দিন পাঁচেক আগেই আচমকা প্রবল তুষারপাতের জেরে নেপালের ম্যাগদি জেলারঅন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে আটকে পড়া ১৭ জন ভারতীয়-সহ মোট ৭২ জন পর্বতারোহীকে উদ্ধার করেছিল সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মঙ্গলবার সেই বেসক্যাম্পে অসুস্থ বোধ করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এক বাঙালি ট্রেকারের মৃত্যু হল। পিন্টু হালদার (৫৩) নামে ওই ট্রেকার বেলঘরিয়ার বাসিন্দা।তিনি ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কোয়ালিটি অ্যাশিয়োরেন্স বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির পর্বতারোহণ ক্লাবের সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেকিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিল পিন্টুর। একাধিক ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন, নতুন ট্রেকারদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, এ বার ইছাপুর রাইফেলফ্যাক্টরির পর্বতারোহণ ক্লাবের চার সদস্য হঠাৎই ঠিক করেন, তাঁরা অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্রেক করতে যাবেন। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেটুকু জানতে পেরেছি,যাওয়ার পথে কোনও সমস্যা না হলেও ফেরার পথে অসুস্থ বোধ করছিলেন পিন্টু। হাঁটতেহাঁটতে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সহযাত্রীদের সে কথা জানান। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারান। চিকিৎসার সময়টুকুও পাওয়া যায়নি। এখনওখানে ফোনে যোগাযোগের খুব সমস্যা। সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মিটিয়ে কী করে তাঁর দেহ নিয়ে আসা হবে, সেটা এখনও জানি না।’’
নেপালে থাকা পিন্টুর প্রাক্তন সহকর্মী ও আর এক অভিযাত্রী কাঞ্চনকান্তি বড়ালের সঙ্গে এ দিন ওয়টস্যাপ কলে এক বারই কথাহয়েছে বিপ্লবের। তার পর থেকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না কাঞ্চনকান্তিকেও। পিন্টুর সহকর্মীরা জানান, কয়েক দিন আগে হিমাচলপ্রদেশে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে অন্নপূর্ণাবেসক্যাম্পে গিয়েছিলেন। এই ট্রেকিংয়ে যাওয়ার কথা জানতেন না তাঁর বহু সহকর্মীই। তাঁরা এ দিন প্রাণোচ্ছল সহকর্মীর মৃত্যুর খবরে হতবাক হয়ে যান। যে বিভাগে পিন্টু কর্মরত ছিলেন, সেটিসরাসরি সেনাবাহিনীর আওতায় বলে জানান কারখানার আধিকারিকেরা। ওই বিভাগের এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘‘আমরা বিকেলে জানতে পেরেছি, উনি অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্পে গিয়ে অসুস্থ হয়েমারা গিয়েছেন। কিন্তু কোনও ভাবেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’’
সন্ধ্যা পর্যন্ত পিন্টুর বেলঘরিয়ার বাড়িতে তাঁর পরিবারেরপ্রবীণদের কাছে এই মৃত্যুর খবর গোপন রেখেছেন পরিজনেরা। বিপ্লব বলেন, ‘‘পাহাড়ে চড়া পিন্টুর নেশা ছিল। সেই পাহাড়ের কোলেই ও চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)