E-Paper

বাবা-মায়ের স্মৃতি রক্ষায় সন্তানদের উদ্যোগ

শুক্রবার, কমলাদেবীর মৃত্যুদিবসে তাঁর দুই ছেলে শ্যামল-অমল মায়ের স্মৃতিতে এলাকার ১৬ জন দুঃস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিনামূল্যে ছানির অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:০০
Brothers of a family helped some people in many ways in order to tribute their deceased parents

ছানির অস্ত্রোপচারের পরে উপকৃত মানুষেরা, টাকিতে। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

কথায় বলে, বাবা-মায়ের ঋণ কখনও পরিশোধ করা যায় না। শারীরিক ভাবে চিরকাল তাঁদের কাছে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁদের স্মৃতিতে জনকল্যাণে কোনও উদ্যোগ জনমানসে থেকে যায় আজীবন। এমনই উদ্যোগ দেখা গেল টাকির দুই ভাই শ্যামল ও অমল দাস এবং রায়দিঘির বাসিন্দা নিখিলকুমার সামন্তের ক্ষেত্রে।

টাকির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কমলা দাস (৮০) ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। জীবনের শেষ দিনগুলিতে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। শুক্রবার, কমলাদেবীর মৃত্যুদিবসে তাঁর দুই ছেলে শ্যামল-অমল মায়ের স্মৃতিতে এলাকার ১৬ জন দুঃস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিনামূল্যে ছানির অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন। শ্যামল জানান, কয়েক দিন ধরে টাকি-হাসনাবাদ এলাকায় বিনামূল্যে ছানির অস্ত্রোপচারের প্রচার চালিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। টাকির থুবায় তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। তার ভিত্তিতে ১৬ জনকে ছানি অপারেশনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। ১ সেপ্টেম্বর টাকির একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে তাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে।

এঁদের মধ্যে আছেন ছেষট্টি বছরের কীর্তন শিল্পী সঞ্জয় দাস। তিনি বলেন, “একটা চোখ নষ্ট হয়েছে বহু বছর আগে। অন্য চোখে বছর দু’য়েক ধরে ভাল দেখি না। অপারেশন করানোর সামর্থ্য ছিল না। এখন ওঁদের সাহায্যে ভাল দেখতে পাচ্ছি।”

গাছের চারা বিলি রায়দিঘিতে।

গাছের চারা বিলি রায়দিঘিতে। ছবি: দিলীপ নস্কর  

অমল বলেন, “মা শেষ বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। সে কথা মনে রেখে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে দুঃস্থ বয়স্কদের ছানি অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। আগামী বছর ফের এমনই প্রয়াস করব।মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা টাকির একটি সংগঠন আমাদের এ কাজে সাহায্য করেছে।”

গাছের প্রাণের মধ্যে বাবার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে মেহগনি চারা বিলি করলেন ছেলে। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের দিঘিরপাড় বকুলতলা পঞ্চায়েতে দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা নিখিলকুমার সামন্তের বাবা অমূল্যচরণ যখন মারা যান, তখন ছেলের বয়স বছর দশেক। ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অমূল্যচরণবাবুর মৃত্যুর পরে দাদাদের কাছে বড় হয়েছেন নিখিল। এখন তিনি বকুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

প্রতি দিন স্কুলে যাওয়ার আগে বাবার পায়ের আলতা মাখানো ছাপে প্রণাম করে বেরোন বাড়ি থেকে। মনীষীদের জন্ম-মৃত্যুর দিন স্কুলে উদ্‌যাপন করতে শেখান ছাত্রছাত্রীদের। প্রয়াত পিতার স্মৃতিও ধরে রাখতে চেয়েছেন নিখিল। স্থানীয় নার্সারি থেকে ১০০টি মেহগনি গাছের চারা কিনে তিনি বিলি করেন গ্রামবাসীদের মধ্যে। গাছের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন। নদী-নালা ঘেরা রায়দিঘির বহু গাছ ইয়াস-আমপানে ধ্বংস হয়েছে। এ
দিকে, নতুন করে গাছ সে ভাবে লাগানো হয় না। কিছু গাছ লাগানো হলেও পরিচর্যার অভাবে তা নষ্ট হয়ে যায়।

নিখিল বলেন, “বাবার চলে যাওয়ার দিনটি আমার কাছে আজও বেদনার। তাই ওঁর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে গাছগুলিকে বড় করব। সরকারের তরফে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে মেহগনি গাছ উপহার দেওয়া হয়। মেয়েটির ভবিষ্যতে ওই গাছই কাজে লাগে। আমিও আমার বাবার স্মৃতিতে মেহগনি গাছ দিলাম। গাছ বড় হবে, পাখি বাসা বাঁধবে। তাদের কলতানে আমাদের ঘুম ভাঙবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Eye Operation Saplings

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy