Advertisement
E-Paper

ট্রেন বন্ধ কেড়েছে উপার্জন, আতান্তরে দৃষ্টিহীন শিল্পীরা

ট্রেনে গান গেয়ে সংসার চালানো বহু মানুষ ইতিমধ্যে বেকার হয়ে গিয়েছেন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৬:৫৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কর্মহীন করে দিয়েছে ওঁদের।

বারাসত থেকে শিয়ালদহ, কিংবা ষন্ডালিয়া-হাসনাবাদ-বসিরহাট— ভিড় ট্রেনে ওঁরা কেউ কী-বোর্ড, কেউ ট্র্যাক বাজিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের গান শোনান। সকলেই শোনেন। তবে, মূল্য দেন কেউ কেউ। তাতেও যা রোজগার হয়, তাতে মোটামুটি ভাবে মাস চলে যায়। কিন্তু লোকাল ট্রেন বন্ধ হতেই কার্যত বেকার হয়ে গিয়েছেন সেই দৃষ্টিহীন শিল্পীরা। কারণ, দৃষ্টিহীন হওয়ার জন্য একমাত্র গান গাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না ওঁরা।

পাঁচ দিন হল, রাজ্য জুড়ে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা। পেট চালানোর জন্য রেলের যাত্রীদের উপরে নির্ভরশীল যাঁরা, সেই সব হকারদের অনেকেই ফের বিকল্প রুজির সন্ধান করতে শুরু করেছেন। কিন্তু যাঁরা চোখেই দেখতে পান না, তাঁরা কী করবেন?

বেশ রাগের সঙ্গে কথাগুলি বলছিলেন প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ সচেতন হলে এই পরিস্থিতি হয়তো ফিরে আসত না। কবে আবার ট্রেন চলবে, জানি না। চোখে দেখতে পাই না। অন্য কাজ করারও উপায় নেই।’’ বারাসতের কদম্বগাছির বাসিন্দা প্রদীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী তারামণিদেবী, দু’জনেই ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে গান করেন। এটাই তাঁদের পেশা। দু’জনেই দৃষ্টিহীন। প্রদীপবাবু জন্মান্ধ। আর অনেক কম বয়সে অসুস্থতার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তারামণিদেবী। স্বামীর কথার সূত্র ধরে তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষ আমাদের ভিক্ষুক বলে ভাবেন। কিন্তু আমরা শিল্পী। তাই বিনা পরিশ্রমে কারও কাছে হাত পাততেও সঙ্কোচ হয়।’’

প্রদীপবাবু কিংবা তারামণিদেবীর মতো ট্রেনে গান গেয়ে সংসার চালানো বহু মানুষ ইতিমধ্যে বেকার হয়ে গিয়েছেন। সেই দৃষ্টিহীন শিল্পীরা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন কদম্বগাছিতে। ‘পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগামী দৃষ্টিহীন সমিতি’ নামে ওই সংগঠনের সভাপতি কানাই সরকার জানান, ট্রেনে একসঙ্গে অনেক মানুষ দীর্ঘ সময় অনেকটা পথ সফর করেন। তার জন্য একটি কামরায় মানুষের জমায়েত থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকের সামনে গান গাইলে উপার্জনের একটা সুযোগ থাকে। সবাই হয়তো টাকা দেন না। কিছু মানুষ দেন। তাতে করেই মোটামুটি ভাবে মাস চলে যায়। কিন্তু ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আজ পাঁচ দিন হল বাড়িতে বসে।’’ শুধুই বারাসত নয়, দৃষ্টিহীন এই শিল্পীরা সর্বত্র একই সমস্যায় পড়েছেন বলে জানান কানাইবাবু। দিনভর এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেনে ঘুরে ঘুরে ওঁরা গান গেয়ে বেড়ান। দিনে গড় রোজগার ২০০-২৫০ টাকা। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকায় এই শিল্পীদের কেউ কেউ চেষ্টা করছেন শহরের রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে রোজগার করতে। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধা হচ্ছে না। তাঁরা জানান, নির্দিষ্ট সময়ের পরে বাজার-দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর, ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান শোনার মতো লোক পাওয়াও দুষ্কর। পাশাপাশি, সংক্রমণের আশঙ্কায় এই দৃষ্টিহীন শিল্পীরা সব জায়গায় যেতেও পারছেন না।

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy