Advertisement
E-Paper

প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত আম

কেন কিনেছিলেন কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম? অমলবাবুর কথায়, ‘‘শাশুড়ি গাছপাকা আম খেতে চেয়েছিলেন। এখন কিনলে দাম একটু কম থাকবে মনে করে আগেভাগে কিনে রাখতে চেয়েছিলাম।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০৩:১১
বিষাক্ত: কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে আম। নিজস্ব চিত্র

বিষাক্ত: কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে আম। নিজস্ব চিত্র

জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুরবাড়িতে যাবেন বলে আগে ভাগে বাড়িতে আম কিনে রাখবেন বলে বাজারে গিয়েছিলেন বনগাঁর বাসিন্দা অমল রায় (নাম পরিবর্তিত)। আম কিনে বাড়ি এসে পরিচিতদের কাছে জানতে পারলেন আমগুলো সব কার্বাইড দিয়ে পাকানো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি দোকানে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে এলেন আম।

কেন কিনেছিলেন কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম? অমলবাবুর কথায়, ‘‘শাশুড়ি গাছপাকা আম খেতে চেয়েছিলেন। এখন কিনলে দাম একটু কম থাকবে মনে করে আগেভাগে কিনে রাখতে চেয়েছিলাম। আমাদের পক্ষে তো কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়! দোকানি বলেছিল, আমগুলো গাছপাকা। তাই কিনেছিলাম।’’

শুধু অমলবাবুই নন, রোজই বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম গাছপাকা ভেবে কিনছেন। আর তা খেয়ে শরীরে ঢুকছে বিষ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রায় সব বাজারেই এখন প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম। অভিযোগ, আম বিক্রেতারা জেনে বুঝে কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বিক্রি করছেন। প্রকাশ্যে কার্বাউড দেওয়া আম, কলা বিক্রি হলেও প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই।

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল খেলে পেটের রোগ, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এমনকী ক্যা‌নসার পর্যন্ত হতে পারে।’’ জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক হৃষিকেশ খাঁড়া বলেন, ‘‘কার্বাউড দেওয়া আম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওতে ক্ষতিকর আর্সেনিক ও ফসফরাস থাকে। ফলে শরীরের ক্ষতি হয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারে কোনও নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো তাদের নেই। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অতীতে খাবারের ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল। কার্বাইড দেওয়া আম বিক্রির অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’’

বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ, গোপালনগর, গাইঘাটা, বাগদা ইত্যাদি এলাকার বাজারগুলো গিয়ে দেখা গেল, সর্বত্রই কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বিক্রি হচ্ছে। দাম মাপ অনুয়ায়ী কেজি প্রতি ২৩ থেকে ৪০ টাকা। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এই সব বাজারে মূলত, হিমসাগর, গোপালখাস, পেয়ারাফুলি আম্রপালি ইত্যাদি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে। এই সব আমের বেশিরভাগই ক্ষতিকর কার্বাইড দিয়ে পাকানো। চিকিৎসেকরা জানাচ্ছেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে কাঁচা আম পাকিয়ে বাজারে আনা হয়। কার্বাইড বাতাস বা জলের সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। যা ফলে প্রয়োগ করলে ইথালন নামে বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়। এই বিষাক্ত রাসায়নিকই ফল পাকাতে সাহায্য করে।

ক্ষতিকর জেনেও কারবারিরা কেন আম, কলা, পেঁপেতে কার্বাইড মেশান? বিক্রেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কারবারিরা একসঙ্গে সব আম পেড়ে ফেলেন। তারপর তা ঝুড়ির মধ্যে রেখে কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাজারে নিয়ে আসেন। গাছে আম একসঙ্গে পাকে না। তাছাড়া বেশিদিন আম গাছে রেখে দিলে ক্ষতির সম্ভবনা থাকে। তাই ফলে লাভ কমে যায়। মুনাফা বাড়াতেই আমে কার্বাইড দিতে হয় বলে ওই বিক্রেতাদের বক্তব্য।

কীভাবে চিনবেন কার্বাইড দেওয়া আম? আম ব্যবসায়ীরা জানান, কার্বাইড দেওয়া আমের ত্বক সাধারণভাবে মোলায়েম ও দাগহীন হয়ে থাকে। আম খেলে তার প্রকৃত স্বাদ বোঝা যায় না। এই আমের বোঁটা দিয়ে আঠাও বের হয় না।

গোবরডাঙার খাটুরা এলাকায় বছরের এই সময় আমের হাট বসে। সেখানে গাছপাকা ও কার্বাইড দেওয়া— দু’ধরনের আমই বিক্রি হয়। এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘‘আমাদের জেলাতে মূলত গোবরডাঙা ও দত্তপুকুরে আম হয়। কারবারিরা আম-সহ গাছ কিনে নেন। তারপর কাঁচা আম কার্বাইডে পাকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করেন। এতে মুনাফা অনেকটাই বেশি হয়।’’

Mango calcium carbide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy