুলিয়া, খড়ের মাঠ, বনগাঁর প্রতাপনগর, নতুনগ্রাম বাওর, গাইঘাটার ডুমা, বেড়ির বাওর পাখিদের প্রিয় বিচরণক্ষেত্র। এ বছর বাতাসে হিমেল ছোঁওয়া লাগতেই দেশি পাখির পাশাপাশি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলতে শুরু করেছে পরিযায়ীদের। স্বভাবতই উৎফুল্ল এলাকার পক্ষীপ্রেমী ও ওয়াইল্ড লাইফ আলোকচিত্রীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন জাতের হেরন, স্টর্ক, নানা প্রজাতির ওয়াগটেইল, ব্রোঞ্জ উইংড জ্যাকানারদের দেখা মিলছে। ল্যাপউইং ও স্যান্ডপাইপারদেরও আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর একটু ঠান্ডা পড়লে কটন পিগমি গুজ, অরেঞ্জ হেডেড পোচার্ডদের দেখা মিলতে পারে বলে আশা। যদিও প্রতি বছরের মতো লেসার হুইসলিং ডাক এ বছর এখনও শোনা যায়নি।

বাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে পাখি আসার পরিমাণ কমেছিল। তবে এ বার অতিথিদের সংখ্যা বাড়বে বলেই আশা। এ বছর এমন কিছু প্রজাতির পাখি দেখা যাচ্ছে, যাদের পাঁচ-সাত বছর আগে দেখা যেত।

এ দিকে, দেশি-বিদেশি পাখির ঝাঁক চোরাশিকারিদেরও নজর টানে। বাওরের জলে নেমে মাছের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে, ফাঁদ পেতে, এয়ারগান দিয়ে এ সব এলাকায় পাখি শিকার চলে। স্থানীয় মানুষজন পাখি শিকারে বাধা দিলেও তাতে খুব একটা কাজ হয় না। এ বছর এখনও শিকারিদের দেখা মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। তবে সত্যিই যদি তারা ঢোকে, তবে শুধু গ্রামবাসীর প্রতিরোধে কাজ হবে না বলেই মনে করেন মহকুমার পক্ষীপ্রেমীরা। সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তাঁরা।

বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার নিজেও ওয়াইল্ড লাইফ ছবি তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর জলাভূমিগুলিতে ইতিমধ্যেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে। এখনও পাখিশিকারিদের দেখা না পাওয়া গেলেও প্রশাসন নজরদারি চালাবে। চোরাশিকার কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’

Watchkeepers Migrant Birds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy