প্রতীকী ছবি।
বুথের সামনে মাটিতে শুয়ে পেট চেপে ধরে কাতরাচ্ছিলেন এক যুবক। গলায় ঝোলানো ভোটের কার্ড। পেটে বিঁধে আছে মাঝারি মাপের একটি ছুরি।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ যোগেন্দ্রনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। খড়দহ থানার বিলকান্দা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় জখম যুবক ২১৫ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিশ্বাস। রাজুকে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে পাঠানো হয় আরজিকরে। রাজুর অভিযোগ, সকাল থেকেই তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে বুথের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিল না। খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘বুথের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তৃণমূলের একজন আমার পেটে ছুরি মেরে পালায়।’’
তৃণমূলের স্থানীয় নেতা তথা ওই বুথের পঞ্চায়েত প্রার্থী প্রবীর রাজবংশী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বিজেপি স্থানীয় প্রার্থী খুঁজে পায়নি। ওকে বাইরে থেকে এনে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল। যা নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যেই গোলমাল বাধে। এটা তারই ফল।”
ব্যারাকপুরের শিউলি এবং মোহনপুর পঞ্চায়েতে বুথগুলিতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন ছিল। কিন্তু সেখানে ভোটারদের থেকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। বাধা দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমকেও। সকালে নাভারন্ড সূর্যপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ঘেরা জায়গায় ভোট দিতে যান এক মহিলা। সে সময়ে সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন এক যুবক। চিৎকার করে তিনি বলেন, “বলছি তো ছাপ মারো ওখানে।” পাশে অসহায় মুখে বসে থাকতে দেখা গেল প্রিসাইডিং অফিসার।
কে আপনি? প্রশ্ন করতেই এক গাল হেসে ওই যুবক বললেন, “উনি বুঝতে পারছিলেন না, কোথায় ভোট দিতে হবে। তাই সাহায্য করছিলাম।” প্রিসাইডিং অফিসারের কথায়, “আমি অনেকক্ষণ ধরে ওই ছেলেটিকে চলে যেতে বলছি। উনি কথা কানেই তুলছেন না।” এরপরে অবশ্য ওই যুবককে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টের (বুথে তিনিই একমাত্র এজেন্ট) পাশে গিয়ে বসে পড়তে দেখা গেল।
কিছুক্ষণ পরে কিছুটা দূরের শিউলি বয়েজ হাইস্কুলে আবার দেখা গেল অন্য ছবি। বুথে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে নীল-সাদা ডোরাকাটা টি-শার্ট পড়া এক যুবক। যাঁরাই ভোট দিতে আসছেন, তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে বলছেন, “যাও বাড়ি চলে যাও। তোমার ভোট হয়ে গিয়েছে।” তর্ক জুড়লেন এক মহিলা। “আমি এই এলাম বাড়ি থেকে। আমার ভোট কী করে হয়ে গেল?” পাল্টা প্রশ্ন, “সিপিএমকে ভোট দিতে পারলে না বলে খুব দুঃখ হচ্ছে? যাও বাড়ি গিয়ে দুঃখ কর।”
কে আপনি, সাহস করে প্রশ্ন করা গেল। উত্তরে শুনতে হল শাসানি। “বেশি বাড়াবাড়ি করতে চান নাকি? যা করেছি ঠিক করেছি।” তাঁর নিজের পরিচয়পত্র দেখতে চাইতেই পিঠটান দিলেন।
ঠিক তখনই দেখা গেল, এক যুবকের বাইকে বসে পাশের গলি দিয়ে এলেন তৃণমূল বিধায়ক সুনীল সিংহ। সটান বুথের মধ্যে ঢুকে পড়লেন তিনি। প্রতিটি বুথে ঢুকে ভোটার এবং ভোটকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন। জানতে চাইলেন ‘‘সব ঠিকঠাক চলছে তো?’’
বিধায়ক বুথে কী করছেন?
বুথে দাঁড়িয়েই সুনীলের উত্তর, “কই, আমি তো বুথে ঢুকিনি! আমি কেন ঢুকব? নতুন বিধায়ক হয়েছি তো। বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছিলাম।”
সিপিএমের গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, শিউলি মোহনপুরের অধিকাংশ বুথই শনিবার রাত থেকে দখল করে নেয় তৃণমূল। সিএমডিএ নগর বুথে বিরোধী ভোটারদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। যাঁরা ঢুকেছেন তাঁদের তৃণমূলের লোকেদের সামনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছে শাসক শিবির।
শিউলি পঞ্চায়েতেরই কংগ্রেস প্রার্থী কার্তিক ঘোষকে তৃণমূলের কর্মীরা মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ। তিনি বিএনবসু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিউলি বিজেপির প্রার্থী শ্রাবন্তী জানা তাঁর স্বামী অলোক জানাকে তৃণমূলের কর্মীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। তিনিও বিএন বসু হাসপাতালে ভর্তি। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy