বাঘেরা বাড়ছে সুন্দরবনে।
বছর তিনেক আগেই সুন্দরবনে ১০১টি বাঘ থাকার কথা জানা গিয়েছিল। গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বাঘশুমারিতে ব্যবহৃত ক্যামেরার ছবি বিশ্লেষণ করে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে দাবি করল বন দফতর। একই দাবি সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, এমন একটি সংস্থারও।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “আরও কিছু বাঘ বেড়েছে। তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি শেষ হওয়া বাঘশুমারিতে। সুন্দরবনকে বাঘেরা নিজেদের জন্য নিরাপদ জায়গা বলে মনে করছে। সেই কারণেই বাঘেদের প্রজনন ভাল ভাবে হচ্ছে এখানে।” বাঘের সংখ্যা বেড়ে ঠিক কত হয়েছে, তা ভাঙেননি ওই বনকর্তা। তবে আগামী দু’-এক বছরের মধ্যে বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় বলেন, “প্রতি বছরই ট্র্যাপ-ক্যামেরায় পাওয়া তথ্য দেশের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়। তারাই সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে। ক্যামেরায় ওঠা বাঘের ছবি দেখে প্রাথমিক ভাবে আমাদেরও মনে হয়েছে যে, সংখ্যাটা আগের তুলনায় বেড়েছে। আগামী বছর সর্বভারতীয় বাঘশুমারির রিপোর্ট বার হলে চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।”
বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, চার বছর অন্তর বাঘশুমারি হয় দেশের সব ব্যাঘ্র প্রকল্পে। মূলত, জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে স্বয়ংক্রিয় (ট্র্যাপ) ক্যামেরা বসিয়ে বাঘেদের ছবি তোলা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে সেই ক্যামেরা খুলে বাঘের ছবি বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প অবশ্য নিজেদের উদ্যোগে প্রতি বছরের শেষ দিকে ওই শুমারির কাজ চালায়। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই সুন্দরবনে অন্তত ছ’-সাতটি বাঘ বেড়েছে বলে বনকর্তাদের একাংশের দাবি।
তবে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি’র প্রধান ফিল্ড অফিসার অনিল মিস্ত্রির ধারণা, ২০টিরও বেশি বাঘ বেড়েছে। তিনি বলেন, “একই সময়ে অন্তত চার জায়গায় চারটি বাঘিনি দু’টি করে শাবক নিয়ে ঘোরাফেরা করছে, সেটা গত দু’-তিন বছরে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সংগৃহীত তথ্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাঘের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে সুন্দরবনে।”
এর আগের দফায় সর্বভারতীয় স্তরে বাঘশুমারি হয়েছিল ২০২১-’২২ সালে। তখনই জানা গিয়েছিল, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০১টি। ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রের খবর, গত নভেম্বর মাসের শেষে গভীর জঙ্গলে ইনফ্রা-রেড প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা বসিয়ে ৪৫ দিন ধরে চলেছিল বাঘেদের ছবি তোলার কাজ। মোট ৭২২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল সেই কাজে। ক্যামেরায় বেশ কিছু ব্যাঘ্রশাবকের ছবি ধরা পড়েছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, এক বছরের কম যে সব শাবকের বয়স, সেগুলিকে গণনায় ধরা হয় না। গত কয়েক বছরের ছবি অনুযায়ী, জঙ্গলে তেমন শাবকও অনেক রয়েছে। পাশাপাশি, এক থেকে তিন বছর বয়সি বাঘের সংখ্যাও ২০% মতো রয়েছে বলে দাবি বন দফতরের। ফলে, গত দু’-তিন বছরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা যে বেড়েছে, সেই সম্পর্কে সন্দেহ নেই বলেই মনে করছেন বনকর্তারা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)