Advertisement
E-Paper

জলের কল বসানোয় চাপান-উতোর তৃণমূল-সিপিএমে, উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী

পানীয় জলের কল (ট্যাপ) কোথায় বসবে তা নিয়ে তৃণমূল ও সিপিএমের মতবিরোধ পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফলে, কয়েকমাস ধরে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কল বসানোর প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের গিলারছাট পঞ্চায়েত এলাকায়। সঙ্কটে পড়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের বক্তব্য, প্রতি বার গরমের সময়ে জলের সমস্যা বাড়ে। এ বার পুরোদস্তুর গরম পড়ার আগেই বাকি কল বসানোর কাজ শেষ করা হোক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৫১

পানীয় জলের কল (ট্যাপ) কোথায় বসবে তা নিয়ে তৃণমূল ও সিপিএমের মতবিরোধ পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফলে, কয়েকমাস ধরে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কল বসানোর প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের গিলারছাট পঞ্চায়েত এলাকায়। সঙ্কটে পড়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের বক্তব্য, প্রতি বার গরমের সময়ে জলের সমস্যা বাড়ে। এ বার পুরোদস্তুর গরম পড়ার আগেই বাকি কল বসানোর কাজ শেষ করা হোক।

২০১২-য় রাজ্য সরকারের তরফে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের ওই প্রকল্প নেওয়া হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিভাগীয় মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্প অনুযায়ী পাখিয়ালা, মুখার্জীরচক ও ভাণ্ডারিচকে তিনটি পাম্পহাউস গড়া, পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ গ্রামে ২৮ কিলোমিটার পাইপ ও ৩৭৫টি কল বসিয়ে প্রধান রাস্তা, গ্রামীণ রাস্তা ও আগ্রহীদের বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী গ্রামবাসীদের দান করা ৩৫ কাঠা জমিতে তিনটি পাম্পহাউস গড়ে প্রাথমিক ভাবে ১৬ কিলোমিটার পাইপ পাতা হয়। সেই লাইন বরাবর প্রায় ১৪০ মিটার অন্তর একটি করে ১২০টি কল বসানোর কথা।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের খবর, স্থির হয়, পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে ৫০টি কল বসানো হবে। যদি সেগুলিতে কোনও ত্রুটি ধরা পড়ে, তা হলে তা সারিয়ে বাকি কলগুলি বসানো হবে। দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, কলগুলি কোথায় বসানো হবে তা নির্ধারণ করে তালিকা পাঠায় সে সময়ের তৃণমূল পরিচালনাধীন পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে সিপিএম মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং এলাকার ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি দখল করে। গিলারছাট পঞ্চায়েত অবশ্য তৃণমূলের দখলে থেকে যায়। তাতেই পরিস্থিতি জটিল হয়। সিপিএম নিয়ন্ত্রনাধীন পঞ্চায়েত সমিতি নতুন করে তালিকা পাঠায়। সেই তালিকা অনুযায়ী গত অগস্ট মাস নাগাদ ঠিকাদার সংস্থা গিলারছাট পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ করতে গেলে বাধা দেয় তৃণমূল।

দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে কল বসানোর জায়গা বাছা নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও নানা ত্রুটির অভিযোগ তোলে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএ নেতা পীযূষ বৈরাগী বলেন, “এলাকাবাসীর লিখিত আবেদন বিবেচনা করেই আমরা তালিকা তৈরি করি। তাতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, ঠিকাদার সংস্থা, এমনকী, গ্রামবাসীদের কোনও আপত্তি ছিল না। শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে গায়ের জোরে কাজ বন্ধ করে দেয় তৃণমূল। দু’টি ট্যাপ বসানো হলেও তারা সেগুলি তুলে ফেলে দেয়।” সমস্যার নিরসনে আলোচনার প্রস্তাবেও তৃণমূল সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ পীযূষবাবুর। এমনকী, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁর ক্ষোভ। পীযূষবাবু ঘটনার জন্য অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পালান মিস্ত্রির দিকে। তাঁর অভিযোগ, “পাম্প হাউসগুলিতে যে ছ’জন কর্মী নিয়োগ হওয়ার কথা, সেখানে দলীয় কর্মীদের নিয়োগ করানোর জন্য পরোক্ষ কৌশল হিসেবে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন পালানবাবুরা।”

অভিযোগ মানেননি পালানবাবু। তাঁর বক্তব্য, “নিয়ম অনুযায়ী ও মানবিকতার খাতিরে তিনটি জমিদাতা পরিবারের তিন জনের কাজ পাওয়ার কথা পাম্পহাউসে। বাকি কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার। এখানে আমাদের ভূমিকা কোথায়?” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমাদের তালিকা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের অনুমোদন পেয়েছিল। বামেদের তালিকা অবৈধ। কারণ, কোনও স্তরেই তার অনুমোদন নেই। তা ছাড়া, পাইপলাইন যায়নি এমন জায়গাতেও কল বসবে বলে উল্লেখ রয়েছে ওই তালিকাতে। সে কারণে কাজ বন্ধ করাতেই হতো।” তবে দ্রুত কাজ শেষ করার স্বার্থে ওই তালিকা ফের জেলা সভাধিপতি, বিধায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েতের অনুমোদন নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

রাজনৈতিক এই চাপান-উতোরের মধ্যে কল বসানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। পাখিয়ালা গ্রামের সামিনা বিবি, মান্নারচক গ্রামের কাজল শিকারি, বকুলতলার মলিনা হালদারেরা জানাচ্ছেন, এলাকায় পানীয় জলের নলকূপ থাকলেও সেগুলি প্রায়ই বিকল হয় এবং গরমকালে জলস্তর নেমে গিয়ে অকেজো হয়ে যায়। তাঁদের বক্তব্য, “পানীয় জলের জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে জল মেলে। সে হয়রানি থেকে আমাদের বাঁচাতে গরম পড়ার আগে ট্যাপ বসানো শেষ করা হোক।”

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (রায়দিঘি মহকুমা বিভাগ) প্রসিত মণ্ডল অবশ্য সে আশ্বাস দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “ট্যাপ কোথায় বসানো হবে, সেই তালিকা নিয়ে সমস্যা এখন সমাধানের মুখে। তবে নতুন সমস্যা হল, ঠিকাদার সংস্থাটির মালিক সম্প্রতি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। বাকি কাজ করার জন্য নতুন সংস্থা নিয়োগ করতে সময় লাগবে।”

southbengal CPM TMC Trinamool municipal election water mathurapur summer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy