Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ডিজিট্যাল আধার কার্ড’, প্রতারণার নতুন ফিকির হাবরায়

‘ডিজিট্যাল আধার কার্ড’ করিয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে মাথা-পিছু ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে হাবরা থানার কুমড়া, বেড়গুম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকার। অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরে একটি চক্র এ বিষয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

‘ডিজিট্যাল আধার কার্ড’ করিয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে মাথা-পিছু ৪০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে হাবরা থানার কুমড়া, বেড়গুম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকার। অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরে একটি চক্র এ বিষয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, এই ধরনের কার্ডের কোনও সরকারি স্বীকৃতিই নেই।

রবিবার হাবরা থানার পুলিশ ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বেড়গুম এলাকা থেকে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম দিলীপ চক্রবর্তী ওরফে প্রসাদ, কমল দে, এবং গোবিন্দ মজুমদার।

জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডিজিট্যাল আধার কার্ড বানিয়ে দেওয়া বা তাদের দিয়ে ফর্ম পূরণ করানোর অভিযোগে তিনজনে ধরা হয়েছে। ওই ডিজিট্যাল আধার কার্ডের সরকারি অনুমোদন নেই। বিষয়টি জেলাশাসককেও জানানো হয়েছে।’’ জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘ডিজিট্যাল আধার কার্ডের বিষয়ে আমাদের দিক থেকে কোনও অনুমোদন নেই।’’

বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই ওই এলাকার লোকজনকে এ ভাবে ঠকানো শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন স্থানীয় টুনাঘাটা এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সেনসাস) জেলাপুলিশ সুপারকে বিষয়টি দেখার জন্য চিঠিও দিয়েছেন। হাবরা ১ বিডিও সজল দাস বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে এ রকমের অভিযোগ পেয়েছিলাম। বেআইনি ওই কাজ আমরা বন্ধও করে দিয়েছিলাম।’’

ডিজিট্যাল আধার কার্ডের সঙ্গে তথ্যগত কোনও পার্থক্য নেই আসল আধার কার্ডের। শুধু ডিজিট্যাল কার্ডগুলি প্যান কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো আকারের। শক্ত মোটা কাগজে ছাপা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চক্রের সদস্যেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছে, নতুন করে ডিজিট্যাল আধার কার্ড করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে নানা কাজে তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। গ্রামের লোকজনকে আরও বোঝানো হচ্ছে, ডিজিট্যাল আধার কার্ডটিই সর্বত্র গ্রহণযোগ্য হবে। তা ছাড়া, নতুন ডিজিট্যাল কার্ড করতে গ্রাহককে কোনও ঝক্কির মধ্যে পড়তে হবে না। কেবল তাদের কাছে থাকা আধার কার্ডে থাকা নম্বরটি দিলেই হবে। সঙ্গে ৪০ টাকা! ওই চক্রের সদস্যেরা নিজেদের পঞ্চায়েতের লোক বলেও দাবি করছে বলে জানা গিয়েছে। প্রকল্পটিও পঞ্চায়েতের বলে ভুল বোঝানো হচ্ছে।

কুমড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রীতা দেবনাথ জানিয়েছেন, যারা পঞ্চায়েতের কথা বলছেন, তাঁরা মিথ্যে বলছেন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই ধরনের কোনও কাজ করানো হয়নি।

এলাকাটি হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমতির অধীন। সমিতির সহ সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘‘২০০৮ সাল নাগাদ আমাদের এলাকায় ওই ধরনের চক্রের খোঁজ পেয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কুমড়া ছাড়াও স্থানীয় বেড়গুম ১ ও বেড়গুম ২ পঞ্চায়েত এলাকাতেও ওই চক্রটি কাজ করছে বলে খবর পেয়েছি।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির কর্ণধার সঞ্জীব কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের পরেও কিছু দিন ওই চক্রটি মানুষের কাছ থেকে ডিজিট্যাল আধার কার্ড করে দিয়ে প্রতারণা করেছে। এখন অবশ্য বন্ধ আছে। ফের যে কোনও দিন শুরু হয়ে যেতে পারে।’’ সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘আসল আধার কার্ডের নম্বরটি নিয়ে ইন্টারনেট থেকে প্রিন্ট বের করে কালার ফটোকপি করে গ্রামবাসীদের দেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকার বিনিময়ে।’’ তাঁর দাবি, শুধু কুমড়া পঞ্চায়েত এলাকাতেই শ’য়ে শ’য়ে মানুষ এ ভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

ওই নম্বর ও টাকা নিয়ে যাওয়ার দিন দ’শেকের মধ্যেই বাড়ি পোঁছে যাচ্ছে ‘ডিজিট্যাল আধার কার্ড।’ তবে সকলেই যে টাকা দিয়ে কার্ড পেয়েছেন এমনটা নয়। অনেকে তাতেও প্রতারিত হয়েছেন। তবে যাঁরা কার্ড পেয়েছেন, তাঁদের তেমন কোনও অভিযোগ নেই। বরং অন্য কোনও সমস্যায় পড়তে পারেন ভেবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মুখই খুলতে চাইছেন না বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Aadhar Card Complaint filed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE