অভাব রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকার। আবার একসঙ্গে ৫০০ অথবা তার বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে বসিয়ে ক্লাস নেওয়ার মতো স্থানও অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম মেধা নির্ভর পঠনপাঠনের দিকে ঝুঁকল সুন্দরবন অঞ্চলের এক কলেজ।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে কলেজে পাঠ্যসূচির এখন বড়সড় পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মূল কোর্সের বাইরেও বেশ কিছু বিষয় ছাত্রছাত্রীদের পড়তে হয়। পরিবেশবিদ্যা, সংবিধান, ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম-সহ বেশ কিছু এমন বিষয় এখন রয়েছে। ৫০ নম্বরের অথবা দুই ক্রেডিটের এই কোর্স যে হেতু সব বিষয়ের পড়ুয়াদেরই করতে হয়, তাই সেই সব ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যাও অনেক। ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজ তাই এই কোর্সগুলিতে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক পঠনপাঠন চালু করেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের কলেজে এত পড়ুয়াকে নিয়ে একসঙ্গে ক্লাস নেওয়ার মতো ক্লাসরুম নেই। প্রতিটা বিষয় পড়ানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষিকাও নেই। তবে এই সমস্যা শুধু তাঁর কলেজে নয়, রাজ্যের বহু কলেজেই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য এ আই (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স)-এর সাহায্যে চ্যাটবট ভিত্তিক পঠনপাঠন বেশ কিছু শর্ট কোর্সের জন্য আমাদের কলেজে চালু করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজস্ব তথ্য়ভান্ডার তৈরি করে দিয়েছেন, যা চ্যাটবটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সম্ভবত এই রাজ্যে আমাদের কলেজেই প্রথম এমন পঠনপাঠন চালু হল।’’ তিলক আরও জানালেন, এর জন্য কলেজের বেশ কিছুটা খরচ হয়েছে। তবে পরিচালন সমিতির সভাপতি বিষয়টি চালু করতে খুবই উৎসাহ দিয়েছেন।
এই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শারুখ মোল্লার বাড়ি বাসন্তী থানার আনন্দবাদ গ্রামে। হোগলা আর মাতলা— এই দুই নদী পেরিয়ে কলেজ যাতায়াত করতে প্রতিদিন দুই-আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে তাঁর। শারুখ মোট তিনটি শর্ট কোর্স প্রথম সিমেস্টারে বাড়িতে বসেই করেছেন। এর জন্য কলেজ থেকে দেওয়া প্রতি বিষয়ের জন্য একটি করে লিঙ্কে যেতে হয়েছে। শারুখ বললেন, ‘‘এতে ইন্টারনেট খুব বেশি খরচ হয় না। তবে সপ্তাহে এক দিন কলেজে এসে কোর্স মেটেরিয়াল নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে শিক্ষকদের থেকে বুঝেও নিতে পারি।’’ প্রথম বর্ষের আর এক পড়ুয়া প্রীতি দাসের বাড়ি সুন্দরবন অঞ্চলের নিকারিঘাটায়। বাড়ি থেকে প্রীতি কলেজে আসে প্রায় এক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে। চোখের কিছুটা সমস্যা থাকলেও প্রীতি জানাল, এই চ্যাটবটের মাধ্যমে বাড়িতে বসে কোর্সগুলো করতে তাঁর সুবিধাই হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)