চোর-ডাকাত ধরতে গেলে পুলিশের চাই শারীরিক সক্ষমতা, ফিটনেস। ‘ভুঁড়িওয়ালা’ পুলিশ কর্মীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যকৌতুকের শেষ নেই! পথেঘাটে কটূক্তিও শুনতে হয় অনেক সময়ে।
তবে বনগাঁ পুলিশ জেলায় ‘ভুঁড়িধারী’ পুলিশ কর্মীদের ‘সুখের দিন’ সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। বাহিনীর কর্মীদের সুঠাম, সুস্বাস্থ্যের জন্য বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের উঠেপড়ে লেগেছেন। পুলিশ কর্মীদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত শরীর চর্চার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। ভুঁড়ি কমাতে গাড়ি ছেড়ে হাঁটা, সাইকেল চালানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মীদের দেওয়া হয়েছে ‘স্মার্ট ওয়াচ’। ঘড়ি দেখে হাঁটতে হচ্ছে ‘স্বাস্থ্যবান’ পুলিশ কর্মীদের। দিনের শেষে রিপোর্ট জমা দিতে হচ্ছে, তাঁরা কত পা হেঁটেছেন! রোজ ১০ হাজার পা হাঁটতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বনগাঁ পুলিশ জেলায় কর্মীদের শারীরিক পরিমাপ হয়েছে। সেই পরিমাপে দেখা গিয়েছে, জেলার প্রায় শতাধিক পুলিশ কর্মীর ওজন উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অর্থাৎ, বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) বেশি। সেই সব পুলিশ কর্মীদের বিনামূল্যে মেডিক্যাল চেক আপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবারে রাশ টানতে দেওয়া হয়েছে ‘ডায়েট চার্ট’। জোর দেওয়া হচ্ছে খেলাধুলোর উপরে।
পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘কর্মীদের আরও দক্ষ করে তুলতে শরীর চর্চার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিএমআই বেশি, তাঁদের ঘড়ি ধরে হাঁটতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশের কর্মদক্ষতা বাড়বে।’’
এই পদক্ষেপের সুফলও মিলতে শুরু করেছে। গত দেড় মাসে এক পুলিশ কর্মী ১৩ কেজি ওজন কমিয়েছেন। আর এক পুলিশ কর্মী ওজন কমিয়েছেন ১২ কেজি। তাঁদের হাতে জেলা পুলিশের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। ওজন কমানো দুই পুলিশ কর্মী হলেন কনস্টেবল মিঠুন ঘোষ এবং রমেন দাস। জেলার পুলিশ সুপার মিঠুন এবং রমেনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
সেখানে আগের ছবির সঙ্গে তুলনা টেনে পাশে মেদহীন বর্তমান চেহারার ছবি দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরস্কার দেওয়া হয়েছে অন্য পুলিশ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে। ওই দু'জনের পাশাপাশি আরও ৫০ জন পুলিশ কর্মী ওজন কমিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
পুলিশের ভুঁড়ি নিয়ে ২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছিল। হাই কোর্ট প্রশ্ন তোলে, ভুঁড়িধারী পুলিশ কী করে অপরাধীদের ধাওয়া করে ধরবে? ভুঁড়িধারী পুলিশ দেখলে তাঁকে ভুঁড়ি কমানোর পরামর্শ দিতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)