দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হিসাবে শীর্ষে থাকা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গত কয়েক মাসে বোমা-গুলির শব্দ কমেছিল বটে, কিন্তু গোপনে আবারও নতুন করে দুষ্কৃতী-তৎপরতা বৃদ্ধির খবর মিলছিল। তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরি করে ধরপাকড় শুরু করেছে।
গত কয়েক মাসে নতুন করে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক শত্রুতা ও তলে তলে দুষ্কৃতী কার্যকলাপ বেড়েছে বলে খবর পায় প্রশাসন। অলোক রাজোরিয়াকে সরিয়ে নগরপাল পদে আনা হয় প্রাক্তন যুগ্ম নগরপাল অজয় ঠাকুরকে। বিধানসভা ভোটের আগে যাতে রাজনৈতিক অশান্তি না ছড়ায়, সে দিকেও কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকা দুষ্কৃতীমুক্ত করতে পুলিশ কতটা সক্রিয়, খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার তা দেখছেন বলেও খবর। সম্প্রতি বেলঘরিয়া থানায় এসে নগরপাল-সহ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকও করেন ডিজি। যদিও সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের কর্তারা।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মোট ২৫টি থানাকে নিজেদের এলাকার দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে প্রায় ৩০০ জন সক্রিয় দুষ্কৃতীর নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে কারা জেলে রয়েছে, কারা এলাকায় রয়েছে কিংবা অন্য জেলা বা রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন কোনও দুষ্কৃতী মাথাচাড়া দিচ্ছে কিনা, তা-ও দেখতে সমস্ত থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন নগরপাল। গোয়েন্দা বিভাগকেও সক্রিয় করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে টিটাগড়ের কুখ্যাত দুষ্কৃতী শাহজাদাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহ বহু আগে টিটাগড়ে ওই দুষ্কৃতীর আশ্রয়ে ছিল। তবে, বছরকয়েক আগে থেকে টিটাগড়ে থাকছিল না শাহজাদা। তার বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, হুমকি-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। টিটাগড়ে না থাকলেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের উপরে নিয়ন্ত্রণ ছিল ওই পুরনো দুষ্কৃতীর। অন্য দিকে, খুনের আসামি ভাসান ওরফে অজিত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে ঘোলা থানা। নিউ ব্যারাকপুর থানা গ্রেফতার করেছে শাহবাজ খানের মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে। এ ছাড়া, মাঝারি গোত্রের আরও কিছু দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে। নগরপাল বলেন, ‘‘কোনও দুষ্কৃতী কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা পদক্ষেপ করার, সেটাই করা হচ্ছে।’’
সূত্রের খবর, রাজনৈতিক নেতারাই বিরোধী পক্ষকে দমিয়ে রাখতে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করছিলেন। সম্প্রতি খড়দহের উপ-পুরপ্রধানকে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে মারার হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। ভাটপাড়া, টিটাগড়, পানিহাটি, কামারহাটিতে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, তাঁদেরই দলের অপর পক্ষ ৭০ শতাংশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। নতুন মুখ যাতে রাজনীতিতে উঠে আসতে না পারে, তার জন্য বিভিন্ন এলাকায় হুমকি, ভয় দেখানোর অভিযোগও রয়েছে বিশেষ ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাই বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকে পুলিশি নিরাপত্তা দিতে হয়েছে। তার পরেও তাঁরা কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে সংশয় রয়েইছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)