Advertisement
E-Paper

মৃত্যু গুনিনের কেরামতিতেই

বাড়ি গিয়ে অবস্থার উন্নতি হয়নি বছর পঞ্চান্নর মদন পাত্রর। বরং ক্রমশ নেতিয়ে পড়তে থাকেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মাঝবয়সী ব্যক্তি। থামছিল না ওঝার তুকতাক, ঝাড়ফুঁক। এক সময়ে ওঝা জানিয়ে দেয়, রোগী সেরে উঠেছে। নেমে গিয়েছে সাপের বিষ।

কিন্তু বাড়ি গিয়ে অবস্থার উন্নতি হয়নি বছর পঞ্চান্নর মদন পাত্রর। বরং ক্রমশ নেতিয়ে পড়তে থাকেন। তাঁকে নিয়ে বাড়ির লোক ছোটেন নতুন আর এক গুনিনের কাছে। ‘বিষ ঝাড়াতে’ সেখানেও ঝাড়ফুঁক চলে দীর্ঘক্ষণ।

পরিস্থিতির যখন কোনও উন্নতিই হচ্ছে না, তখন বাড়ির লোকজনের টনক নড়ে। মদনকে নিয়ে তাঁরা যান হাসপাতালে। ততক্ষণে অবশ্য কেটে গিয়েছে ১০-১২ ঘণ্টা। হাসপাতালে গেলে আশার কথা শোনাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। পরে আর এক হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। দেহে আর প্রাণ নেই মদনের। শহর কলকাতা থেকে মেরেকেটে ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূরে দেগঙ্গা ২ পঞ্চায়েতের চাতরা গ্রামের এই ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মানুষের কুসংস্কার এখনও কোন পর্যায়ে আছে। হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে বাড়ির বারান্দায় মশারি টাঙিয়ে শুয়েছিলেন মদন। ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে সাপে কামড়ায়। গ্রামের পাঁচজন পরামর্শ দিয়েছিলেন, উত্তর ভাসিলা গ্রামে এক ওঝা আছে। সাপের বিষ ঝাড়ায় তার নাকি ভারী নামডাক। বাড়ির লোকজন মদনকে নিয়ে ছোটেন সেখানেই। যন্ত্রণায় তখন কাতরাচ্ছেন ওই ব্যক্তি। ওঝা অবশ্য জানায়, এ রোগীকে ঠিক করা তার কাছে কোনও ব্যাপার নয়। শুরু হয় কেরামতি।

কিন্তু বাড়িতে এসে খানিকক্ষণ পর থেকে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন মদন। এ বার আগের সেই ওঝাকে গালমন্দ করতে করতে পাশের দুগাছিয়া গ্রামে অন্য এক গুনিনের কাছে ছোটেন সকলে। সেখানে আর এক দফা ঝাড়ফুঁক চলে। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেয় সেই গুনিন। এ ভাবে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও মদন সুস্থ হয়ে না ওঠায় হুঁশ ফেরে সকলের। মদনকে স্থানীয় বিশ্বনাথপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। মদনের বাড়ি থেকে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। চিকিৎসকেরা ভরসা দিতে পারেননি। এ বার মদনকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসাত জেলা হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় রোগীর। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পুলিশ দুই ওঝা-গুনিনের খোঁজ করছে।

ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মী নারায়ণ রাহা বলেন, ‘‘আমরা বার বার প্রচার করি। মানুষকে সচেতন হতে বলি। তারপরেও স্রেফ কুসংস্কারের বশে মানুষ এমমন হঠকারী পদক্ষেপ করেন। এ নিয়ে আরও প্রচার চালানো জরুরি। সরকারি স্তরেও মানুষকে সচেতন করতে আরও বেশি উদ্যোগ করা দরকার।’’ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘ওই গ্রামের মানুষকে আমরা সচেতন করতে প্রচারে যাব।’’

Death Superstition Canning Snake Bite
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy