E-Paper

ভোটের আগেই ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শাসন

পাট খেতের ধারে দাঁড়ানো এক চাষির কথায়, ‘‘বিরোধীরা ভোটে না থাকলেও বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ভয় বেশি। ভোটের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা চলে যাবেন। তার পরে কী হবে?”

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪০
An image of Central Force

পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। শুক্রবার শাসনের বহিরা গ্রামে। ছবি: সুমন বল্লভ।

গ্রামের রাস্তায় হাঁটছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। জংলা পোশাক, কাঁধে ঝোলানো স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। পিছনে পিছনে হাঁটছে কয়েকটি শিশু। রাস্তার ধারের একটি বাড়ির সামনে রাখা ফাঁকা লাল চেয়ার। জানলার পর্দা সরিয়ে ভিতর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হেঁটে যাওয়া দেখছেন এক বধূ। তাঁর চোখে খানিক হতাশা, খানিক ভয়। রাত ফুরোলেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগের এই ছবি বারাসত-২ ব্লক তথা শাসনের দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বহিরা স্টেশনের কাছের একটি পাড়ায়।

বারাসত-২ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে চণ্ডীগড়ি রোহন্ডা ও কেমিয়া খামারপাড়া ছাড়া দাদপুর, শাসন, কীর্তিপুর-১ এবং ২, ফলতি বেলিয়াঘাটা— এই পাঁচটির পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনগুলি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে শাসক দল তৃণমূল। একমাত্র জেলা পরিষদের আসনগুলিতে ভোট হবে। শুক্রবার ওই সব এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শাসক দল ছাড়া অন্য দলের কোনও পতাকা নেই। চোখে পড়ল না বিরোধী প্রার্থীদের নাম লেখা দেওয়াল কিংবা ব্যানার-ফেস্টুনও।

যে জায়গায় তাঁরা ‘রেকি’ করছেন, সেখানে এমন বিরোধীশূন্য পরিস্থিতি দেখে ছত্তীসগঢ় থেকে আসা আধা সেনার এক জওয়ানকে বাঁকা হাসি হাসতেও দেখা গেল। বহিরার রাস্তায় জটলাকারী কয়েক জন যুবকের কথায়, ‘‘এখানে সব শান্তিপূর্ণ। কোনও বিরোধী নেই। খেলা হবে।’’

এর পরেও খেলা!

পাট খেতের ধারে দাঁড়ানো এক চাষির কথায়, ‘‘বিরোধীরা ভোটে না থাকলেও বিরোধী প্রার্থীদের পক্ষে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ভয় বেশি। ভোটের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা চলে যাবেন। তার পরে কী হবে? তখনই খেলা শুরু হবে।’’

কী হতে পারে? সেই চাষির কথায়, যাঁরা প্রকাশ্যে শাসক দলের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের মারধর খাওয়ার আশঙ্কা আছে। তার চেয়েও বেশি আশঙ্কা, ঘরবাড়ি ভেঙে এলাকাছাড়া করার। যাতে তাঁরা বাড়ি ফিরতে মোটা টাকা ‘জরিমানা’ দিতে বাধ্য হন। গ্রামবাসীদের দাবি, বিরোধীদের জরিমানা করার নামে বাসিন্দাদের থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে স্থানীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ তৃণমূলের উচ্চতর নেতৃত্বের কাছে পৌঁছলেও তা বন্ধ করা যায়নি।

বিরোধী দলগুলি জানাচ্ছে, মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েও ওই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তাদের সিংহভাগ প্রার্থী প্রাণের ভয়ে ফিরে এসেছেন। দু’দফায় তৃণমূল থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে সিপিএমে যোগ দেন কীর্তিপুরে। তা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতে বিরোধীরা তেমন ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেননি।

ফলতি বেলিয়াঘাটার পলতাডাঙার বাসিন্দা তথা আইএসএফের প্রার্থী মহম্মদ সামিউল লস্কর প্রবল বাধার মুখেও প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেননি। তাঁর দাবি, তাঁকে মানুষ সমর্থন করছেন। কিন্তু, প্রকাশ্যে কেউ সঙ্গে ঘুরছেন না। অনলাইনে তিনি প্রচার করছেন। কখনও একা একাও লিফলেট বিলি করছেনসামিউল। এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘অন্যদের সুরক্ষার কথা ভেবেই তাঁদের আমার সঙ্গে বেরোতেবারণ করেছি। বিধানসভা নির্বাচনের পরে আমার মোবাইলের দোকানযখন বন্ধ করে দেওয়া হল, তার পর থেকে লড়াই শুরু। খুনের হুমকিও পেয়েছি। হাল ছাড়িনি। অবশ্য শনিবার সকালে কী হবে, জানি না।’’

মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে বিডিও অফিসের বাইরে গাড়ি ভাঙচুর, বোমাবাজি করে বারাসত-২-এর সিংহভাগ বিরোধী প্রার্থীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলবলে বার বারই অভিযোগ করেছে সিপিএম, কংগ্রেস ও আইএসএফ জোট। যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়েপ্রত্যাহার করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাতে কারা বিরোধী, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে এ বার নতুন ভয়, ফল ঘোষণার পরে কী হবে,তা নিয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Panchayat Polls 2023 central force

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy