Advertisement
E-Paper

মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় দিশাহারা মা

মেয়ের বাবা ভ্যান চালান। মা ছোটখাট কাজ করেন। টানাটানির সংসার। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ছিল সব স্বপ্ন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। সাধ ছিল, মেয়েটা যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। এখন সেই মেয়েরই ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে তাঁরা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ভাঙাচোরা বাঁশের বেড়ার এক কামরার ঘর। মাথার উপরে ছাউনি বলতে পলিথিন। বৃষ্টি হলে ঘর জলে ভেসে যায়।

দক্ষিণ হাবরার এমনই এক ভাড়া বাড়িতে থাকে দ্বাদশ শ্রেণির কিশোরী। এক যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে যাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের এ হেন অতি সক্রিয় ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে নানা মহলে।

মেয়ের বাবা ভ্যান চালান। মা ছোটখাট কাজ করেন। টানাটানির সংসার। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ছিল সব স্বপ্ন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। সাধ ছিল, মেয়েটা যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। এখন সেই মেয়েরই ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে তাঁরা।

আদালতের নির্দেশে লিলুয়া হোমে পাঠানো হয়েছে মেয়েটিকে। আঠারো বছর হতে কয়েক দিন বাকি তার। পুলিশ অবশ্য আধার কার্ডে লেখা বয়সের ভিত্তিতে বারাসত আদালতেই তুলেছিল তাকে। পরে বিচারক মেয়েটির সঠিক বয়সের প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বুধবার লিলুয়ায় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাবা-মা। দেখা মেলেনি। কী ভাবে মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে, তা-ও ভেবে কুলকিনারা করতে পারছেন না তাঁরা।

সুজয় মণ্ডলের সঙ্গে মেয়ের আলাপ-পরিচয় থাকলেও তাদের মধ্যে যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তা জানতেন না বলে দাবি ওই কিশোরীর মায়ের। মেয়েকে তাঁরা মোবাইল কিনে দেননি বলেও জানিয়েছেন। মেয়ের মায়ের অনুমান, বন্ধুরাই আর্থিক অবস্থা দেখে মোবাইল কিনে দিয়েছিল। ওই মোবাইলেই মৃত্যুর আগে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সুজয়। কথা বলতে বলতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

মেয়েটির মা বলেন, ‘‘আমরা একা। পাশে কেউ নেই। কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। মেয়ের ভবিষ্যৎটা বোধহয় নষ্টই হয়ে গেল।’’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তবে প্রতিবেশীরা কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন। স্থানীয় বাসিন্দা পুষ্পিতা নন্দী বলেন, ‘‘ছেলেটির মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু মেয়েটিকে সে জন্য গ্রেফতার করা উচিত নয়।’’ আরও কয়েকজন প্রতিবেশী মনে করেন, এমন ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা যায় না বলে আদালতের নির্দেশ আছে। তাই এ ব্যাপারে পুলিশের তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা উচিত হয়নি।

পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন সেভ ডেমোক্র্যাসির রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীও। তিনি জানান, দিন কয়েকের মধ্যে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। প্রয়োজনে পরিবারটিকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

কিন্তু ছেলের বাড়ি তাঁদের যুক্তিতে অনড়। সুজয়ের দাদা বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘প্রেমিকাকে অসম্ভব ভালবাসত ভাই। কিন্তু মেয়েটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিল। ভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। ওকে মরতে বলেছিল। ওই মেয়ের জন্যই ভাইয়ের এত বড় সর্বনাশ ঘটে গেল। আমরা কঠোর শাস্তি চাই।’’ কিন্তু সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা তো অন্যায় বা বেআইনি নয়। তা হলে কেন এ জন্য মেয়েটিকে শাস্তি দেওয়া হবে? এ প্রশ্নের অবশ্য নির্দিষ্ট জবাব নেই ছেলের বাড়ির কাছে।

অন্য প্রশ্ন তুলছেন মেয়েটির মা। বলছেন, ‘‘সত্যিই যদি আমার মেয়েকে ও ভালবেসে থাকত, তা হলে কি এ ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে যেতে পারত?’’

Girl Mother Suicide Love Relation Love Habra হাবরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy