E-Paper

নজরে নিয়োগ দুর্নীতি, সিবিআই টানা তল্লাশি চালাল টাকি, বাদুড়িয়ায়

টাকি পুরসভায় বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ সিবিআইয়ের ৫ জন অফিসার আসেন। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিন জওয়ান ছিলেন।

পুরসভার ভিতরে দুই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। নিজস্ব চিত্র

পুরসভার ভিতরে দুই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৮:৩৬
Share
Save

বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া ও টাকি— নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে দুই পুরসভায় বুধবার এক যোগে হানা দিল সিবিআই। বাদুড়িয়া থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ রওনা দিলেও টাকিতে সিবিআই অফিসারেরা ছিলেন রাত পর্যন্ত।

টাকি পুরসভায় বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ সিবিআইয়ের ৫ জন অফিসার আসেন। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিন জওয়ান ছিলেন। চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের ঘরে যান সিবিআই অফিসারেরা। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, নিয়োগের বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয় পুরপ্রধানকে। পরে নিয়োগ-সংক্রান্ত নথি দেখার জন্য পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগেও যান সিবিআই অফিসারেরা। ওই ঘরে যে সব কর্মী-অফিসারেরা ছিলেন, তাঁদের বাইরে যেতে বারণ করা হয়। রাত পর্যন্ত চেয়ারম্যানকেও বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরো সময় নিজের চেম্বারেই ছিলেন তিনি। বাইরে দু’জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানকে মোতায়েন রাখা হয়েছিল।

২০১৭ সালে পুরসভায় যে নিয়োগ হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত ফাইল একে একে বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুরসভার এক কর্মী জানান, ফাইলগুলিতে যে কাগজপত্র রয়েছে, তা পুরকর্মীদের দিয়ে নাম্বারিং করিয়ে অফিসের এক অফিসারকে দিয়ে সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কম্পিউটার, ল্যাপটপও খতিয়ে দেখেন সিবিআই অফিসারেরা।

দফতরের বিভিন্ন অফিসার, অফিসের বর্তমান হেডক্লার্ক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুপুরের খাবার আনানো হয় বাইরে থেকে। কিছু কর্মী সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে অফিস থেকে বেরোন। তাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি। অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মী, অফিসারদের রাতেও পুরসভায় খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

টাকি পুরসভা দীর্ঘ দিন বামেদের দখলে ছিল। ২০১০ সাল থেকে টানা তৃণমূলের দখলে। সোমনাথ ২০১০ সাল থেকে চেয়ারম্যান। পুরসভার দাবি, ২০০২ সালে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। সেই প্যানেলের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে নিয়োগ হয়। ওটাই এখনও পর্যন্ত শেষ নিয়োগ। প্রায় ১৬ জনের নিয়োগ হয়েছিল সে সময়ে। তাঁদের মধ্যে টাকি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ৭-৮ জন। বাকি হাবড়া, বনগাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকার। গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ করা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ-সহ আরও কিছু বিভাগে।

অয়ন শীলের সংস্থার মাধ্যমে পরবর্তী নিয়োগ পরীক্ষা হয় ২০১৮ সালে। ৪০ জনের তালিকা তৈরি হয়। তাঁদের চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর সেই প্যানেলে বাতিল করা হয় বলে জানাচ্ছে পুরসভার একটি সূত্র। এই সমস্ত নথিই খতিয়ে দেখে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআইয়ের একটি সূত্রের খবর।

চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। পুরসভার পরিষদয়ী নেতা, তৃণমূলে সুনীল সর্দার বলেন, "আমরা চাই, নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও বেনিয়ম হয়ে থাকলে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। দোষী সাজা পাক। কিন্তু তদন্তের নামে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।"

প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান, বাম নেতা রঞ্জন মণ্ডল বলেন, "আমাদের আমলে ২০০২ সালে চাকরির পরীক্ষা কিছু হয়নি। যে নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা তৃণমূলের আমলেই সবটা হয়েছে। আমরা দেখেছি, অনেক যোগ্য ব্যক্তি কাজ পাননি। ওই নিয়োগ নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। তদন্ত হওয়া দরকার।"

বাদুড়িয়া পুরসভায় সকাল ১১টা নাগাদ আসে সিবিআই। বেশ কিছু নিয়োগ-সংক্রান্ত নথি বাজেয়াপ্ত করে বলে জানাচ্ছে পুরসভার একটি সূত্র। তবে পুরসভায় ছিলেন না চেয়ারম্যান দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। ২০১০ সাল থেকে এই পুরসভা তৃণমূলের দখলে। দীপঙ্কর পরে বলেন, "নিয়োগ নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। পুরনো কোনও নিয়োগের কথা আমি বলতে পারব না। সিবিআই এসেছিল বলে শুনেছি। পুরসভার অফিসারেরা যা জানানোর জানিয়েছেন।"

বাদুড়িয়ার বিজেপি নেতা বিশ্বজিৎ পাল বলেন, "সিবিআই যখন এসেছে, তার মানে নিশ্চয়ই দুর্নীতি আছে বলেই এসেছে। এই পুরসভায় ২০১৬ সালের পরে ২০ জনেরও বেশি বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে।" বিশ্বজিতের অভিযোগ, ‘‘চাকরি পেয়েছিল তৃণমূল নেতাদের বাড়ির লোক এবং ঘনিষ্ঠেরা। টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে মারাত্মক দুর্নীতি হয়েছে এই পুরসভায়। সে সব এ বার সামনে আসবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CBI Raid taki baduria

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।