Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খোলা দরজার সামনে রক্তের স্রোত

ভোর সবে ৬টা। ফুল কুড়োতে বেরিয়েছিলেন ঝর্না মুখোপাধ্যায়। হঠাৎ চোখ গেল, প্রতিবেশীর বাড়ির দিকে। দেখলেন, দরজা হাট করে খোলা। আর সেই দরজা দিয়েই বেরিয়ে আসছে রক্তের স্রোত।

এই ঘরেই খুন হয়েছেন খুকু। উৎসুক জনতার উঁকিঝুঁকি সেখানেই। ছবি: নির্মল বসু।

এই ঘরেই খুন হয়েছেন খুকু। উৎসুক জনতার উঁকিঝুঁকি সেখানেই। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

ভোর সবে ৬টা। ফুল কুড়োতে বেরিয়েছিলেন ঝর্না মুখোপাধ্যায়। হঠাৎ চোখ গেল, প্রতিবেশীর বাড়ির দিকে। দেখলেন, দরজা হাট করে খোলা। আর সেই দরজা দিয়েই বেরিয়ে আসছে রক্তের স্রোত।

ঝর্নাদেবীর চিৎকারে আশেপাশের বাড়ির লোকেরা বেরিয়ে আসেন। দেখা যায়, গৃহকর্ত্রীর দেহ মাটিতে পড়ে। ঘরের আলমারি হাট করে খোলা। ঘর ভেসে যাচ্ছে রক্তে।

বসিরহাটের মাদ্রাসা মোড়ের এই ঘটনায় নিহতের নাম জয়শ্রী মুখোপাধ্যায় ওরফে খুকু (৫৭)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গলায় প্লাস্টিকের দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বঁটির বাঁট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই ঘটনায় পুলিশ এলে প্রথমে জনতা বিক্ষোভ দেখায়। দেহ তুলতে বাধা দেয়। তাঁদের দাবি, থানার এত কাছে থাকতেন খুকুদেবী। অথচ, রাতে খুন হয়ে গেলেন। পুলিশ কিচ্ছুটি জানতে পারল না! আগে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হলে তবেই দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো যাবে বলে গোঁ ধরে বসে উত্তেজিত জনতা। এসডিপিও এবং আইসি র‌্যাফ নিয়ে এসে জনতাকে বুঝিয়ে দেহ উদ্ধার করে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইটিন্ডা রাস্তার পাশে একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন খুকুদেবী। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। ভাই-বোনেরা আগেই মারা গিয়েছেন। বাড়িতে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে সময় কাটাতেন খুকু। বছর আটেক আগে বাদুড়িয়ার বাসিন্দা রামদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে কেনা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না। তাই বাপের বাড়িতেই থাকতেন খুকু। প্রতিবেশীরা জানালেন, মাঝে মধ্যে বাদুড়িয়া থেকে স্বামী আসতেন। তবে বড় একটা থাকতেন না এই বাড়িতে।

ওই পাড়াতেই খুকুদেবীর জ্যাঠাতুতো ভাই ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় একজনকে দিদির বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি কে, আমরা চিনি না। এক পাড়ায় থাকলেও খুব একটা যাতায়াত ছিল না দিদির বাড়িতে। তবে উনি খুবই নির্বিবাদী, ভাল মানুষ ছিল।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুকুদেবী প্রচুর সম্পত্তির মালিক। ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিসেও প্রচুর টাকা রয়েছে। বড় রাস্তার ধারে দোতলা বাড়ি, জমি ছাড়াও কয়েকটি দোকান ঘরের মালিক ছিলেন তিনি। সম্পত্তির কারণেই এই খুন কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনা কেউ একা ঘটিয়েছে, না একাধিক লোক জড়িত, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই মহিলা নিজের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করা শুরু করেছিলেন। তা নিয়ে কারও সঙ্গে বিবাদ ছিল কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) গৌরব লাল তদন্তে আসেন। মহিলার স্বামীকে খবর দেওয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি আসেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফোনেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

বছরখানেক আগে ওই এলাকা থেকে একটু দূরের এক বাড়িতে এক শিক্ষিকাকে সম্পত্তির লোভে এ ভাবেই খুন করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ দিন খুকুদেবীর বাড়ি ঘুরে দেখার পরে পুলিশ জানিয়েছে, যে বা যারা এই কাজ করেছে, তারা খুকুদেবীর পরিচিত বলেই মনে হচ্ছে। সে জন্য তিনি অপরাধীকে দরজাও খুলে দিয়েছিলেন। দরজা ভেঙে ঢোকেনি আততায়ী। ঘরে টিভি চলছিল। আলমারি খোলা থাকলেও ভিতরে টাকা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে বলেই মনে করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood woman death crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE